ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বছর পার জাপার

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫২, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:০৯, ১২ জুলাই ২০২১
ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বছর পার জাপার

জাতীয় পার্টি (জাপা)’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মৃত‌্যুবরণ করেছেন ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। এরপর গড়িয়ে গেছে দেড়বছরেরও বেশি সময়।  এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ বর্তমানে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করলেও পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

দলের কর্তৃত্ব-নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদেরের সৃষ্ট দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনেও মেটেনি।  উপরন্তু রওশনপুত্র রাহগির আল মাহে সাদ এরশাদ ও এরিক এরশাদের মা বিদিশার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে জাপার ব্যানারে আলাদা সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। যা গত একবছরের আলোচিত ঘটনা।  তাদের এই আলাদা তৎপরতা জাপায় জিএম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে বলেও মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।  

বছরের মাঝামাঝি করোনাকালে ত্রাণ বিতরণকালে রংপুর জেলা নেতাদের হাতে এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহে সাদ এরশাদ ও তার স্ত্রীকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় আলোচনার ঝড় ওঠে।  সংবাদ সম্মেলন করে সাদ ও তার স্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের শাস্তি দাবি করেছেন। যদিও এই ব্যাপারে পার্টির চেয়ারম্যান নীরব ছিলেন বলে রওশনপন্থী নেতাদের অভিযোগ রয়েছে। তারা এই ঘটনায় কাকরাইলে জাপা কার্যালয়ে জিএম কাদেরের কাছে বিচার দাবি করে প্রতিবাদও করেছেন।

তবে, একবছর করোনার ঝুঁকি নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাপাকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে জিএম কাদের কঠিন পরিশ্রম করছেন বলে জানিয়েছেন দলের কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘২০২০ সাল কেটে যাচ্ছে করোনায়। করোনাকালেও জাপার অগ্রযাত্রার ওপর আঘাত আসেনি, তা বলার সুযোগ নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো জাপাও প্রতিকূল পরিস্থিতি পার করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান নিজেই করোনার ঝুঁকি নিয়ে ৮/৯ মাস ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, এখনো করে যাচ্ছেন। জাপাকে একটা সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা তিনি করছেন, তা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’

প্রতিকূল পরিবেশেও একবছরে লক্ষ‌্যমাত্রা অর্জনে জাপা আশাতীতভাবে সফল হয়েছে  বলে দাবি করেছেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘ভেদাভেদ ভুলে দলের সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ।  কারও দ্বিমত নেই। সব নেতাকর্মী জনগণের কল্যাণে ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।’

জিএম কাদের বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো—দলের মধ্যে নতুন একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কার্যক্রম চলছে। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোও সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয়।  তারাও কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক কাজে গ্রাম পর্যন্ত যাচ্ছে। দলের মধ্যে এই একবছরে চাঙাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।  দল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়েছে।’    

একবছরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘সারাদেশে সাধ‌্য অনুযায়ী স্বাস্থ্যসামগ্রী, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, টেলিমেডিসিন সেবা চালু, করোনায় বেকার নেতাকর্মীদের সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানান কর্মসূচি পালন করেছি।  সরকারের পাশাপাশি আমরাও জনকল্যাণে কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘সংসদের বাইরে আমরা একবছর সক্রিয় ছিলাম। জনগণের যেকোনো সমস্যার কথা তুলে ধরেছি।  সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি জনগণের স্বার্থে যেখানে সরকারকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন, সেই সহযোগিতাও করেছি।’

রওশন-কাদের দ্বন্দ্ব মেটেনি একবছরেও 
জাপার সবচেয়ে বড় সমস্যা এরশাদ পরিবারের অনৈক্য। এরশাদের অবর্তমানে এই এক বছরে এক হতে পারেননি বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের। দলের নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব নিয়ে দু’জনের কোন্দল-গ্রুপিং এখনও জিইয়ে আছে। আর এরই প্রভাব পড়েছে দলের নেতাকর্মীদের ওপরও।

