ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফেইসবুক লাইভে আত্মহত্যা এবং কয়েকটি প্রশ্ন

কামরুল আহসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৯:০৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ফেইসবুক লাইভে আত্মহত্যা এবং কয়েকটি প্রশ্ন

আবু মহসিন খান কেন নিজেকে হত্যা করলেন? আত্মহত্যার কয়েকটি কারণ তিনি নিজেই বলেছেন―বার্ধক্যজনিত নিঃসঙ্গতা, পারিবারিক দূরত্ব, রোগভোগ, হতাশা সবকিছু মিলিয়ে নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারছিলেন না বলে স্বেচ্ছায় দূরে সরে গেলেন। কিন্তু কয়েকটি প্রশ্ন তিনি আমাদের সামনে রেখে গেলেন।

এক. আমাদের পরিবারগুলো কি আসলেই এত বিচ্ছিন্ন যে, একজন বয়স্কমানুষের খবরও কেউ রাখে না! তিনি বাসায় একা থাকতেন। এক ছেলে থাকে বিদেশ, এক মেয়ে আছে তাও আমরা জানি; দেশে মেয়ের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ ছিল না? যদিও ফেইসবুক লাইভে তিনি পারিবারিক দূরত্বের কথাটাই জোর দিয়ে বলেছেন।

দুই. ঠিক কত টাকা হলে নিজেকে সম্মানের সাথে বাঁচিয়ে রাখা যায়? আবু মহসিন খানকে ঠিক গরিব বলা চলে না, উচ্চ মধ্যবিত্তই বলা যায়। নিজের বৈধ পিস্তল আছে, হজ করেছেন, ব্যবসায়ী ছিলেন, ছেলে অস্ট্রেলিয়া থাকে, মেয়ের স্বামী সিনেমার নায়ক― সব মিলিয়ে একেবারে পথে বসার অবস্থায় তিনি ছিলেন না। যদিও বলেছেন ব্যবসা বন্ধ। তাতে হয়তো সাময়িক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু একেবারে সর্বশান্ত হওয়ার মতো ব্যাপার না। তবে তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। সম্মানহানীর ভয় অনেককে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়। 

তিন. কতখানি একাকীত্ব সহ্য করে বেঁচে থাকা যায়? ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়ে আবু মহসিন বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নিজের একাকীত্বকে। এবং ফেইসবুকে এটা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। একাকীত্ব আসলে কী? তা থেকে মুক্তিরই-বা উপায় কী?

চার. নিজের পরিচয়ের চেয়ে আবু মহসিন খানের মেয়ের জামাইয়ের পরিচয় কেন বড় হয়ে গেল? আমাদের দেশে পরিচয়-নির্ধারণ একটা সামাজিক সমস্যা। এখানেই তো মানুষটা ‘নাই’ হয়ে গেলেন। নিজের পরিচয় আড়াল পড়ে গেল। ‘নায়কের শ্বশুর’ পরিচয়ে শিরোনাম দিয়ে কিছু পত্রিকা পাঠক আকর্ষণ করতে চেয়েছে। প্রধান ভিকটিম আড়ালে সরে গিয়ে এখানে নায়ক রিয়াজই যেন ভিকটিম হয়ে উঠেছেন। 

পাঁচ. শেষ প্রশ্ন―আত্মহত্যাই কি একমাত্র সমাধান ছিল?

নিশ্চয়ই অনেকের মনে আরো আনেক প্রশ্ন আছে। আপাতত আমি এগুলোই প্রধান সমস্যা ধরে নিয়ে আলোচনা করছি। 

বাংলাদেশে একজন বিশিষ্ট মানুষকে আমি চিনি যিনি বাসায় একা থাকেন। একমাত্র মেয়ে থাকেন বিদেশে। কাজের লোকজন তার দেখাশোনা করেন। খোঁজ নিলে এমন আরো অসংখ্য বাবা-মা পাওয়া যাবে শেষ বয়সে এটাই যাদের নিয়তি। 

বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে আশি-নব্বইয়ের দশকে। আমাদের পরিবারগুলো তখনও এত ভেঙে পড়েনি। এরপর নব্বই দশকে বিশেষ করে মধ্যবিত্তের ছেলেমেয়েরাও বিদেশে যেতে লাগলেন গণহারে। এটা এখন বাংলাদেশে প্রায় সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর মতো বিকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কোনো পরিবারের ছেলেমেয়ে যদি ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া না থাকে তার যেন সমাজে আর মুখ দেখানোর জায়গা নেই! এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা পরবর্তীতে আর খুব বেশি দেশমুখী হয়নি। ইচ্ছা করে নয় নিশ্চয়ই। বাস্তবতা। বিদেশে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে, সংসারের শেকড় গজিয়েছে, তাদেরও ছেলেমেয়ের জন্ম হয়েছে ওখানে, ওখানেই ওরা বড় হয়েছে, লেখাপড়া করে, সব মিলিয়ে দেশে আসা কমে গেছে। এরকম অনেককেই আমি চোখের সামনে দেখেছি, বাবা-মা থাকেন দেশে, নিঃসঙ্গ, শান্তি একটাই―ছেলেটা বা মেয়েটা বিদেশে থাকে! 

