ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ওয়ালটন ডে: উন্নত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

উদয় হাকিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:১৭, ২০ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৪:৩৬, ২১ মার্চ ২০২১
ওয়ালটন ডে: উন্নত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

ওয়ালটন। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট। দেশের সেরা ব্র্যান্ড, মানুষের হৃদয়ের ব্র্যান্ড, সুপারব্র্যান্ড, মার্কেট লিডার; বাংলাদেশি মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড। ওয়ালটন বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থানীয় বিনিয়োগ। দেশের প্রযুক্তি গবেষণার প্রাণকেন্দ্র। 

আজ ২০ মার্চ। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে সারাদেশে পালিত হচ্ছে ওয়ালটন ডে। প্রায় দুই যুগ আগে, ১৯৯৯ সালের মার্চে পথচলা শুরু করে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। অল্প সময়ের মধ্যেই ওয়ালটন আজ মহীরূহ। ওয়ালটন যেভাবে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে- এক কথায় অবিশ্বাস্য। 

এক দশক আগেও প্রযুক্তিপণ্যের চাহিদা পুরোটাই মেটানো হতো আমদানি দিয়ে। বছর দশেকের ব্যবধানে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্থানীয় প্রয়োজন মিটিয়ে হচ্ছে রপ্তানিও। হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যেতো দেশের বাইরে। আজ তা যাচ্ছে না, উল্টো আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। এ যেন এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রূপকল্প। এ যেন এক হিরন্ময় বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। 
ওয়ালটনের এই সাফল্য বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের জন্য একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের রোড ম্যাপ সামনে রেখে ওয়ালটনের মতো দেশের বেসরকারি খাতগুলো জেগে উঠলে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন আর অধরা নয়। বাস্তবতার নিরিখেই ওয়ালটন স্বপ্ন দেখাচ্ছে উন্নত বাংলাদেশের। 

রাজধানী ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গাজীপুরের চন্দ্রায় ৭৫০ একরেরও বেশি জায়গায় গড়ে উঠেছে ওয়ালটনের সুবিশাল সুদৃশ্য কারখানা। নিজস্ব কারখানায় বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, কম্প্রেসর, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকট্রিকাল অ্যাপ্ল্যায়েন্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস, হার্ডওয়্যার, এলিভেটর, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য। বর্তমানে পণ্য বৈচিত্র্যের দিকে জোর দিচ্ছে ওয়ালটন। সম্ভাব্য নানামুখী প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় একের পর এক প্রকৌশল পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে নিখাঁদ এই বাংলাদেশী ব্র্যান্ড। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে রপ্তানিও হচ্ছে। 

ওয়ালটন গ্রুপে রয়েছে বেশকিছু স্বনামধন্য সফল প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ওয়ালটন মাইক্রোটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ওয়ালটন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ওয়ালটন প্লাজা, ওয়ালটন শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক, মার্সেল এন্টারপ্রাইজ, নাসদাত ইউটিএস ল্যাব অন্যতম। 

ওয়ালটন এর যাত্রা শুরু ১৯৭৭ সালে। তরুণ ব্যবসায়ী, ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম এস এম নজরুল ইসলামের হাত ধরে এর পথচলা। সময় এবং ধরন বুঝে অনেকবার ব্যবসায়ের গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে। চেয়ারম্যানের প্রথম পুত্র এস এস নূরুল আলম রেজভি এবং দ্বিতীয় পুত্র এস এম শামসুল আলম ১৯৭৭ সালে পিতার ব্যবসায়ে যোগ দেন। ওই সময় রেজভি এ্যান্ড ব্রাদার্স প্রতিষ্ঠার পর ব্যবসায়ে পরিবর্তন আসে, নতুন যুগের সূচনা হয়। ১৯৯১ সালে তৃতীয় পুত্র এস এম আশরাফুল আলম জুয়েল এবং এর পরের বছর চতুর্থ পুত্র এস এম মাহবুবুল আলম খালিদ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। এর ফলে শাখা সম্প্রসারণ এবং সারা দেশে ব্যবসা নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হয়। মজবুত ভীতের উপর দাঁড়িয়ে যায় ব্যবসা। পঞ্চম পুত্র এস এম রেজাউল আলম শামীম যোগ দিলে ব্যবসা আরো বেগবান হয়। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজনেস সম্প্রসারিত হয়। মূলত ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা শুরু হয় ওই বছর থেকেই। ২০১২ সালে তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ালটনের অগ্রযাত্রায় যুক্ত হন এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি। তারই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে এ প্রজন্মেও অনেকেই ওয়ালটনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশেষ অবদান রাখছেন। এই স্বপ্নবান মেধাবীদের বুদ্ধিমত্তায় ওয়ালটন এখন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক উদ্যোগ। তাঁদের দৃষ্টি আরো দূরে- বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ড হওয়ার দিকে।  

