ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

টিকা নিয়ে গুজব নিরসনে ১০টি জরুরি প্রশ্নের উত্তর

কামরুল আহসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২৩ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২০:০৫, ২৩ জানুয়ারি ২০২১
টিকা নিয়ে গুজব নিরসনে ১০টি জরুরি প্রশ্নের উত্তর

অবশেষে বহুল প্রতিক্ষিত করোনার টিকা বাংলাদেশে এসেছে। টিকাগুলো বাংলাদেশের জন্য ভারত সরকারের বন্ধুত্বের উপহার। যে-টিকার জন্য পৃথিবীর মানুষ উদগ্রীব, সে-টিকা নিয়ে এখন শুরু হয়েছে নানারকম বিতর্ক, ছড়ানো হচ্ছে গুজব। এমনও গুজব ছড়িয়েছে যে, করোনার টিকা নিলে লিঙ্গ পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে যায়! কানকথা আমাদের দেশে এমনিতেই একটু বেশি ছড়ায়। আর ভারত হয়ে কোনো কিছু এলে সেটা স্বাভাবিকভাবেই তিল থেকে তাল হয়।

এ কথা সত্য, কাঙ্ক্ষিত এই টিকা কেবল প্রাণ বাঁচানোর মন্ত্র নয়, এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বৈশ্বিক কূটনীতি, বিশাল অঙ্কের ব্যবসা। যে কোনো মহামারি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় যেমন মানুষের সর্বোচ্চ মানবিকতা প্রদর্শিত হয়, তেমনি সুযোগের সৎব্যবহার করার বাসনায় প্রকাশ ঘটে সর্বোচ্চ ইতরতারও। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ সাবধানে থাকতে চায়। কিন্তু যখন প্রশ্নটা জীবন-মরণের তখন গুটিয়ে থাকার কোনো উপায় নেই। যখন প্রাণ বাঁচানোর টিকা হাতের কাছে তখন অনেকে টিকা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। ভারতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও তা চলছে ঢিমেতালে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে অনেকে টিকা নিচ্ছেন না। অপপ্রচার ও সমালোচনা এড়াতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টিকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ভারতে যখন এই অবস্থা বাংলাদেশেও তার কিছু ছাপ পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে টিকা গ্রহণের কার্যকারীতা সম্পর্কে জনগণকে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছে। গত শুক্রবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ‘করোনা টিকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘... টিকা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য, সব মানুষের এটা নেওয়া উচিত।’

অন্যদিকে এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘আমি টিকা নেব, অবশ্যই নেব। প্রয়োজনে সবার আগে টিকা নেব। আমার বয়স হয়েছে। আমার টিকা দরকার।’

যে কোনো বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারে একমাত্র সঠিক জ্ঞান। আসুন ১০টি প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে জেনে নেই করোনার টিকা সম্পর্কে জরুরি কিছু তথ্য। 

১. টিকা কি লিঙ্গ বদলে দিতে পারে?

ক্যারি ম্যাডেই নামে একজন অস্টিওপ্যাথ এক ভিডিও বার্তায় ছড়িয়েছেন করোনার টিকা নিলে মানুষের ডিএনএ বদলে যাবে; এতে করে তার লিঙ্গ পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তিনি নির্দিষ্ট কোনো টিকাকে এর জন্য দায়ী করেননি, গড়পরতা সব টিকাকেই করেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন দলের প্রধান ড. অ্যান্ড্রু পোলার্ড বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ভ্যাকসিনের কাজ শরীরকে ভাইরাস চিনিয়ে দেওয়া এবং তার সঙ্গে লড়াই করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা জাগিয়ে তোলা। আমাদের ভ্যাকসিনে এমন কোনো উপাদান বা প্রযুক্তি নেই যা মানুষের ডিএনএ বদলে দিতে পারে বা তাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইন্টারফেসের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে।’

২. কীভাবে হচ্ছে টিকার বিকাশ?

