ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জিএম কাদেরকে আলটিমেটাম দিলেন রওশন এরশাদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২২, ২ জুলাই ২০২২   আপডেট: ২১:৪৩, ২ জুলাই ২০২২
জিএম কাদেরকে আলটিমেটাম দিলেন রওশন এরশাদ

জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ

দলছুট, বাদ পড়া ও ত‌্যাগী নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে এনে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে দলের চেয়ারম‌্যান জিএম কাদেরের প্রতি আলটিমেটাম দিয়েছেন দলটির অন‌্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। অন‌্যথায়, ভবিষ‌্যতে জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরবেন তিনি।

শনিবার (২ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ আলটিমেটাম দেন তিনি।

পরে দলের সিনিয়র নেতারা একে একে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দল পরিচালনায় ব‌্যর্থতার অভিযোগ তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় পার্টিকে বাঁচাতে রওশন এরশাদকে দলের হাল ধরার অনুরোধ জানান।

জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস‌্য ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালীর কোরআন তেলাওয়াত ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এ মতবিনিময় সভা। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে, প্রত‌্যাশা করে তার জন‌্য দোয়া কামনা করেন ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী। এর পর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব‌্য রাখেন বেগম রওশন এরশাদ।

দল পরিচালনায় জিএম কাদেরের ব‌্যর্থতার জন‌্য অসন্তোষ প্রকাশ করে রওশন এরশাদ বলেন, ‘কী আর বলব, এরশাদের রেখে যাওয়া শক্তিশালী জাপা আজ দুর্বল। এরকম দুর্বল হলে আমরা রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবে না। দলকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমকক্ষ বানাতে হবে।’

জিএম কাদেরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যাদের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। যারা চলে গেছে, তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। অনেক ভালো ভালো নেতাকর্মী দলের বাইরে আছে, তাদেরকে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দলে টানতে হবে। শাহ মোয়াজ্জেম, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অনেক সিনিয়র নেতা পার্টি ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’

জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ছয় মাস আমি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পার্টির কেউ খোঁজ নেয়নি আমার। আমি সবার খোঁজ নিয়েছি। অথচ, যাদেরকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারাই আমার নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন। মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া-প্রার্থনা করেছে।’

দলের নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘আজকে যারা এই সভায় উপস্থিত হয়েছেন, তারাই পার্টির প্রকৃত নেতাকর্মী। আজ পল্লীবন্ধু এরশাদ নেই। উনি থাকলে পার্টি অন্যরকম হতো। পার্টি শক্তিশালী করার প্রয়োজনে যা যা করার দরকার তাই করব। এরশাদ তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে।’

রওশন এরশাদ বলেন, ‘বিমানবন্দরে আমি আসার দিন এত মানুষ আমাকে যে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তা দেখে আমার দুচোখে জল এসে গেছে।’

প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্মরণ করে রওশন এরশাদ বলেন, ‘এরশাদ ওপারে ভালো আছেন। উনি জান্নাতবাসী হবেন। কারণ, তিনি ইসলামের খাদেম ছিলেন। ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছিলেন। পবিত্র শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেছিলেন। মসজিদ-মন্দিরসহ সকল উপাসনালয়ের পানি ও বিদুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন।’

রওশনকে দলের হাল ধরার আহ্বান:
মতবিনিময় সভায় দলের নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ধরেন। দল বাঁচাতে রওশন এরশাদকে দলের হাল ধরার আহ্বান জানান তারা।

জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘আপনার নামের পাশে এরশাদ আছে। বাংলার মানুষ আপনাকে নেতৃত্ব দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি আজ সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। যে লোক কোনোদিন জেল খাটেনি, রাজপথে এরশাদের মুক্তির আন্দোলন করেনি, তার কাছে এরশাদের জাতীয় পার্টি নিরাপদ নয়।’

সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘পার্টির কর্মীরা আজ অসহায়। তাদের খোঁজ আজ কেউ নেয় না। আপনাকে (রওশন এরশাদ) দলের দায়িত্ব নিতে হবে। পার্টির লাখো কর্মী আপনার অপেক্ষায় আছে।’

জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের আজ খুব দুঃসময় চলছে। আপনি (রওশন) যখন অসুস্থ, তখন আপনার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করলে আমাকে বাধা দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। আপনি যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাইল্যান্ডে যান, তার পরের দিন তারা কক্সবাজারে দলবেঁধে আমোদ-ফূর্তি করেছে।’ রওশন এরশাদের জীবদ্দশায় সাদ এরশাদকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান করার দাবি জানান তিনি।

দলের ভাইস চেয়ারম‌্যান ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে শুধুই বিশৃঙ্খলা, দ্বিধাবিভক্তি। কেন্দ্রে শুধু পদ আমদানি হয়। মুরগির মতো দলীয় পদ বিক্রি হচ্ছে।’

সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘আজকে যারা আপনার (রওশন) ডাকে সাড়া দেয়নি, তারা জাতীয় পার্টি করে না। তারা আপনাকে চালেঞ্জ করেছে।  কাউন্সিলে কথা ছিল আপনার দলীয় পতাকা আপনি ব্যবহার করবেন। সকল সভায় সভাপতিত্ব করবেন আপনি। আপনার পরামর্শে দল পরিচালিত হবে। কোনো কথা রাখা হয়নি।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রওশন এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি (সাদ এরশাদ), রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ, জিএম কাদেরের ভগ্নিপতি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, নরুল ইসলাম নুরু, ইকবাল হোসেন রাজু, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, আশরাফ সিদ্দিকী প্রমুখ।

দীর্ঘ ১০ মাসের বেশি সময় অসুস্থ থাকার পরে সুস্থ হয়ে দেশে আসার পর এই প্রথম নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ দলের সাংসদ ও শীর্ষ নেতাদের দাওয়াত করা হলেও তাদের অধিকাংশই আসেননি।

নঈমুদ্দীন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়