ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গণটিকা, লকডাউন ও করোনার করুণ অভিজ্ঞতা

ড. কাজল রশীদ শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ২ আগস্ট ২০২১  
গণটিকা, লকডাউন ও করোনার করুণ অভিজ্ঞতা

বেড়েই চলেছে করোনার চোখ রাঙানি। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের আক্রমণে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যাও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জুলাই মাসে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা, এ বছরের প্রথম ছয়মাসের মোট মৃত্যুর সমান, কয়েকদিন ধরেই মৃতের সংখ্যা রয়েছে দুইশ’র ওপরে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে।  রয়েছে তৃতীয় টেউয়ের শঙ্কা। বিশ্বের কয়েকটি দেশে দেখাও দিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রোধে চলছে লকডাউন, ঈদের সময় যা হয়েছিল কিছুটা শিথিল। ঈদের একদিন পর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জারি রয়েছে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন। যা যথার্থভাবে বাস্তবায়নে সরকার কঠোর হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং শুরুতে সেরকম বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাও দেখা গেছে। এবং এই প্রথম লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হয় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু বিষয়টা মাঝামাঝি সময়ে এসে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর মতো হয়েছে। একটু উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট ও সহজবোধ্য হবে।

এক. ৩১ জুলাই রোববার। স্থান রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের বিপরীত পাশের আজিমপুর থেকে কল্যাণপুরগামী সড়ক। সময় বিকাল।
পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, রিকশা দেখলেই হাত তুলে দাঁড় করাচ্ছে। জানতে চাইছে কারণ, কোথায় যাচ্ছে, কেনো যাচ্ছে ইত্যাদি। কখনো হাত ইশারায় রাস্তার পাশে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখছে। এভাবেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল একটি মাইক্রোবাস। ড্রাইভার বসেই আছে, পুলিশ অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত। মাইক্রোবাসে থাকা কয়েকজন যাত্রী তখন নেমে দাঁড়িয়েছেন। তাদের একজন অ্যান্ড্রয়েড ফোন বের করে ফেইসবুকে ঢুকে একটা ছবি অন্যদেরকে দেখানোর চেষ্টা করছেন। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে ঢাকায় ফিরছে হাজারো মানুষ, ফেরিতে তিল পরিমাণ ফাঁকা জায়গা নেই। অথচ তারা একটা মাইক্রোবাসে তিনজন মানুষ যাচ্ছেন সাভারে; ভীষণ অসুস্থ একজন আত্মীয়কে দেখতে, তবুও থামিয়ে রাখা হয়েছে তাদের এবং অপমানিত হওয়ার পাশাপাশি হয়তো অর্থদণ্ডও রয়েছে তাদের ভাগ্যে।

দুই. একই দিন। সময় রাত দশটার মতো। এলিফেন্ট রোড। দোকান খুলে ভেতরে বসেই একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে, বাসায় ফিরছে জামাল ও সুমন। হেঁটেই যাবে মোহাম্মদপুর। যাওয়ার সময় দেখছেন এলিফেন্ট রোড দিয়ে ছুটে যাচ্ছে ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, রিকশা। ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা, পান বিক্রেতারাও ব্যস্ত বেশ। এই সময়ে ওরা জানতে পারে রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার লক্ষ্যে সীমিত পরিসরে দূরপাল্লার কিছু বাস চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ এর মধ্যেই দুর্ভোগের ষোল আনা ঝড় বয়ে গেছে ওদের ওপর দিয়ে।

তিন. পহেলা আগস্টের সন্ধ্যার শেষাশেষি। পোষা কয়েকটা বিড়ালের জন্য খাবার কিনতে এসেছিলেন রাজধানী শংকরের কালাম সাহেব। কয়েকদিন ধরেই বেরোতে চেয়েছেন, ইচ্ছায় নয়, বাধ্য হয়ে, প্রিয় প্রাণীগুলোর খাবার সংকটের কষ্ট দেখে। কিন্তু এই লকডাউনে বেরোনো ঠিক হবে কিনা, অপমানিত-দণ্ডিত হতে হয় কিনা এ নিয়ে ছিল শঙ্কা-সংশয়। অথচ কাঁটাবনে তিনি যখন দেখলেন মোড়ে গাড়ির সিগন্যাল পড়ছে, যদিও নেই পুলিশের উপস্থিতি। বিস্ময় বাড়াল, কয়েকটা গণপরিবহনের সাঁই করে চলে যাওয়া।

