ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অভিশংসন আইন বিচার বিভাগের কফিনে শেষ পেরেক : ফখরুল

রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২৭ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অভিশংসন আইন বিচার বিভাগের কফিনে শেষ পেরেক : ফখরুল

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা (অভিশংসন আইন) সংসদের হাতে দেওয়াকে বিচার বিভাগের কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘সরকার আগেই বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এখন বিচারকদের সুচিন্তিত রায় যাতে তাদের বিপক্ষে না যায় সে জন্যই এ আইন করেছে। এর মাধ্যমে বিচারকদের চাকরির ভয় দেখিয়ে সহজেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’

বুধবার বিকেলে রাজধানী জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অভিশংসন আইনের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত ২০ দলীয় জোটের প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে গত ১৮ আগস্ট সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে সম্মতি দেয় মন্ত্রিসভা।

১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় উচ্চ আদালতের বিচারকদের পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও তাদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। কিন্তু ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। চতুর্থ সংশোধন বাতিল হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আমলে এক সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।

সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবটি সংসদে পাস হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক অপসারণের নিয়মটি বাদ পড়বে।

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা এমন একটি সংসদের হাতে দেওয়া হচ্ছে যেখানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই। তামাশার নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা ভোটে আর বাকিরা পাঁচ ভাগেরও কম ভোট পেয়ে সাংসদ হয়েছে। যেখানে গৃহপালিত বিরোধী দলই সংসদের মন্ত্রী।’

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সারা দেশ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এক হিসেবে করে দেখেছি, প্রায় ৫ লাখ মানুষ মামলায় পরে আছে। সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে চার্জশিট গঠন করে তাদেরকে নির্বাচন এবং রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চক্রান্ত করা হচ্ছে। এখনই এ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে না দাড়ালে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য আগেই জানতাম। সে জন্য মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করেছি। নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা করেনি। কারণ তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে  তারা ২০টি আসনও পাবে না।’

ক্ষমতাসীনরা ‘অস্থিরতায়’ ভুগছে, তাই জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে দাবি করে দলের এ জেষ্ঠ্য নেতা বলেন, ‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। আপনারা জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করবেন, আর জনগণ তামাশা দেখবে? এখন পাটকেল খেয়ে অস্থির হয়ে গেছেন।’

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে ভয়ংকর দানবীয় সরকার আখ্যা দিয়ে আপনারা গণবাহিনী সৃষ্টি করে তাকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন। সে জন্য সর্বহারা রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই সময়ে আপনাদের পত্রিকা গণকণ্ঠ নিষিদ্ধ করে সম্পাদক আল মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জনগণ এগুলো ভুলে যায়নি।’

৭২ থেকে ৭৫ সালে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের রাজনৈতিক অবস্থান কি ছিল তা জানতে চান মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বাকশাল কায়েমের সময়ে আপনার রাজনৈতিক অবস্থান কি ছিল? আপনি কি তা সমর্থন করেছিলেন, না বিরোধিতা করেছিলেন। প্রকাশ্যে জনগণকে আপনাদের ভূমিকা জানান। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে গালি দিয়ে পার পাবেন না।’

জনগণের সামনে ক্ষমতাসীনদের ‘মুখোশ’ খুলে গেছে দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, জনগণকে বোকা বানাবেন না। মুখোশ খুলে যাওয়ায় এখন বলছেন, উন্নয়ন আগে গণতন্ত্র পরে। ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছিল বলে দাবি করেন বিএনপি মুখপাত্র।

পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে এসেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যাদের কাছ থেকে সীমান্ত রক্ষা করবেন তাদের কাছেই প্রশিক্ষণ নিতে হবে।’

বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়, মানুষের ‘ভোটের অধিকার’ ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশকে ‘বাঁচাতে’  জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তিনি।

সরকারকে অবৈধ ও অনৈতিক আখ্যা দিয়ে ক্ষমসীনদের বিরুদ্ধে দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের অভিযোগ করেন বিএনপির এ মুখপাত্র। এ সময় কুইক রেন্টালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এর উদ্দেশ্য তারা জনগণের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারি করবে আর বিদেশে টাকা পাঠাবে।’

বিএনপির আন্দোলনের সক্ষমতা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের উপহাসের জবাব দেন মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার গদি ছেড়ে দিয়ে র‌্যাব পুলিশ ছাড়া রাজপথে আসেন, দেখা যাবে। আমরা সংঘাত চাই না। সংঘাত আপনাদের সৃষ্টি।’

তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ‘ভুল’ বুঝতে পেরেছিল। সে জন্য তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন হিসেবে মন্তব্য করে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তারা সেই কথা রাখেনি।

এ সময় আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহনমূলকের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, অর্থনৈদিতক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, যুব  সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক তাসনিম আলম, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করে ঢাকা মাহনগর  বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৪/রেজা/শামসুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়