দলের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব থাকলেও এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে রওশন ও জিএম কাদেরকে একত্রে দেখা গেছে। রওশনের বাসায় এরশাদের দোয়া মাহফিলে অংশ নেন জিএম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা। তবে, এই অনুষ্ঠান ছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি রওশন।  বরং এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহে সাদের নেতৃত্বে রওশনপন্থীদের মাঝে মধ্যে পৃথক সাংগঠনিক কর্মসূচি করতে দেখা গেছে।  কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়ায় রওশনপন্থী এসব নেতার অবস্থান এখন জিএম কাদেরের বিরুদ্ধেই।  তারাই সাদ এরশাদকে সামনে রেখে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।  রওশনের সঙ্গে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে যেকোনো সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন জিএম কাদের।  অদূর ভবিষ্যতে রওশন এরশাদ কিংবা এরশাদপুত্র সাদ জাপার হাল ধরতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।  আর এতে এরশাদের ছোট ছেলে এরিক এরশাদ ও তার মা বিদিশাকেও একই ছাতায় দেখা যেতে পারে।

একক সিদ্ধান্তে দল চালান জিএম কাদের
এরশাদের মৃত্যুর পর দলীয় কাউন্সিলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জিএম কাদের। অভিযোগ রয়েছে, শুরুতেই একক সিদ্ধান্তে তিনি দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা ও এরশাদের বিশ্বস্ত সহচর প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সাত্তার, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু, রেজাউল করীমসহ অনেক নেতাকেই কমিটি থেকে বাদ দেন। কথা দিয়েও নাকি কমিটিতে রাখেননি এরশাদের আরেক বিশ্বস্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যরিস্টার দিলারা খন্দকারকে। এছাড়া, একক সিদ্ধান্তে দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সরিয়ে মহাসচিব হিসেবে আত্মীয় জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে নিযুক্ত করেন জিএম কাদের। 

একক সিদ্ধান্তে দল চালানোর অভিযোগে ২০২০ সালে এরশাদের বিশ্বস্ত সহচর মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা দল ছেড়ে চলে যান।  দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় জিএম কাদেরের এসব কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় মুখর হলেও তার একক নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়টি সংশোধন করা হচ্ছে না। 

দল থেকে বাদ পড়া সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার বলেন, ‘জাপা এখন আর এরশাদের দল নেই। জিএম কাদেরের নিজস্ব দলে পরিণত হয়েছে। এরশাদ যাদের ভালোবাসতেন, সেই পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তিনি তার ইচ্ছামতো বিতর্কিতদের নিয়ে জাপা পরিচালনা করছেন। এরশাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন জিএম কাদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপার প্রার্থীরা এখন পাঁচ শ, এক হাজার ভোট পান। এতে পার্টির জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক ভিত্তি সম্পর্কে সহজে বোঝা যায়।’

জেলা-উপজেলা, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি নেই
এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাপার কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জিএম কাদের।  কাউন্সিলের প্রায় একবছর হতে চললেও তিনি দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ দেশের তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ জেলা-উপজেলা এবং অধিকাংশ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন করতে পারেননি।  

এরশাদ ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সভাপতি ও জহিরুল আলম রুবেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯৯ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা মহানগর দক্ষিণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ এই কমিটির বয়স পাঁচ বছর হতে চলেছে। নতুন কোনো কমিটি করতে পারেননি জিএম কাদের। একইভাবে ২০১৭ সালের ৫ মে প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সল চিশতীকে সভাপতি ও কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৬১ সদস্যের ঢাকা মহানগর উত্তর জাপার কমিটি গঠন করা হয়। এরও মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে।  এভাবে দেশের অধিকাংশ জেলা ও উপজেলার কমিটির মেয়াদ নেই।

এছাড়া, জাতীয় যুব সংহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৬ আগস্ট। গত ২৮ জুলাই সাংস্কৃতিক পার্টির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘদিন নতুন কমিটি হয়নি।  সম্প্রতি নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সৈনিক পার্টির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় তরুণ পার্টির আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ আগস্ট। সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে শ্রমিক পার্টির মেয়াদ শেষ হয়েছে আড়াই বছর আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৪ সেপ্টেম্বর। জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছর আগে ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর। সম্মেলনের জন্য সম্প্রতি আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে।  জাতীয় তাঁতী পার্টির আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল।  এছাড়া, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পার্টি ও পল্লীবন্ধু পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই।

তবে এসব সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন জিএম কাদের।  তিনি মেয়াদ উত্তীর্ণ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করার চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অতিরিক্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি গঠন করেছেন। তাদের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে এসব জেলা-উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ করছেন।   

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোন্দল
জাপার নেতাকর্মীদের অভিযোগ—পার্টিতে এখন বড় সমস্যা পদ নিয়ে নেতায়-নেতায় কোন্দল। এই কোন্দল দলের কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলায় পর্যন্ত গড়িয়েছে। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার একবছরেও জিএম কাদের নেতাকর্মীর এই কোন্দল দূর করে নেতাকর্মীদের এক কাতারে আনতে পারেননি।  