করোনার ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় ঢেউ রোধে কঠোর সর্বাত্মক লকাউনের যদি হয় এই অবস্থা। লকডাউনের মধ্যেই যদি হাজার হাজার মানুষকে গাদাগাদি করে কর্মস্থলে ফিরতে হয়, তাহলে লকডাউন দেয়ার দরকার কোথায় আর প্রয়োজনটাই-বা কী?

লকডাউনের মাত্র পনেরোটা দিনও কি গার্মেন্টস মালিকদের সবুর করা সম্ভব হলো না? তাদের মানাতে বাধ্য করা গেল না? যদি অর্থনীতির কথা বলতে হয়। তাহলে তো একথাও বলতে হবে অর্থনীতির অভিঘাত সবার ক্ষেত্রেই সমভাবে কাজ করে। পোশাক মালিকদের অর্থনীতি-অর্থনীতি আর এলিফেন্ট রোডের দোকান মালিক-কর্মচারীদেরটা কী? চা দোকানদার, গণপরিবহনের মালিক শ্রমিকদের অর্থনীতি কি অর্থনীতি নয়? নাকি তারা প্রভাবশালী-সংগঠিত বলে সব সময়ই বিশেষ সুবিধাভোগী হবেন?

লকডাউনের এই জগাখিচুড়ি অবস্থা দেখে আমাদের ভয় হয় কেবলই। লকডাউনেই যদি হয় এই অবস্থা এবং পনেরো দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্তের রদবদল ও তা বাস্তবায়নে নানান রকমের চাপানউতোর। তাহলে গণটিকার মতো একটা বৃহৎ, দীর্ঘমেয়াদী, জনগুরুত্বসম্পন্ন কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তো?

প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা যে মোটেই সুখকর ও সন্তোষজনক নয়, তা বলা বাহুল্য। অথচ প্রতিশ্রুতি ও  সিদ্ধান্ত নেয়ার তোড়জোড়ের কমতি ছিল না। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অকল্পনীয়-অপ্রত্যাশিত সব জটিলতা, ক্ষেত্র বিশেষে পাহাড়সম ব্যর্থতার নজির। এ কারণেই ভয়। সমস্যাটা কোথায়- কেনো প্রতিশ্রুতিই যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, কেনো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে বারবারই, এসব নিয়ে কোনো প্রকার জবাবদিহি ও নজরদারির উদাহরণ নেই।

মনে রাখা প্রয়োজন টিকার ক্ষেত্রে আমরা ইতোমধ্যে অনেক দেরি করে ফেলেছি। সরকার পাঁচ তারিখের পর গণটিকা কার্যক্রম জোরদারভাবে শুরু করার কথা বলেছেন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে এই কার্যক্রম পরিচালনের ঘোষণাও দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, প্রতি মাসে এক কোটি করে টিকা দেওয়া হবে। লক্ষ্যণীয়, সরকারের এই ঘোষণা আমরা যদি শতভাগ বাস্তবায়ন হবে বলে ধরেও নেই,  তাহলেও ৬০ শতাংশ মানুষকে পুরোপুরি টিকাকরণের আওতায় আনতে সময় লাগবে কমপক্ষে এক বছর। সময়টা কিন্তু অনেক বেশি। যেখানে ভারতের মতো এতো বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ তাদের গণ টিকাকরণ বাস্তবায়ন ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার সকল প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে। সেখানে আমরা কেনো এতটা পিছিয়ে? দক্ষিণ এশিয়ায় টিকাগ্রহণে কার্যত আমরাই সবার থেকে পিছিয়ে রয়েছি। কারণ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে এগিয়ে থাকা আদতে কোনো কাজের কথা নয়।

