ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনাকালে বইমেলা যে কারণে জরুরি ছিল

মুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ২১ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৬:৪৩, ২১ এপ্রিল ২০২১
করোনাকালে বইমেলা যে কারণে জরুরি ছিল

‘বই’ একটি নিঃসঙ্গ শব্দ। কারণ বই পড়তে হয় একা। নীরবে। নিরিবিলিতে। ব্যতিক্রম হয়তো আছে, তা অঙ্গুলিমেয় গণ্য। আর ‘মেলা’ সম্মিলিত শব্দছবি। ‘মেলা’ বললেই অনেক ভিড়, অনেক আয়োজন মনে ভাসে, চোখে আসে। বইমেলা হলে তখন নিঃসঙ্গ, একক মানুষ গিয়ে পড়ে ভিড়ের মধ্যে। এ ভিড় শুধু একুশের বইয়ের ভিড় তো নয়, এই ভিড় বিকাশের স্টিকারের ভিড়, ফ্রি চা-কফির ভিড় আর খানাপিনা আর আড্ডার ভিড়।

মূল কথায় যাওয়ার আগে আরেকটি পূর্বসূত্র সেরে নেই। বই একটি পণ্য। ব্যবসায়িক বস্তু। প্রকাশনা একটা ব্যবসা। সেই ব্যবসাকে শিল্প (ক্ষুদ্র শিল্প) বলেও সংজ্ঞায়িত করা যায়। আর বই মূলত জ্ঞান বা সাহিত্যের বাহন। বইমেলায় যে বই প্রদর্শিত হয় তার সবই যে জ্ঞানের আকর কিংবা সাহিত্যের সুচর্চা তা নয়। কাজেই ‘বই’ বললেই এলিয়ে না পড়লেও খুব যে ক্ষতি হবে তা নয়। যে কোনো বই তো এক রকম নয়! জগতে উপকারী পোকা-মাকড় আছে, আবার ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ও আছে। পোকা-মাকড়-জীবাণুর মতো জগতে উপকারী এবং ক্ষতিকর বইও আছে। এটুকু মেনে নিয়ে এই ২০২১ সালে অর্থাৎ করোনাকালের বইমেলা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা আলোচনা করা যেতে পারে।

গত বইমেলার পর থেকেই আমরা খুব ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছি করোনার তাণ্ডবে। হারিয়েছি অনেক প্রাণের মানুষকে। যারা ফিরে এসেছেন করোনার করাল থাবা থেকে, তারাও বেশ রকমের শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলা করেছেন। এমন সময়ে বইমেলা কেন খুব আবশ্যকীয় ছিল- এই প্রশ্ন দিয়েই শুরু করি।

এক অর্থে বইমেলা খুব জরুরি ছিল। বিশেষ করে পাঠকের জন্য, লেখকের জন্যও। লেখকও তো পাঠক এবং সে নিজেও পাঠক খোঁজে, কখনো স্বশরীরে; অটোগ্রাফ দেয়া, সারা বছরের কাজ জমিয়ে রাখা, সে কাজ নিয়ে স্বয়ং নির্দিষ্ট প্রকাশকের দুয়ারে হাজির হওয়া, নিজে নিয়মিত হাজিরা দেয়া, লেখক-কবি-পাঠক-প্রকাশকের একটা মিলনমেলা এই একুশের বইমেলা। নিরাপত্তার খাতিরেই একুশের বইমেলা মার্চ-এপ্রিলে হলো। মানে ২০২১ সালে বইমেলার ইতিহাসে একটা নয়া অধ্যায় সংযোজিত হলো। বোঝা গেলো, বছরের যে কোনো সময়ই বইমেলার আয়োজন করা যেতে পারে। একুশের চেতনা কেবল ফেব্রুয়ারি মাস কেন্দ্রিকই নয়। বরং সারা বছর ছড়িয়ে দিতে পারলে বাংলা ভাষা আর সাহিত্য চর্চার উপকারই হবে।