এই মুহূর্তে ২৭৩টি ক্লিনিকাল প্রতিষ্ঠান করোনার টিকা নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত। এর মধ্যে ৬৯টি টিকা সফলতার দ্বারপ্রান্তে। ৪৩টি আছে প্রথম থেকে দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষায়, ২৬ টি আছে দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায়। বিভিন্ন দেশে কমপক্ষে ৬টি টিকা জনগণের মধ্যে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকার। এগুলো হলো: ফাইজার-বায়োএনটেক কোম্পানির তৈরি টোজিনামেরান, মডার্না কোম্পানির এমআরএনএ-১২৭৩, চীনা কোম্পানি সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের দুটি ভ্যাকসিন, রুশ কোম্পানি গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি একটি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি একটি ভ্যাকসিন। অনুমোদনপ্রাপ্ত সবগুলো টিকাই ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকরী বলে দাবি করা হচ্ছে।

৩. বাংলাদেশে কোন টিকা এসেছে?

বাংলাদেশে এসেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা আবিষ্কৃত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন, যা তৈরি করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। এই টিকা বাংলাদেশ সরকার কিনেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে। সরকারকে এ টিকা সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এ নিয়ে সেরাম, বেক্সিমো ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে গত ৫ নভেম্বর। টিকা শুধু আনলেই হবে না, টিকা প্রয়োগ সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। টিকা সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত সুরক্ষিত ওয়্যারহাউজ প্রয়োজন। টঙ্গীতে বেক্সিমকোর দুটো ওয়্যারহাউজ রয়েছে।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। শুরুতে ২৫ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়ার কথা হলেও এখন ৫০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর আট সপ্তাহ পর আসছে আরো ৫০ লাখ ডোজ, তাও পুরো দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভ্যাকসিন মৈত্রীর আওতায় ভারত সরকার বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতীম ৬ দেশকে টিকা উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশকেই দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ডোজ। এবার উপহার হলেও পরবর্তীতে সব টিকা কিনে নিতে হবে। বাংলাদেশে প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ৫ ডলার (৪২৫ টাকা)।

৪. টিকার দাম নিয়ে সমালোচনা কেন?

ইউরোপিয় ইউনিয়ন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের জন্য দাম দিচ্ছে ২.১৮ ডলার। আমেরিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন কিনতে যাচ্ছে ৪ ডলারে আর বাংলাদেশ সেই ভ্যাকসিন কিনতে যাচ্ছে ৫ ডলারে। এটাই সম্ভবত বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমালোচনা- কেন আমেরিকার চেয়ে বেশি মূল্যে বাংলাদেশ টিকা কিনছে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এ আলোচনা গড়িয়েছে গণমাধ্যম পর্যন্ত। অনেকেই মনে করছেন, ভারত বোধহয় বেশি দাম নিচ্ছে। আসলে আমেরিকা টিকা আবিষ্কারের পেছনে শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকাকেই তারা দিয়েছে ১৬৫ কোটি পাউন্ড। টিকা ব্যর্থ হলে দাতাদের সম্পূর্ণ বিনিয়োগ নষ্ট হতো। তাই ইউরোপিয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতা দেশগুলো তুলনামূলক কম দামেই টিকা পাবে। আরেকটি বিষয় বিবেচ্য, টিকা উৎপাদনকালীন ট্রায়াল যদি অন্য দেশে হয় তাহলেও দ্রুত এবং স্বল্পমূল্যে টিকা পাবার অগ্রাধিকার পায় কোনো দেশ। সফল টিকার কোনো একটি ট্রায়াল যদি বাংলাদেশে হতো তাহলে বাংলাদেশও ইউরোপিয় ইউনিয়নের মতো কম দামে এই টিকা পেত। কিন্তু বাংলাদেশ বিনিয়োগ কিংবা ট্রায়াল কোনো প্রকার ঝুঁকিই নেয়নি। তাই ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশ বেশি দামে টিকা কিনছে। সুতরাং যারা এ ধরনের কথা তুলছেন হয় তারা বিষয়টি জানেন না, অথবা তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ করছেন।

৫. টিকা গ্রহণের ফলে মৃত্য, কতোটা সত্য?