গণটিকা কার্যক্রমের শুরুতেই আমাদের বড়ো রকমের ধাক্কা ও হোঁচটের মুখোমুখি হতে হয়েছে এবং এতোটা পিছিয়ে থাকার পেছনে এটাই মুখ্য কারণ। টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটা মাত্র উৎসের প্রতি ভরসা করা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। এখন যেভাবে অনেকগুলো উৎস থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে একইভাবে যদি শুরুতে সেটা করা হতো তাহলে হয়তো এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

এখন প্রশ্ন হলো, প্রতি মাসে এক কোটি টিকা প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে আমরা আদৌ সক্ষম কিনা? শিশুদের টিকা প্রদানে আমাদের সাফল্য প্রশ্নাতীত এবং প্রশংসিত। কিন্তু সেটা ছিল দীর্ঘমেয়াদী একটা প্রক্রিয়া। করোনার বিষয়টি একেবারে আলাদা। এখানে সময় বেঁধে দেওয়া।
টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও প্রদান গণটিকা সফল করার ক্ষেত্রে মুখ্য চ্যালেঞ্জ। এগুলো যদি যথাযথভাবে করা যায় তাহলেই কেবল প্রতিশ্রুতি ও সিদ্ধান্তের সাফল্য বাস্তবায়ন হবে, নতুবা নয়। এবং চারটি বিষয়ের কোনো একটাতে যদি ব্যত্যয় হয় তাহলে পুরো বিষয়টি লেজে গোবরে অবস্থায় রূপ নেবে। করোনাকালীন অভিজ্ঞতায় বিশেষ করে লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনের এক-এক সময় ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ মানুষের দুর্ভোগ অবর্ণনীয় যেমন করেছে তেমনি করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। যখন লকডাউন ঘোষিত হয়েছে তখনই মানুষ হতবিহ্বল হয়ে জনস্রোতের মতো গ্রামে গেছে। কোনোভাবেই এই জনস্রোতকে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। এমনকি চলমান লকডাউনের ক্ষেত্রেও যা ঘটলো এবং ঘটে চলেছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। অথচ অতীতের লকডাউন থেকে একটু শিক্ষা নিলেই এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যেত।

আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য হলো, আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নেই না। কিন্তু মহামারিতেও যে আমরা তেমনটাই করবো তা লজ্জাকর বৈকি। বলা হয়, সব ভালো যার শেষ ভালো তার। করোনার শুরু থেকে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা শেষাবধি প্রশ্নবিদ্ধ ও খেলো হয়েছে শুধুমাত্র বাস্তবায়নজনিত ব্যর্থতা ও ত্রুটির কারণে। এ কারণে সরকারকেও ভেবে দেখতে হবে সমস্যা কোথায়। কোন বাস্তবতার কারণে কাজগুলো যথাযথভাবে হচ্ছে না। হ্যাঁ, সরকার হয়তো ব্যর্থতা ও দুর্নীতির জন্য তাদেরকে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনছে, কিন্তু সেটা তো ক্ষতি ও সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে যাওয়ার পর। শাহেদ-সাবরিনাদের কেনো আগেই প্রতিহত করা যাচ্ছে না, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা প্রয়োজন।

করোনা প্রতিরোধে আমাদের শেষ ভরসা এখন গণটিকা সফলভাবে বাস্তবায়ন। কিন্তু এই সময়ে মাসে এক কোটি টিকা প্রদান সক্ষমতা আমাদের আছে কিনা তা নিয়ে কোনো গবেষণা-মাঠ জরিপ হয়েছে বলে মনে হয় না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোববার বলেছেন, ‘৭ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত এক কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হঠাৎ এ ঘোষণা কেনো দিলেন এবং সেটা আদৌ সম্ভব কিনা আমাদের কাছে কোনোটাই পরিষ্কার নয়। মনে রাখতে হবে যে কোনো দুর্যোগের সময় অধিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া জরুরি। কেননা, এই সময় দায়িত্বশীলতার বরখেলাপ হলে মানুষের আস্থা যেমন উবে যায়, তেমনি মানুষের মাঝে অজানা ভয়-শঙ্কা কাজ করে। তখন সত্যটাকেও আস্থায় নিতে দশবার ভাবতে হয়, অনেকটা চুন খেয়ে মুখ পুড়ে যাওয়ার মতো।

গণটিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্যের পাশাপাশি প্রভাব-স্বজনপ্রীতি-পদ পদবি ও দলীয় পরিচয় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে কিনা তা নিয়েও আম মানুষ সংশয়িত। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সরকার দলীয় একজন হুইপ সকল নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে নিজ ইউনিয়নে টিকা কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। এসব উদাহরণ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

এ কারণে গণটিকা সফল করতে সরকারের এখুনি একেবারে সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রদান পর্যন্ত রোডম্যাপ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এখানে দুই স্তরের নজরদারি ও জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোথাও কোনো সমস্যা হলে দ্রুত যেন তার সমাধান হয় সেই ব্যাপারেও মোবাইল টিম গঠন করা প্রয়োজন।

করোনা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে অবস্থা দেখা গেল তাতে আমাদের চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সংকটটাই গভীরভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। সরকার চিকিৎসা সেবাকে একেবারে থানা-উপজেলা-ইউনয়ন এমনকি গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে গেছে। উপজেলা জেলা পর্যায়ে রয়েছে হাসপাতাল। মাঝে মাঝেই দেখা যায়, মন্ত্রী এমপিদের নির্দিষ্ট সংখ্যক শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল উদ্বোধনের খবর ও  চিত্র। কিন্তু স্থাপনা আর কয়েকজন লোকবল থাকলেই যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয় না, করোনা সেই সকরুণ বাস্তবতাকে একেবারেই উদোম করে দিয়েছে।

আসলে যে কোনো কিছু সঠিক ও সুন্দরভাবে কাজ করার জন্য শুধু কাঠামো দাঁড় করালেই হয় না, তা পরিচালনার জন্য সে ধরনের লোকবল থাকা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সেভাবে কাজের পরিবেশ- সুযোগ রয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা অবশ্যাম্ভাবী। মনে রাখতে হবে, স্থাপনা চিকিৎসা সেবা দেবে না। ডাক্তার, নার্স, ল্যাবরেটরিয়ান, টেকনিশিয়ানসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিলে চিকিৎসা সেবা দেবেন। কিন্তু আমরা কি সেরকম সক্ষম-দক্ষতাসম্পন্ন-হৃদয় সংবেদি-বিবেকবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে পেরেছি?

চিকিৎসা সেবা শব্দযুগল থেকে কেনো ‘সেবা’ শব্দটা কাজ করছে না। এবং কেনো সেখানে চিকিৎসা ‘ব্যবসা’র বাস্তবতা অসহনীয় মাত্রায় কাজ করছে তা নিয়েও ভাবনা জরুরি। এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় ও দায়বদ্ধতা অপরিসীম তা যেন ভুলতে বসেছেন সকলেই। মনে রাখা প্রয়োজন, চিকিৎসা সেবা পাওয়া করুণা নয়, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। আর মহামারির সময় এই অধিকারের বিস্তার ঘটা এবং বাস্তবায়ন সবার আগে প্রয়োজন। যদি ব্যত্যয় হয় কোনোরূপ তাহলে সেটি রাষ্ট্রের ললাটে বেদনার তিলক পরায়।

করোনা যেভাবে তার ধরন বদলাচ্ছে তাতে গণটিকা প্রদান যদি দীর্ঘসূত্রিতার জালে আটকে যায় তাহলে টিকার সাফল্য সেভাবে আসবে না। ফলে, এই অবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, যত দ্রুত সম্ভব গণটিকা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা। যা বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করতে চলেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অনেকেই সম্পন্ন করার ব্যাপারেও আশাবাদী। সুতরাং আমরা এমনিতেই অনেক পিছিয়ে আছি। প্রতিশ্রুত সময়ে যদি গিণটিকার শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করা যায়, তাহলেও সেটা হবে অনেক বড়ো একটা কাজ। কিন্তু যদি প্রতিশ্রুত সময়েও সম্ভব না হয় তাহলে সেটা জনস্বাস্থ্যের জন্যে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। করোনাকালের ষোলো মাসে এবং লকডাউনে আমাদের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর ও সন্তোষজনক নয়। একারণেই শঙ্কা ও সংশয়।


লেখক: সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক
 

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়