যে কোনো জিনিসই নিয়মিত চর্চার মধ্যে রাখতে হয়। ঐতিহ্য, রেওয়াজ এগুলোর ধারাবাহিকতা জরুরি। সেই বিবেচনায় বইমেলার পরিচালনার সিদ্ধান্তও জরুরি ছিল। রোগ-বালাই, শোক-দুঃখ, মৃত্যু-আতঙ্ক- ঘিরে থাকবে জীবনে। কুঁকড়ে, কুঁচকে তাই বলে মানুষ ক্রমশ তার স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারাবে তা বোধহয় ঠিক নয়। মানুষ যে উদ্বেগ আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গত এক বছরের অধিক কাল ধরে তা থেকে একটু শ্বাস নেয়ার, বের হওয়ার সুযোগ তো দরকার। আমাদের সোহরওয়ার্দী উদ্যানের বিরাট পরিসরে সেই শ্বাসস নেয়ার, খানিকটা চিন্তাহীন ঘোরাঘুরি ভাবনাটাও খুব ভয়ঙ্কর নয়। সেই বিবেচনায় এবারের বইমেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় দিক ছিল মেলার বিস্তৃত পরিবেশ। একটা অলিখিত দূরত্বের সুযোগ মেলার মোটামুটি ভিড়েও মান্য করা যেতো। আমি যে দু’চারদিন গিয়েছি মেলায় নিশ্চিত করে বলতেই পারি- কারো গায়ের সঙ্গে ধাক্কা খাইনি, কারো নিঃশ্বাস এসে আমার ঘাড়ে পড়েনি।

স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার ক্ষেত্রেও কিছু পরিকল্পনা উদাহরণ হতে পারে। বাধ্যতামূলক মুখোশ পরা নিশ্চিত হয়েছে মেলার গেট থেকেই। মেলার মূল ঘোষণাস্থল থেকে বারবার মুখোশ পরে থাকার অনুরোধও দেয়া হয়েছে। ‘চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী’ নীতি মেনে কেউ কেউ হয়তো সুযোগ পেয়েই মুখোশ হাতে, পকেটে রেখেছে বা থুতনির নিচে বা গলায় ঝুলিয়েছেন। সে তো নিয়ম না-মানাদের কথা। নিয়ম-না-মানা লোকের অভাব তো পথে-ঘাটে-দপ্তরে-বন্দরে কম নেই। সেটা একটা সামগ্রিক নৈরাশ্যের চিত্র হতে পারে। কিন্তু আশার ছবিটা ছিল বইমেলাতেই- মুখোশের ব্যবহার অনেকেই করেছে, সচেতনভাবেই করেছে, এই ব্যবহারটা উদাহরণ হতে পারে। আর মেলার সবগুলো প্রবেশদ্বারে পায়ে চাপ দিয়ে হাতে সেনিটাইজেশন পেয়ে যাওয়ার পদ্ধতি কিন্তু আকর্ষণীয় ছিল। এই চিত্র বড় বড় শপিংমলে বা অন্য কোনো ভিড়ময় স্থানে ভবিষ্যতে দেখতে পেলে আনন্দই লাগবে।

