ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর আদরের রাসেল

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ১৬ অক্টোবর ২০২১  
বঙ্গবন্ধুর আদরের রাসেল

ব্রিটিশ নোবেলজয়ী দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী এবং সমাজ সমালোচক বার্ট্রান্ড আর্থার উইলিয়াম রাসেলের নামানুসারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রিয় ছোট সন্তানের নাম রেখেছিলেন শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল-এর গুণমুগ্ধ পাঠক। যে কারণে প্রিয় লেখকের নামানুসারে প্রিয় সন্তানের নাম রেখেছিলেন।

ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর-এ ১৮ অক্টোবর, ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করে শেখ রাসেল। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সে সর্বকনিষ্ঠ। বেঁচে থাকলে রাসেলের বয়স হতো আজ ৫৭ বছর। শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে কি তাঁকে বঙ্গবন্ধুর মতো দেখাত? লম্বা, সৌম্য-সুন্দর চেহারার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সুপুরুষ? ব্যাক ব্রাশ করা কাঁচাপাকা চুলে, সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা শেখ রাসেল কি এখন দেশের নেতৃত্ব দিতেন? হয়তো তাই। আর এ কথা ভেবেই ঘাতকেরা সেদিন জাতির পিতার সঙ্গে তাঁকেও হত্যা করে। ইতিহাসের নৃশংস্য এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলG

সকল ধর্মে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে নারী ও শিশু হত্যা জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। সব ধর্মেই নর হত্যা মহাপাপ। নবী করীম (সা:) বলেছেন, কেয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিচার করা হবে, তা তাদের মধ্যে সংঘটিত রক্তপাত ও হত্যার বিচার। (বোখারী, মুসলিম) তাই যারা নিজেদের মুসলমান দাবি করে অবলীলায় শিশু হত্যা করছে তারা নিঃসন্দেহে ভ্রান্ত পথের অনুসারী এবং এ পথ গিয়েছে জাহান্নামের দিকে। বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এ সব লোকেদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ‘তাদেরকে যখনই বলা হয়েছে, ‘তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না’ তখনই তারা বলেছে, ‘আমরা তো সংশোধনকারী মাত্র।’ (সূরা বাকারা-১১)। খুনিদের কাছে ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র, বিবেক বুদ্ধি কোন কিছুরই বালাই ছিল না, তারা পশু হয়ে গিয়েছিলG

পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান হিসেবে বাড়ির সবাই শহীদ শেখ রাসেলকে আদর করতেন। মা, ভাই বোনদের পাশাপাশি দাদা দাদিও খুব আদর করতেন রাসেলকে। পিতা বঙ্গবন্ধু একটু বেশিই আদর করতেন। কারণ জন্ম ও বেড়ে ওঠার সময় পিতার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল ছোট্ট রাসেল। যে কারণে স্বাধীনতার পর '৭৫ পর্যন্ত সুযোগ পেলেই বঙ্গবন্ধু শেখ রাসেলকে নিজের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু ঘাতকরা তাঁকেও রেহাই দেয়নি। কি অপরাধ ছিল তাঁর?

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদদের কারো কোনো অপরাধ ছিল না। তারা সেদিন হত্যা করেছে স্বাধীন বাংলাদেশকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, গণতন্ত্রকে, মানবতাকে। তা না হলে ৪ বছরের শিশু থেকে নব বিবাহিতা বধূ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীকে তারা কীভাবে হত্যা করে? শুধু তারা হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, এর যেন বিচার না হয় সে জন্য অবৈধ ক্ষমতা দখলদার মোশতাক-জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি আইন করে বিচারের পথ বন্ধ করে রেখেছিল।

শহীদ শেখ রাসেল হতে পারে আগামী দিনের শিশুদের প্রেরণা। জাতির পিতা ও রাষ্ট্রপতির পুত্র হয়েও যে সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে তাঁর পথচলা শুরু হয়েছিল, সাধারণ মানের স্কুল, সাদামাটা জীবন যাপন, আর দশটা সন্তানের মতই রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং পারিবারিক শিষ্টাচার ও আদব কায়দার যে উদাহরণ সে রেখে গেছে তা আগামী দিনের শিশুদের চলার পথে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।  

সুখের বিষয় বর্তমান সরকার শেখ রাসেলের জন্মদিন জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিনে এটা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মান। কারণ তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। মহান আল্লাহতায়ালা পরকালে তাঁকে তাঁর পিতামাতা আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে উত্তম প্রতিদান জান্নাতুল ফেরদৌস দেবেন। মহান আল্লাহর দরবারে সেই ফরিয়াদ জানাই। শুভ জন্মদিন শেখ রাসেল। 

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
 

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়