ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মানবাধিকারের কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না: ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২  
মানবাধিকারের কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না: ফখরুল

‘যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বলছেন, যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কেউ চায় না যুদ্ধ, কেউ চায় না নিষেধাজ্ঞা। প্রধানমন্ত্রীর মুখে আর যাইহোক, মানবাধিকারের কথা মানায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিদেশ গিয়ে এসব কথা বলছেন। তিনি মার্কিন দেশে গিয়ে বলছেন, যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কেউ চায় না যুদ্ধ পৃথিবীতে, কেউ চায় না নিষেধাজ্ঞা। অথচ তার মুখে মানায় না। তার দলের লোকজন এবং সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশে হত্যার সঙ্গে জড়িত। তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। ইতোমধ্যে গুম হয়েছে ৬ শতাধিক মানুষ। যাদের মধ্যে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বহু বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শত শত মানুষ তারা থানায় নিয়ে গিয়ে মেরে পঙ্গু করে দিয়েছে। সহস্রাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে। এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। এই কারণে আজকে একটা অত্যন্ত এলিট ফোর্স র‌্যাব অপরাধ দমনের নামে এই সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করার কারণে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়েছে। তাদের সাত জন কর্মকর্তার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। এটা যে দেশের জন্য একটা মান-সম্মানের ব্যাপার, তা নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই।’

তিনি বলেন, ‘সরকারই এসব কর্মকাণ্ডের নির্দেশদাতা। তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে সবার আগে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে জনগণ নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ বলে দিয়েছে, এই সরকারের আর দরকার নেই। বহু হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, মুন্সিগঞ্জে যুবদল নেতা শাওনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সারাদেশের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের এই আন্দোলন, এই সংগ্রাম, এই আত্মদান, এই রক্তপাত– এটা বিএনপির জন্য নয়, পুরো জাতির জন্যে। আজকে সমস্ত জাতি একটা মহাসংকটে পড়েছে। এ সরকার গণমাধ্যমকে এমন করে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে যে, পত্র-পত্রিকা-টেলিভিশনগুলো কেউ সাহস করে সত্য কথাটা বলতে পারে না। অথচ শাওনের ডেথ সার্টিফিকেটে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, ‘মেসিভ ব্রেইন ইনজুরি ডিউ টু গান শট’। 

ফখরুল বলেন, ‘সারাদেশে আমরা আন্দোলন করছি জনগণের সমস্যা নিয়ে। এই আন্দোলনে ইতোমধ্যে আমাদের চার জন তরুণ যুবক প্রাণ দিয়েছেন। মুন্সিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত যুবদলকর্মী শহীদুল ইসলাম শাওনের আট মাসের একটা বাচ্চা, স্ত্রী, বাবা-মাকে বাঁচিয়ে রাখতে অটো চালিয়ে জীবনধারণ করতেন। এখন কী হবে এই পরিবারটির?’

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার সবকিছুর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও বিকৃত করেছে। করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিল তাদের স্বাধীনতা ও তাদের স্বাধিকারের জন্য। সেই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছেন, যাদের অবদান আছে, আত্মত্যাগ আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। এ সরকার তাদের কথা কোথাও উল্লেখ করে না। এমনকি, যেই শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, তার নাম একবারও উল্লেখ করা হয় না। বরঞ্চ তাকে কী করে খাটো করা যাবে, কী করে তাকে নির্মূল করা যায়; সেজন্য বিভিন্ন রকমের ইতিহাস সরকার রচনা করছে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সেটা বলছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে পুরস্কার বিতরণীয় উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিজয়ী প্রতিযোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় স্মারক ক্রেস্ট ও সনদপত্র। এসময় বিএনপি মহাসচিব একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার অবদানের কথাগুলো তুলে ধরে তাকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেন। 

রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, রচনা প্রতিযোগিতায় শিশু শাখার বিজয়ী সাজিদ জাহিদ বক্তব্য রাখেন। 

অনুষ্ঠানে বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সোহরাব উদ্দিন, শামসুজ্জোহা মেহেদি, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মেয়া/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়