এই বইমেলার দৃশ্যমান চিত্রখানি কিন্তু দারুণ ছিল! বাঁশের যে ইনস্টলেশন, সেখানে এব্রোজোনিয়াল কিংবা ফব আর্টের মতো করে কতো বিচিত্র মূর্ত-বিমূর্ত ছবিই না আঁকা হয়েছে। বহু সুন্দরীকে দেখেছি, এসব ইনস্টলেশনের সামনে দাঁড়িয়ে সোস্যাল মিডিয়ার উপযুক্ত আকর্ষণীয় ছবি তুলতে। সুন্দরকে দেখতে পারা, তাকে ধরে রাখতে পারাও বইমেলার সঙ্গে জড়িয়ে গেলো। লেখক বলছি মঞ্চ থেকে শুরু করে মেলার নানা অংশে গ্রামের বাড়ির বাঁশের চৌকির মতো বসার জায়গা করে দেয়াটাও বেশ দৃষ্টিসুখকর আর আরাম দায়ক ছিলো। পুরো আয়োজনটি পরিবেশ বান্ধব এবং আমাদের গ্রামবাংলার কিছু টুকরো চিত্র এই বাঁশময় ইনস্টলেশনে ছিল। যদিও ‘দুষ্টু’ লোকেরা ‘বাঁশ’ ব্যাপারটি নিয়ে ইয়ার্কি মারার সুযোগ ছাড়েনি।

আমার কাছে খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে প্রত্যেকটা দোকানে দোকানে বিকাশের লোগো। বিকাশ অবশ্যই পাঠককে বাড়তি সুযোগ দিয়েছে বই কেনার ক্ষেত্রে। কিন্তু বইমেলার নান্দনিক দিকটাও তাদের ভাবতে হবে। নিজের প্রচারে প্রয়োজনে পুরো বইমেলা বিকাশময় করে ফেললে আমাদের ভালো লাগে না। নকশা বা প্রচারণার কৌশলের ক্ষেত্রে বিকাশকে ভবিষ্যতে আমরা আরও দৃষ্টিসুখকর করে পাবো আশা রাখি। ধরা যাক, বিকাশের যে প্রতিটি সাইনেজ ছিল তার প্রতিটিতে যদি একটি করে বই সংক্রান্ত বাণী থাকতো কিংবা একটি বইয়ের ছবি বা একজন লেখকের ছবি, তবে বিকাশের লোগোর প্রতি আমাদের আস্থা ও স্বস্তি আরো বেশি হতো।

আমি নিজে ভুল প্রমাণিত হয়েছি এই বইমেলায়। আমার ধারণা ছিলো দীর্ঘদিন পড়ুয়া মানুষগুলো গৃহবন্দী। তারা এই বইমেলায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আগামী এক বছরের পাঠ-রসদ জোগাড় করবে। লেখক-কবিগণও ঘরে বসে বসে অনেক পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন, সেগুলোও সবার সামনে আসবে। কিন্তু ব্যাপারাটা আশানুরূপ তো হয়নি, বরং বলা যায় আশার গুড়ে বালিই পড়েছে। কিন্তু কেন এমন হলো?

আমার বিবেচনায়, এ জন্য মূলত প্রকাশকরা দায়ী, কখনো-বা লেখক-কবি স্বয়ং। ‘দর্শক খায় না, পাবলিক নেয় না’- এমন ঐতিহ্যবাহী দোষারোপ আমি এবার পাঠকের ঘাড়ে দেব না। কোনো পাঠক যদি নিরাপত্তার কারণেই বইমেলায় না-ও এসে থাকে, তবে তারও তো সুযোগ ছিল ঘরে বসেই বই ফরামেয়শ করার। ফরামেয়শ মতো বই কিংবা যে কোনো পণ্যই তো এখন ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। অথচ জানা মতে, অনলাইনেও যে খুব বিক্রি হয়েছে তা কিন্তু নয়? কেন নয়? কারণ বই ছিল কম। আমি নিজে অনেক প্রকাশককে ঢিলে-ঢালা দেখেছি, দ্বিধান্বিত দেখেছি। বই কি আনবো? বই কি বিক্রি হবে? অনেক প্রকাশকই মেলায় যোগ দেয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা নতুন বই করবেন না, করলেও তেমন সংখ্যক করবেন না। আবার কোনো প্রকাশক আদৌ বইমেলায় অংশগ্রহণ করবেন কি, করবেন না এই দ্বিধা-দোলায় দুলেছেন খুব।