টিকা গ্রহণের পর নরওয়েতে ২৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে এমন একটি খবর মিডিয়াতে কয়েকদিন আলোচিত হয়েছে। চিকিৎসা সাময়িকী ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল’ গত ৮ জানুয়ারি জানিয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেক টিকা গ্রহণের পর নরওয়েতে যে ক’জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের সবারই বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। তারা অন্যসব মারাত্মক রোগে ভুগছিলেন। ২৩ জনের মধ্যে ১৩ জন টিকার স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অত্যধিক বয়সের কারণে তারা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চাপ সামাল দিতে পারেননি। এরপর থেকে এই টিকা বেশি বয়স্ক মানুষের ওপর প্রয়োগে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত এবং অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত নন এমন তরুণ বয়সী কারো এই টিকা গ্রহণের ফলে মৃত্যু ঘটেছে বলে জানা যায়নি।

এদিকে টিকা গ্রহণের ফলে ভারতেও একজন মারা গেছেন এবং অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে খবর ছড়িয়েছে। জানা গেছে ৪২ বছর বয়সী দীপক মায়ারী নামে যে-শ্রমিক টিকা গ্রহণের ফলে মারা গেছেন সেটি ছিল বায়োটেকের মানব শরীরে পরীক্ষাধীন ‘কোভ্যাক্সিন’। এটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত ও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ নয়। দীপক স্বেচ্ছায় সেটা নিতে রাজি হয়েছিলেন। সুতরাং ‘কোভিশিল্ড’ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে প্রচারণা চালাচ্ছে ভারত সরকার।

৬. টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসলেই কতটুকু?

করোনা টিকার ডোজ নিতে হবে দুটি। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ বা তিন সপ্তাহ পর নিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। প্রথম ডোজ বা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর কিছু স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরকম কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় প্রতিটি টিকার ক্ষেত্রেই হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলো হালকা মাথা ব্যথা বা শরীর ব্যথা, টিকা নেওয়ার স্থানে হালকা ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া, হালকা জ্বর এবং বমি বমি ভাব, শরীর হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, সন্ধিস্থলে ব্যথা। কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তাছাড়া টিকা গ্রহণের পর ৩০ মিনিটি টিকাস্থলে থাকতে হবে বলে জানানো হয়েছে।

৭. প্রথম ধাপে কাদের টিকা দেওয়া হবে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। যাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি, যেসব জনগোষ্ঠী থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা বেশি এবং আক্রান্ত হলে জটিলতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি এমন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানভিত্তিক তালিকা  তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সম্মুখসারির কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন।

এরপর ১৫টি জনগোষ্ঠীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রতিরক্ষাকাজে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধিরা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রথমে বয়ঃবৃদ্ধরা টিকাগ্রহণে অগ্রাধিকার পাবেন।

দ্বিতীয় ধাপে থাকবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছেন এমন ৬৫ বছর বয়স্ক ও তার উপরে যাদের বয়স তারা, শিক্ষাকর্মী, জনপরিবহনের কর্মীরা। তবে দেশের জনগোষ্ঠীর দুটি অংশ আপাতত এই টিকা কর্মসূচির বাইরে থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, ‘১৮ বছর বয়সের নিচে যারা তাদের উপর টিকার কোনো ট্রায়াল হয়নি। তাই তারা এই টিকা কর্মসূচির বাইরে থাকবে। দুই নম্বর হচ্ছে গর্ভবতী নারী, তাদেরও দেওয়া হবে না কারণ তাদের উপরেও ট্রায়াল হয়নি।

৮. টিকা প্রদানের বিভিন্ন ধাপ:
নিবন্ধন: জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে ব্যক্তি নিবন্ধন
ভ্যাকসিন কার্ড: ওয়েব পোর্টাল হতে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ
এসএমএস বার্তা প্রেরণ: ভ্যাকসিন প্রদানের তারিখ ও তথ্য প্রেরণ
প্রথম ডোজ: নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রদান
দ্বিতীয় ডোজ: নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রদান
ভ্যাকসিন সনদ: দুইটি ডোজ নেওয়ার পর পোর্টাল হতে সংগ্রহ 

৯. কেন আপনি টিকা নেবেন?