দ্বিতীয় আরেকটা বিষয়, আশি-নব্বই দশকের বাবা-মার ছেলেমেয়ের সংখ্যাও কম হয়েছে। তখন ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ এই প্রচারণা খুব জোরেশোরে চলেছে। ফলে দুই সন্তানের বাবা-মা স্বাভাবিকভাবেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে। দুই সন্তানের একটি যদি ছেলে হয় আর একটি যদি হয় মেয়ে, মেয়েটি বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি চলে যায়, ছেলেও বিয়ে করে একটু দূরে সরে যায় বটেই। অর্থাৎ, ষাট-সত্তর দশকের বড় পরিবারগুলো এমনিতেই আর রইল না। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। একে তো একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে ছোট  হলো, একক পরিবারগুলোও সন্তানের অভাবে আরো ছোট হলো। এ-নিয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখা যায়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই এটা করে দিয়েছে। পুঁজিবাদী সমাজ চায় তুমি ভেঙে টুকরো টুকরো হও। যত বেশি পরিবার তত বেশি ব্যবসা। তুমি যত বিচ্ছিন্ন হবে, তত তোমার জিনিসপত্র লাগবে। এক  রান্নাঘরে এক সময় বিশ-ত্রিশজনের একটি পরিবার চলেছে, এখন দুজন মানুষের জন্যও একটি রান্নাঘর দরকার। 

বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যবস্থা অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যেই নিহিত। অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত যে অন্যসব সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান হবে না এটা আগে মানতে হবে। কিন্তু কীভাবে সেই অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে? এই অসীম বৈষম্যে, এমন নিষ্ঠুর স্বার্থপরতার? সেটা জটিল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-দার্শনিক আলাপ। তার মানে একটি আত্মহত্যা কেবল একজন মানুষের মৃত্যু নয়, তার সঙ্গে পুরো সমাজব্যবস্থা জড়িত। 

দ্বিতীয়ত প্রশ্ন―ঠিক কত টাকা হলে নিজেকে সম্মানের সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখা যায়? এর আসলে কোনো সীমা-পরিসীমা নাই। কারণ সম্মান বিমূর্ত। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষার ওপর। অসংখ্য মানুষ তো ফকিরদশায়ও বেঁচে থাকেন। এই সমাজে এত মানুষের এত দুঃখ-দুর্দশা যে, সেসব না দেখে কেবল নিজের ব্যক্তিগত সুখের চিন্তা করে আত্মহত্যা মহাপাপ। তবে, আবু মহসিন খান ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন। তিনি নিরুপায় হয়েই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। নিজে কিছু করতে পারছিলেন না। ছেলেমেয়েরাও দেখেননি। আত্মীয়-স্বজনও প্রতারণা করেছেন; অন্তত তার শেষ ভাষ্য অনুযায়ী। এক্ষেত্রে আমরা তার জন্য কেবল করুণাই দেখাতে পারব, তাকে বিচার করতে পারব না। 

তবে, মধ্যবিত্তসুলভ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে তিনি হয়তো বেঁচে যেতেন। শুধু রোগভোগের যন্ত্রণা নয়, তার মধ্যে ছিল প্রবল অভিমান। মৃত্যু ভয়ও ছিল, বলেছেন তিনি হয়তো বাসায় একাই মরে থাকতে পারেন। তাই তো শেষ পর্যন্ত রইলেন, নিজের ইচ্ছায়। মৃত্যুভয় থেকে পালানোর জন্য মানুষ অনেক সময় স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন এমন নজির আছে। এখানে পার্থক্য কেবল, নিজের মৃত্যু তিনি একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিশ্চিত করে গেলেন। ফেইসবুক লাইভের মাধ্যমে হয়তো কোনো বার্তা দিতে চেয়েছেন। তবে পদ্ধতিটা ছিল ভুল। 