বইয়ের উৎপাদক তথা প্রকাশক যখন স্বয়ং দ্বিধান্বিত, চিন্তিত, তখন লেখকরাও কেউ কেউ তাই ছিলেন। তারাও ভেবেছেন এই মেলায় কি আমার বইটি পাঠকের হাতে পর্যাপ্ত পৌঁছাবে? এই ভাবনাতেই অনেক লেখক-কবি বইমেলায় নিজের নতুন বই আনেননি এবং যেহেতু নিজের বই নিই সেহেতু মেলাতেও তারা নেই। অথচ নতুন বই না-থাকলেও একজন প্রকাশক ও লেখকের পুরনো বই তো মেলায় ছিল, আর সেসব পুরনো বই কি সব বিক্রি হয়ে গিয়েছিল? সেগুলোকে কি গুরুত্ব দেয়া যেতো না। আমাকে কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন- ‘আপনার নতুন বই কী এসেছে?’ আমি পাল্টা প্রশ্ন করেছি, ‘আমার পুরনো বই কী কী পড়েছেন?’

বইয়ের আবার নতুন-পুরাতন কী! শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথের নতুন বই খুঁজে কী হবে? হুমায়ূন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হকের বই কি সব পুরনো হয়ে গেছে? এই বিষয়টি নিয়েই প্রকাশকরা প্রচারণায় যেতে পারতেন। ‘এই বইমেলায় হাসান আজিজুল হকের নতুন কোনো বই নেই, তবে তার সব লেখাই নতুনের চেয়েও মুচমুচে। এই সুযোগে পড়ে ফেলুন তার চিন্তাজাগানিয়া মুচমুচে লেখাখানি।’

এমনতর বিজ্ঞাপণ কি করা যেতো না! পুরান চাল তো ভাতে বাড়ে বলেই জানতাম। অভিনেতা, মোটিভেশন স্পিকার, ফেসবুকের জনপ্রিয় লেখকের চেয়ে সারা জীবন ধরে লেখালেখির দায় নেয়া লেখককে আমরা আলাদা করতে পারিনি। একজন কথিত জনপ্রিয় লেখকের ছবিতে বইমেলা ভাসিয়ে দেবো, আর শওকত আলী কিংবা রিজিয়া খাতুনের মুখটি চিনবেন না আমাদের নবীন পাঠক, তার দায় কি প্রকাশকদের নেই?

এটা ঠিক, আগেই বলেছি। প্রকাশক আদতে ব্যবসায়ী। সে যা বাজারে চলে, চলছে তার দিকে মন দেবে। কিন্তু বড় ব্যবসায়ী কি তা করেন? স্টিভ জবস থেকে বিল গেটস, পেঙ্গুইন থেকে ফেবার এ- ফেবার কি তাদের ক্রেতা তৈরি করেন না। ভালো সাহিত্য কি সঠিক প্রচারণায় পাঠকের হাতে পৌঁছানো যায় না? কিছু কিছু প্রকাশক কিন্তু তা করেছেন। উপযুক্ত, মননশীল বিষয় আর সাহিত্যমানসম্পন্ন বইকে কেউ কেউ তাদের প্রচারণায় প্রাধান্যও দিয়েছেন।

লাভ-ক্ষতির হিসাবে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায় কিংবা জীবনে কি প্রত্যেক ধাপে ধাপে এগুতে হয় না? এই করোনাকালেই তো আমারা শিখেছি- কখনো কখনো টিকে থাকা, বেঁচে থাকা, নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়াটাই অনেক।

