ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জ্বালানি সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে

সালেক সুফী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৬, ১ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১১:৪১, ১ মার্চ ২০২২
জ্বালানি সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে

রাজনীতির অশুভ প্রভাব এবং করোনা অতিমারীর অভিঘাত বাংলাদেশের টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা গভীর সঙ্কটে ফেলছে। পরিকল্পনার অভাব, নিজেদের গ্যাস সম্পদের প্রমাণিত মজুদ দ্রুত শেষ হতে থাকায় প্রাথমিক জ্বালানি সঙ্কটে ছিল বাংলাদেশে। এছাড়া বিপুল গ্যাস ঘাঁটির কারণে ২০০০ মেগাওয়াটের অধিক গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অলস পড়ে ছিল। আমদানিকৃত এলএনজিসহ সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৩০০০ এমএমসিএফডি। 

গেলো বছরের ডিসেম্বরে দেশীয় কোম্পানি সামিট গ্রুপের এএফএসরু কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায়, এলএনজি সরবরাহ ৭৫০ এমএফসিএফডি থেকে ৩৫০-৪০০ এমএমসিএফডি নেমে আসে। শীত মৌসুমে অপেক্ষাকৃত কম চাহিদার সময়েও সকল শ্রেণীর গ্যাস ব্যবহারকারী সঙ্কটে আছে।

কবে নাগাদ এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এদিকে রোজার সময়ও ঘনিয়ে আসছে। নিবিড় জলসেচ শুরু হয়েছে। এখনই প্রায় ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তরল জ্বালানি দিয়ে উৎপাদন হচ্ছে।

বিশ্ব বাজারে ক্রুড অয়েলের মূল্য এখন ১০০ মার্কিন ডলার/ব্যারেল। উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গাছে। স্পট মার্কেটে এলএনজি দাম আকাশচুম্বী থাকায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার সাবসিডিয়ারি কমানোর জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারের মূল্যবৃদ্ধির ভাবনায়। এমনিতেই করোনার অভিঘাত জনজীবনে এক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। এখনই গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে; সেটি হবে হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এমন অবস্থায় পরাশক্তি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করে সঙ্কটের বহুমুখী ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে।

২০০০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধান-উন্নয়নে ন্যূনতম অর্জন হয়নি। সরকার ৬০ টিসিএফ সমতুলনার উন্নতমানের কয়লা সম্পদ নিয়ে বসে আছে। ভৌগলিক কারণেই বাংলাদেশের অগভীর উপকূল অঞ্চল আমদানিকৃত জ্বালানির অবকাঠামো নির্মাণের জন্য উপযোগী নয়। চট্টগ্রাম, মংলা বা পায়রা বন্দরে মধ্যম ধারণক্ষমতার কয়লা বা এলএনজি ভেসেল ভিড়তে পারে না। একমাত্র মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন বন্দরটি ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ২০০ মিটার পোস্ট এবং ১৮ মিটার গভীর সংযোগ খাল দিয়ে গভীর সাগরে যুক্ত হলে কয়লা, এলএনজি ও এলপিজি আমদানি সহজ হবে।

সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা দীর্ঘদিন যাবত নিজেদের গ্যাস এবং কয়লা উত্তোলন করার তাগাদা দিয়ে আসলেও কাজের কাজটি হয়নি। কয়লা উত্তোলন আদৌ হবে বলে মনে হয় না। বিশ্ব দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

বাংলাদেশ নানা কারণে বিশ্ব জ্বালানি বাজার অস্থির থাকার কারণে উচ্চমূল্যে ক্রয় করে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করতে সক্ষম হবে না। প্রয়োজন, নিজস্ব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সকল উৎস উন্নয়ন করে মূল্য সকলের জন্য সহনীয় রাখা।

বাংলাদেশের আরো প্রয়োজন, একটি সুষম ও সুলভ জ্বালানি মিশ্রণ। না হলে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ

/এনএইচ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়