তৃতীয় প্রশ্ন―কতখানি একাকীত্ব সহ্য করে বেঁচে থাকা যায়? একাকীত্বও একটা মানসিক ধারণা। এ-কথা সত্য যে মানুষ একা থাকতে পারে না। হাজার বছর ধরে সে দলভূক্ত সমাজে বাস করেছে। হঠাৎ এই আধুনিক সমাজে তার ওপর চেপে বসেছে একাকীত্বের অভিশাপ। তবে চাইলেই একাকীত্ব কাটানো যায়। সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, শিল্পসাহিত্যচর্চা মানুষকে একাকীত্ব থেকে দূরে রাখে। তাও আমরা কাউকে একা থাকতে উৎসাহ দিতে চাই না। মানুষকে অবশ্যই নিজের সঙ্গীসাথী যোগাড় করে নিতে হবে। কেউ যদি তাতে ব্যর্থ হয় তাতে যেমন তার নিজেরও দোষ, তেমনি সমাজেরও কিছু দায়দায়িত্ব আছে। নাগরিক সমাজে একাকীত্ব দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। সমাজটা এমন দিকে গেছে যে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনের সঙ্গেই আমাদের পরিচয় হয় না। এক সময় পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব ছিল, পাঠাগার ছিল। পত্রিকা পড়তে আসলেও সমাজের আর আট-দশজনের সঙ্গে মেলামেশা হতো। এখন সেসব নেই। এর সবচেয়ে মারাত্মক শিকার হয়েছেন মুরব্বীরা। এ-বয়সে নতুন করে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় না। ফেইসবুকে অনেকে আলাপ তুলেছেন স্ত্রী বা স্বামীবিয়োগ হলে প্রয়োজনে বিয়ে করে হলেও যেন একাকীত্ব দূর করার ব্যবস্থা করা হয়। কথাটা বলা সহজ, কিন্তু ও-বয়সে বিয়ে করাটাও কঠিন।  

চতুর্থ প্রশ্ন―নিজের পরিচয়ের চেয়ে আবু মহসিন খানের অমুকের ‘মেয়ের জামাই’ পরিচয় কেন বড় হয়ে গেল? মেয়ের জামাই যেহেতু জনপ্রিয় নায়ক সেহেতু সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই এ-পরিচয়টাকেই বড় করে দেখেছে। কিন্তু পত্রিকাগুলোর সেটা উচিত হয়নি। তবে, নায়কের শ্বশুর না হয়ে সাধারণ মানুষ হলে তার মৃত্যু এতখানি আলোচনার বিষয় হতো কিনা তাও আলোচ্য বিষয়। অন্যসব আত্মহত্যার মতোই এটাও হয়তো আড়ালে পড়ে যেত। হয়তো এ-পরিচয়টাকেই বড় করে দেখানোর জন্য তিনি ফেইসবুক লাইভে এসেছেন। না-হলে হয়তো গোপনেই আত্মহত্যা করতেন। আর যাই হোক, ফেইসবুক লাইভে আসার মাধ্যমে তার একটা প্রতিশোধ নেবার ব্যাপার ছিল। যে-স্বীকারোক্তি তিনি দিয়েছেন তাতে অন্য মানুষের দোষের কথাই বেশি বলা হয়েছে। অভিমানের সঙ্গে মিশেছে চাপা ক্ষোভ। যদিও তিনি ছিলেন শান্ত-শিষ্ট, পরিল্পনাটা হয়তো ছিল দীর্ঘমেয়াদি। 

আমার শেষ প্রশ্ন―আত্মহত্যাই কি একমাত্র সমাধান ছিল? না, কোনো আত্মহত্যাই সমাধান না। আত্মহত্যা হচ্ছে একটা সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান। আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে ফিরেছেন এমন অনেক মানুষ নিজের ভুল পদক্ষেপের কথা স্বীকার করেছেন। এবং পরবর্তীতে তারা সুখী-সমৃদ্ধজীবন কাটিয়েছেন।

আসলে মানুষের মস্তিষ্ক একটা জটিল বিষয়। কোনো পরিকল্পনা একবার মাথায় ঢুকে গেলে সেটা জীবন্তরূপ নিতে শুরু করে। পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করার আগ পর্যন্ত শান্তি পাওয়া যায় না। নিজেকে হত্যা করার চিন্তা একটা অসুখও। অনেকে ভাবে আমি প্রতিশোধ নিচ্ছি, বা নিজের জিদ পূরণ করছি। এর জন্য পরিস্থিতি যতটা না দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী মস্তিষ্কের দুর্বল গঠন। নানা কারণে মস্তিষ্ক অনেক সময় স্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোগী নিজেও হয়তো এটা জানতে পারে না। সে পরিস্থিতিকে দায়ী করে। অথচ দেখা যায় ওই একই পরিস্থিতিতে ওখান থেকে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হেসেখেলে বেরিয়ে আসতে পারে। 