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এই বইমেলার আশানুরূপ ফলন না-পাওয়ার কারণ কী? আমি বলব, উপযুক্ত প্রচারণার অভাব। এই অভাবটা প্রকাশক, আয়োজক সকলের তরফ থেকেই ছিল। এই ঢাকা শহরের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি- বইমেলা চলছে- এটাই তারা জানেন না। অথচ এটা জানানো যেতো প্রায় বিনা খরচেই। মিডিয়াগুলো চালাতে গেলেও তো উপযুক্ত বিষয় লাগে। আর বইমেলা মিডিয়ার প্রচারণার ক্ষেত্রে উপযুক্ত বিষয়ই বটে। কিন্তু তারপরও মিডিয়াতে তেমন সরব ছিল না বইমেলা। এর কারণও ওই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। শুরু থেকেই লেখক, প্রকাশক এবং ক্ষেত্র বিশেষে আয়োজক কর্তৃপক্ষও হ্যামলেটিয় দ্বিধায় ভুগেছেন। মেলা কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত হবে, আদৌ হবে কি না, কবে বন্ধ হয়ে যাবে- এই সব দ্বিধান্বিত আলোচনা মেলাজুড়েই ছিল। পাঠক তো দূরের কথা, ক্ষেত্রবিশেষে মিডিয়াও বুঝতে পারেনি বইমেলার হাল হকিকত। যোগাযোগের গভীর সমস্যায় ভুগেছে বইমেলা।

গত কয়েক বছর ধরে বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ (অন্তত আমার কাছে) লেখক বলছি মঞ্চ। মেলা চললো কিন্তু লেখক বলছি মঞ্চ বন্ধ হয়ে গেলো নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে। পুরো মেলা চলতে পারলে কেন লেখক বলছি মঞ্চ বন্ধ হয়ে যাবে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তা আমার বোধগম্য হয়নি। লেখক বলছি মঞ্চের একটা দিক আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে। লেখক আর সঞ্চালক যখন কথা বলছেন, তখন মঞ্চে উঠে এলেন নিরাপত্তাকর্মী। একাধিক দিন এ ঘটনা ঘটলো। নিরাপত্তাকর্মী জানালেন নামাজরত মুসল্লীদের অসুবিধা হচ্ছে, অতএব আলোচনা বন্ধ রাখতে হবে সাময়িকভাবে। বইমেলায় মসজিদের প্রাধান্য হয়তো নকশাবিদ কিংবা কর্তৃপক্ষ দিতে চেয়েছেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। সকল স্থানেই সকল ধর্ম চর্চার অবাধ সুযোগ থাকা ভালো। কিন্তু মূল আয়োজনটি কেন, কার জন্য সেটিও তো বিবেচ্য হওয়া দরকার। বিয়ে বাড়িতে যেমন বর-কনেই প্রাধান্য পাবে, বইমেলাতেও তেমনি লেখক-বই-সাহিত্য আলোচনা প্রাধান্য পাবে- সেটাই হওয়া উচিত। এমন নকশা বা আয়োজন কাম্য নয়, যেখানে একজনের মতের চর্চার সঙ্গে অন্যের মতের চর্চার অসুবিধা হয়। বিষয়টি ভবিষ্যতের মেলার নকশায় হয়তো বিবেচনা করা যাবে।

আরেকটি প্রসঙ্গ মেলার মাঠ এবং মেলার বাইরেও তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। অনেকেই বলছিল, যেখানে স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ সেখানে বইমেলা কেন খোলা? এখানে আমি শুধু ছোট্ট করে বলতে চাই- বইমেলা খোলা, কারণ সেটা খোলা প্রান্তরে হয়েছে। সেইসঙ্গে এটা একটা সুযোগ ছিল প্রমাণ করার যে, স্বাস্থ্যবিধি মানার অভ্যাসটাকে চাইলে আমরা জাগাতে পারি। এটা তো জানা কথা, যে কোনো জিনিস টানা একুশ দিন চর্চা করলে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তো এবারের বইমেলায় যে সব প্রকাশক-লেখক-পাঠক নিয়মিত গেছেন তাদের পক্ষে মুখে মুখোশ রাখা, হাত ধোঁয়া, সেনিটাইজ করার চর্চাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আশা করি।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক 

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়