ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে এবার মাঠে আ.লীগ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে এবার মাঠে আ.লীগ

করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে এবার মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দলীয়ভাবে এ ব্যাপারে তৎপরতাও শুরু করেছে দলটি।

এরই মধ্যে দলীয় প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ দফা নির্দেশ দলের প্রতিটি ইউনিটের কাছে পৌঁছে দিয়েছে আওয়ামী লীগের দপ্তর। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তাদের।

দলীয় নেতাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর দলের সব পর্যায়ে এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তা পেয়ে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে প্রায় সব ইউনিট। এর অংশ হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীরা জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতন করে তুলবেন। সকল ক্ষেত্রে এটা যাতে বাস্তবায়িত হয় তার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন।

নির্দেশনাগুলো হলো : অফিস-আদালত, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সকল ধরনের কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করা। গণপরিবহনে চলাচলের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। জনসম্মুখে সবসময় মাস্ক পরিধান করা এবং সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা মেনে চলা। দলীয় নেতা-কর্মীরাও ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এবং তা প্রতিপালনের জন্য জনগণকে সচেতন করে তুলবেন। সকল ক্ষেত্রে এটা যাতে বাস্তবায়িত হয় তার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড- পরিচালনা করবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা অঞ্চলভিত্তিক তদারকির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণেও ভূমিকা রাখবেন। আপদকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় সেবা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনপ্রতিনিধিরা অসহায়-দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুধবার (৩ জুন) সন্ধ্যা থেকেই তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন লিফলেট বিতরনের। সারা দেশে একযোগে এই কর্মকাণ্ড আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করতে যাচ্ছে দলটি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, নির্দেশনা পাওয়ার পরই তারা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমে গেছেন। উত্তরের প্রত্যেক ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী তারা মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করছেন, তাদের বোঝাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করবেন।

অভিন্ন কথা জানালেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে সর্বাত্মকভাবে মাঠে নেমেছি। সেই সঙ্গে মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেজন্য প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন নেতাকর্মীরা।’

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মূলত মানুষকে সচেতন করতে কাজ করবেন। কারণ এই মুহূর্তে সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি জরুরী। তারা জনগণকে বলবেন, বিশেষ প্রয়োজন না হলে গণ পরিবহন পরিহার করতে। যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে সরকারি নির্দেশনা মেনে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরিবহনে উঠতে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নিজ শহরের বাইরে না যেতে। বাড়ির বাইরে অবস্থানকালীন বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে। ব্যবহৃত মাস্ক একবার ব্যবহারযোগ্য হলে তা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলে দিতে অথবা পুণঃব্যবহার্য হলে খুলে ফেলার পরপরই ধুয়ে ফেলতে।

এছাড়া অপ্রয়োজনে মার্কেট বা শপিং মলে যাতায়াত না করতে। অন্য কারও হাত বা গায়ের সংস্পর্শে না আসার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে। বাইরে ব্যবহার করা স্যান্ডেল কোনো অবস্থাতেই ঘরের ভেতরে না আনতে। অফিসে অবস্থানকালীন নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে। কাজের জায়গা নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখতে। ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক কখনো সরাসরি শরীরে স্প্রে না করতে। যেখানে সেখানে থুথু, কফ বা সর্দি ফেলা থেকে বিরত থাকতে। যে কোনো জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে যত্ন নিতে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। অসুস্থতা গোপন করে অন্যদের ঝুঁকিতে না ফেলতে। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিসু বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকতে।

এ ছাড়া কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলা এবং বাজার থেকে আনা শাক-সবজি ও কাঁচা জিনিস ভালোভাবে ধুয়ে সংরক্ষণ করা, বাইরের পলিথিন বা অন্যান্য ব্যাগ জমিয়ে না রেখে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া। চায়ের দোকানে যাওয়া অথবা অন্য কোনো অজুহাতে বা কৌতূহলী হয়ে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। ব্যাংক নোটে বা টাকায় নানা ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি থাকতে পারে, তাই টাকা লেনদেনের পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলা। নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস বাইরে থেকে ফিরে যথাসম্ভব পরিষ্কার করা ও শিশুদের নাগালের বাইরে রাখার মতো বিষয়গুলোতে জনগণকে সচেতন করা। এর সবই কর্মসূচিতে রাখছে আওয়ামী লীগ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই মানুষকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। জীবন জীবিকার স্বার্থে এখন লকডাউন তুলে দেয়ার এই মুহূর্তে সবচেয়ে যেটা জরুরী সেটি হচ্ছে সচেতনভাবে জীবনযাপন করা। এই ধরনের জীবনযাত্রা আমাদের সুরক্ষিত রাখবে। এরই মধ্যে সরকার এই বিষয়ে বিস্তর কর্মসূচি নিয়েছে। প্রশাসনের পাশপাশি এখন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষকে সচেতন করার সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিধি যাতে জনগণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মানে সেই বিষয়ে দৃষ্টি রাখবে।’

 

ঢাকা/পারভেজ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়