তবে, পার্টিতে কোনো গ্রুপিং নেই বলে দাবি করেছেন দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তাদের নেতৃত্বে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে জাপা অনেক বেশি শক্তিশালী। ’ 

নির্বাচনে ভরাডুবি  

২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে অংশ নেয় জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি।  কিন্তু কোনো নির্বাচনে জিততে পারেননি দলের প্রার্থীরা।

২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচনে অংশ নেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন।  ভোট পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার ৫৯৩।

উত্তরসিটিতে মনোয়ন বাতিল হয় জাতীয় পার্টিতে নবাগত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম।  পরে আর জাপার হয়ে আর কেউ নির্বাচন করতে পারেননি।

২০২০ সালের ২২ মার্চ মেয়র তাপসের ছেড়ে যাওয়া ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাপার প্রার্থী হাজি মো. শাহজাহান (লাঙ্গল) পান মাত্র ৯৭ ভোট।

২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন। জাতীয় পার্টির মো. নাসির উদ্দিন সরকার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৩২৫ ভোট।

২০২০ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচন। জাতীয় পার্টির মোকছুল আলম (লাঙ্গল) এক হাজার ২৫১ ভোট, একইভাবে যশোর-৬ উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান লাঙল প্রতীক নিয়ে এক হাজার ৬৭৮, ঢাকা-৪ আসনে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর পেয়েছেন ৪১৩ ভোট। যদিও তাদের সবাই নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।

এই প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, ‘আমরা গত একবছরে সব নির্বাচনে যেখানে যতটুকু সম্ভব অংশ নিয়ে প্রতিযোগিতা করেছি। জয়-পরাজয় যাই হোক, বিভিন্ন আসনের উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউনিয়নসহ স্থানীয় করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।  নেতাকর্মীদের মধ্যে এই নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে।’

অর্থ সংকটে জাপা
২০২০ সাল জাপার কেটেছে অর্থ সংকটে। একবছরে দল পরিচালনায় অর্থ সংকটে পড়েছেন জিএম কাদের। চাঁদা নির্ধারণ করলেও অনেকেই দেননি। ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। যে কারণে দলের কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন, কেন্দ্রীয়ভাবে ত্রাণ তৎপরতাও নেই।  টাকার অভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচিও চালাতে পারছেন না জিএম কাদের। অর্থ সংকটে শুরুতেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে করোনা মোকাবিলার ত্রাণ কার্যক্রম।  এছাড়া অর্থাভাবে এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনসহ বেশিরভাগ সাংগঠনিক কর্মসূচিই সীমিত পরিসরে করতে হয়েছে।  

নতুনদের যোগদান: জাপায় প্রাণসঞ্চার
২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মেজর খালেদসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। অভিমানে দল ছেড়ে চলে গেছেন কেউ কেউ।  তবে, এ সময়ে জাতীয় পার্টিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে যোগ দিয়েছেন অনেকেই।  জিএম কাদেরের নেতৃত্ব জাপায় যোগ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।  সামনে আরও নতুন নতুন লোক জাতীয় পার্টিতে আসবেন বলেও জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান।  পাশাপাশি তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করতে বিভাগীয় পর্যায়ে ৮জনকে অতিরিক্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  
এই প্রসঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, ‘এরশাদের ভাই হিসেবে জিএম কাদেরের সারাদেশে একটা ক্লিন ইমেজ রয়েছে। তার নেতৃত্বের প্রতি তাকিয়ে আছে দেশের মানুষ। প্রত্যাশা করছে, জাপা আগামীতে সরকার গঠন করুক।  আমরা প্রতিটি বিভাগে সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। সংগঠন শক্তিশালী করে প্রতিটি জেলা-উপজেলাকে জাপা দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।’

জাপাকে জনগণ বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি ভাবছে বলে মনে করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘বড় দলগুলোর ব্যর্থতা, অতীতে আমাদের রাষ্ট্রপরিচালনার সফলতা ও বর্তমানে কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে জাপাকে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভাবছে জনগণ।  অনেকেই দলে যোগ দিতে চান। সাধারণ মানুষও চায় জাপা ঘুরে দাঁড়াক, শক্তিশালী হয়ে উঠুক। আমরা জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ‌্যে কাজ করছি। ’ জাপা আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রাইজিংবিডি/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়