১৯৯৭ সালে সাদা কালো টিভি উৎপাদনের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনিক্স পণ্য ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু হয়। যদিও ওয়ালটন ব্র্যান্ডের শুরু ১৯৯৯ সালে। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যায় ২০০৭ সালে। বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০০৮ সালে। ওই বছর থেকেই ফ্রিজ এবং মোটরসাইকেল বিক্রি শুরু হয়। ২০১০ সালে মোবাইল ফোন এবং ২০১১ সালে এয়ারকন্ডিশনার বিক্রি শুরু করে ওয়ালটন।

২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে শুরু হয় শেয়ার বাজারে ওয়ালটনের লেনদেন। বর্তমানে একক বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিনিয়োগের দিক দিয়ে শীর্ষে ওয়ালটন। যেখানেই ওয়ালটন হাত দিচ্ছে, সোনা ফলছে সেখানেই। আর তাতেই একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে ওয়ালটন। 

যদিও দেশের গ-ি ছাড়িয়ে ইতিমধ্যেই ওয়ালটন এখন একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড। ‘আমাদের পণ্য’ স্লোগানে ওয়ালটনই প্রথম ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ বলার সাহস দেখিয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে দেশের নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের হাতে উিচ্চমানসম্পন্ন প্রযুক্তি পণ্য তুলে দিচ্ছে তারা। অবদান রাখছে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে। সেইসঙ্গে মানবিক, আর্থ সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সৃষ্টি করেছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের। 

ব্যাপকভাবে করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করছে ওয়ালটন। দেশের প্রচলিত-অপ্রচলিত সব ধরনের খেলাধুলার উন্নয়নে সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক এখন ওয়ালটন। প্রতি বছর লাভের একটি অংশ সরকারের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে দেয়া হচ্ছে। কর্মীদের মধ্যে বন্টন করা হচ্ছে লভ্যাংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেও সামর্থ অনুযায়ী অবদান রাখছে ওয়ালটন। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বিধবা-বয়স্ক ভাতাসহ দুস্থ ও দরিদ্র মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা এমনকি আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডি থেকে করোনাকালে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে ওয়ালটন। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় দেশের প্রায় ৪০০টি ওয়ালটন প্লাজা এবং ১৭০০০ এর বেশি এক্সক্লুসিভ ডিষ্ট্রিবিউটর, ডিলার ও সাব-ডিলারের মাধ্যমে সারাদেশে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ‘আমরা ভেজালমুক্ত খাদ্য চাই’-এর সকল কর্মকান্ডের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে ওয়ালটন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছে ওয়ালটন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ২০১৫ সালের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল ব্র্যান্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪, ডিএইচএল-ডেইলি স্টার বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড-২০১৪। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা শীর্ষ করদাতা ও সেরা প্যাভিলিনসহ মোট ২৭টি পুরস্কার পেয়েছে ওয়ালটন। আমদানি বিকল্প শিল্পে অবদান রাখায় সম্প্রতি মিলেছে এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখায় ২০১৮ সালে পেয়েছে জাতীয় পরিবেশ পদক ২০১৮। ২০২০ সাল পর্যন্ত সাতবার ‘বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর। এছাড়া লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক সংস্থা ২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য ওয়ালটনকে ‘সুপারব্র্যান্ড’ সম্মাননা দিয়েছে।

ইতিহাস কথা বলে।সময় কথা বলে। সারা বিশ্বে প্রযুক্তিপণ্যের উদ্যোক্তারা একচেটিয়া ব্যবসা করছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনি কোম্পানির তালিকায় উঠে আসছে প্রযুক্তিপণ্য বিপণনকারীরা। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে মেধাবী মানুষেরা নানা উদ্ভাবন দিয়ে রকেট গতিতে এগিয়ে চলেছে। গুগল, এ্যামাজন, মাইক্রোসফট, এ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সারা বিশ্বের অর্থ দুহাতে কামিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারে এখন শীর্ষ ব্র্যান্ড ওয়ালটন। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে শীর্ষস্থান অর্জনের লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পিত রোডম্যাপ নিয়ে দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন। ওয়ালটন এখন বাংলাদেশের প্রযুক্তিপণ্যের প্রতীক। আর তাই বলা চলে- সময় এখন ওয়ালটনের, সময় এখন বাংলাদেশের।

একইসঙ্গে আজ ওয়ার্ল্ড  হ্যাপিনেস ডে। পৃথিবীর সকল মানুষ সুখী হোক। 

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়