ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নারী কোটা পূরণের শর্ত শিথিল করে গণপ্রতিনিধিত্ব অ্যাক্টের উদ্যোগ

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
নারী কোটা পূরণের শর্ত শিথিল করে গণপ্রতিনিধিত্ব অ্যাক্টের উদ্যোগ

রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব পূরণের শর্ত আর থাকছে না।

সংগঠনের সব পর্যায়ে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ ভাগ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার শর্তে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নিবন্ধন পেয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

এই পরিস্থিতিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ অনুচ্ছেদটি তুলে দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক দলের জন্য রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই প্রস্তাবিত খসড়া আইনে চলতি বছরের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের শর্ত তুলে দেওয়া হচ্ছে। নতুন এই আইনে যুক্ত হতে পারে আরও শর্তাবলী।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আজ নির্বাচন কমিশনের সভায় বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত আলাদা আইন প্রণয়নের কাজ চলছে।’

তিনি বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে যে বিধান বা শর্তগুলো ছিলো সেগুলো নতুন আইনে চলে আসবে। আলোচনা করে নতুন আইনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তাবলী সংযোজন বা বিয়োজন হবে।’

আগামীতে পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। সরাসরি বা চিঠি অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে বলে জানান সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর।

২০০৮ সালে নিবন্ধনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোতে সর্বোচ্চ নারী নেতৃত্বের হার ছিলো শতকরা ১০ ভাগ। আইনে শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত ১২ বছরে অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। গত ১২ বছরে রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়ার হার দশ ভাগেরও নিচে। ফলে, ইসির বেঁধে দেওয়া বাকি সময়ের মধ্যে আরও ১২ থেকে ১৫ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা অসম্ভব ব্যাপার।

বিদ্যমান আরপিওতে বলা আছে- ‘নিবন্ধনে আগ্রহী রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট বিধান থাকতে হবে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ ভাগ সদস্যপদ মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। যা ২০২০ সালের মধ্যে অর্জন করা হবে।’

ইসি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কমিটিতে ২৬ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন। বিএনপির সব পর্যায়ের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন। সেই তুলনায় এগিয়ে থাকা জাতীয় পার্টি-জাপার সব স্তরের কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রেখেছে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে নারী নেতৃত্বের হার আরও অনেক কম। যদিও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র গণফ্রন্ট দাবি করেছে, দলটির সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন।

তবে ইসি সেটি এখনো যাচাই করে দেখেনি। অন্যান্য বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলো চলতি বছরের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব শর্ত পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আইনের খসড়া প্রণয়নের সাথে সম্পৃক্ত ইসির একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত ১১ বছরের মধ্যে যেখানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব শর্ত পূরণ করতে পারেনি, সেখানে চলতি বছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রায় অসম্ভব। এই বাস্তবতায় আইনের ধারাটি বহাল থাকলে শর্ত ভঙ্গের জন্য বেশিরভাগ দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে নতুবা শর্ত শিথিল করতে হবে।

 এদিকে, অত্যন্ত গোপনীয়তায় রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করছে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্ব সোমবার (১ জুন) বিকালে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় খসড়া আইনটি উপস্থাপন করা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৬৩ তম কমিশন সভার এজেন্ডায় ক. গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ২০২০ এর খসড়া বিল অনুমোদন; খ. রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন প্রণয়ন; গ. নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণীত আইন বাংলা প্রণয়ন; ঘ. জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের স্থগিত নির্বাচনের উপর আলোচনার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; ঙ. জাতীয় সংসদের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন আইন ২০২০ এবং চ. বিবিধ বিষয় রাখা হয়।

সিইসির সভাপতিত্বে চার কমিশনারের উপস্থিতিতে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় বেশকিছু এজেন্ডাভুক্ত বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানায় কমিশন সূত্র।


ঢাকা/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়