একজন মানুষ কেন আত্মহত্যা করে তার একটি কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। সাধারণত মনে করা হয় কোনো সমস্যার সমাধান না থাকলেই মানুষ আত্মহত্যা করে। কথাটি ঠিক নয়। কারণ, দেখা যায়, অনেক সময় তুচ্ছ আবেগ থেকেও অনেক মানুষ আত্মহত্যা করে। জাপানি একজন মাল্টিমিলিয়নিয়রের আত্মহত্যার সঙ্গে বিস্তর পার্থক্য আছে ভারতের একজন কৃষকের। আমরিকার একটি তরুণীর আত্মহত্যার সঙ্গে কোনো মিল নেই বাংলাদেশী একজন গৃহবধূর। হিটলার আর ক্লিওপেট্রার আত্মহত্যার কারণ এক নয়। দুজনেই দুজনের সময়ে রাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। একজন নিজ রাজ্যের চক্রান্তে জড়িয়ে পড়লেও মূলত আত্মহত্যা করেছেন প্রেমবিরহ বিষাদের বিষণ্নতা সহ্য করতে না পেরে। আর হিটলারের পক্ষে আত্মহত্যা না করে আর উপায় ছিল না। সম্ভবত হিটলারের আত্মহত্যাই পৃথিবীতে একমাত্র যৌক্তিক আত্মহত্যা। আত্মহত্যার কারণ হতে পারে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-মনস্তাত্ত্বিক-দার্শনিক। এমন কি সাংস্কৃতিক, বংশগত কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করেন। তবে, যে যে-কারণেই আত্মহত্যা করুক, সবার মানসিকতায় একটা জায়গায় মিল আছে। তা হলো নিজেকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ মনে করা। 

আত্মহত্যার কোনো নির্দিষ্ট কারণ এখনো বের করা যায়নি। তবে, ‘এপিডেমিওলজি’ নামে চিকিৎসাবিজ্ঞান এ রোগকে চিহ্নিত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্কের গঠনই সবচেয়ে বেশি দায়ী। তবে, যাই হোক না কেন আত্মহত্যা অবশ্যই প্রতিরোধ সম্ভব। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকর সামাজিক-সংস্কৃতিক সম্মিলন। 

আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলতে অনেকে সংকোচ বোধ করেন। একে এইডস বা ধর্ষণের চেয়েও স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে ধরা হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে কেউ আত্মহত্যা করলে সেটাকে দুর্ঘটনা বলে চালানো হয় এবং তার কোনো নাথিভূক্ত করা হয় না। বিভিন্ন ধর্মে ও রাষ্ট্রীয় আইনে আত্মহত্যাকে ‘মহাপাপ’ ও ‘মহাঅপরাধ’ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাও বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১০ লাখ মানুষ নিজেকে হত্যা করে। বাংলাদেশে ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। করোনা যে এমন মহামারি তাতে গত দুবছরে মারা গেছে বিশ হাজারের মতো মানুষ। তার মানে আত্মহত্যাও ভয়ঙ্কর মহামারি হয়ে উঠছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য এখনই বিস্তৃত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। শুধু ফেইসবুক স্ট্যাটাসে কাজ হবে না। 

বিদেশে অনেক কলসেন্টার আছে আত্মহত্যাকামীদের যারা মানসিক সহচার্য দিয়ে ওই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সহযোগিতা করে। আমাদের দেশে প্রচুর হাসপাতাল, প্রচুর ফার্মেসী, প্রচুর ডাক্তার, কিন্তু তুলনায় মানসিকসেবা পরিচর্যাকেন্দ্র খুব কম। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সেবা নিতেও আমাদের দেশের মানুষ কম যান। শারীরিক সমস্যায় যত দ্রুত ডাক্তারের কাছে ছুটে যান, মনের রোগের জন্য খুব কমই যান। মনে করেন আমি কি পাগল নাকি যে, সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাব? আসলে শরীরের রোগের মতো মনেরও রোগ হয়। সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টও একজন ডাক্তার। নিজের প্রতি আরেকটু যত্নশীল হলেই এ-ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেতে পারে। পুরো সামাজিক কাঠামো আমরা চাইলেই পরিবর্তন করে ফেলতে পারব না। কিন্তু খুব সহজেই অমরা যা করতে পারি তা হলো নিজেকে পরিবর্তন। 

/তারা/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়