টিকা গ্রহণের আগ পর্যন্ত আপনি ঝুঁকির মধ্যে থেকে যাবেন। করোনা আক্রান্ত হলে আপনি ও আপনার পরিবার কিংবা আপোর সংস্পর্শে যারা আসবেন তারাও ঝুঁকির আওতায় থাকবেন। টিকা আপনাকে আপনার কাছের মানুষদের ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করবে। টিকা গ্রহণের পরেও আপনি করোনা-আক্রান্ত হতে পারেন। তবে, টিকা গ্রহণের ফলে আপনার শরীরের প্রতিরোধ শক্তি বেড়ে যাবে। ফলে আপনি তখন অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত।

১০. কতোদিন কার্যকরী থাকবে এ টিকা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন নেওয়া মানেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার গ্যারান্টি নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির সাবেক প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাজুল ইসলাম এ বারি বলছেন, ‘টিকার সুরক্ষা কি মানুষের শরীরে তিন মাস থাকবে, ছয় মাস থাকবে নাকি একবছর থাকবে সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত নয়। কারণ এটা অজানা। এর পরে বুস্টার ডোজ নিতে হবে কিনা, সেটাও অজানা। সুতরাং টিকা নিলেও মানুষকে আরো কিছুদিন সতর্ক থাকতেই হবে।’

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সমীর কুমার সাহা বলছেন, যে কোনো টিকা আসার আগে বেশ কয়েক বছর সময় নিয়ে এর কার্যকারীতাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখা হয়। এবার একটি নজীরবিহীন পরিস্থিতি। ফলে অনেক কিছু নিয়েই প্রশ্ন আছে।

শেষ কথা

শেখ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে মারা গেছেন ২২ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩৬ জন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মারা গেলেন ৮ হাজার জন। বিশ্বে মারা গেছেন ২০ লাখের অধিক মানুষ। নিকট অতীতে মানুষ এমন ভয়াবহ মহামারি দেখেনি। এখনো কার্যত বিশ্ব স্থবির। শোনা যাচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দার প্রতিধ্বনি। তার সঙ্গে টিকা বাণিজ্য নিয়ে এর মধ্যেই ক্ষমতাশালী দেশগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে ঠান্ডা যুদ্ধ। পৃথিবীর ১৯৪টি দেশের ৭০০ কোটির অধিক মানুষের জন্য ১৫০০ কোটিরও বেশি ডোজ প্রয়োজন। সুতরাং আগামী কয়েক বছর কোটি কোটি ডোজ টিকা বিক্রি হবে। রাশিয়া চেষ্টা করছে তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার। চীন চেষ্টা করছে আমেরিকাকে টেক্কা দেওয়ার। তারা এখন মনোযোগ দিচ্ছে ‘হেলথ সিল্ক রোড’ স্থাপনের। পাকিস্তান-মধ্যপ্রাচ্য হয়ে তাদের দৃষ্টি আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকা পর্যন্ত। আমেরিকাও বসে থাকবে না। অস্ত্রের বাণিজ্যের চেয়েও আগামী দিনের প্রধান বাণিজ্য হবে ‘টিকা-বাণিজ্য’। স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল, মধ্যম আয় এবং অধিক জনসংখ্যার দেশগুলোই এখানে প্রথম লক্ষ্য। বাংলাদেশ নানা দিক থেকেই এই টিকা-বাণিজ্যের শিকার হবে বলাবাহুল্য। বাংলাদেশের সঙ্গে এখন তাই চীন, রাশিয়া, ভারত, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, আমেরিকা নতুন বন্ধুত্ব স্থাপন করতে আগ্রহী। ইতোমধ্যে চীন, রাশিয়া তাদের তৈরিকৃত টিকা উপহার দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইউরোপ-আমেরিকার টিকা-বাজারও এক্ষেত্রে তৎপর, চীন-রাশিয়া যেন এদিকে ঢুকতে না পারে। এ যেন আরেক বিশ্বযুদ্ধের আলামত!
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়