ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অবশ্যপ্রাপ্য প্রশংসাও গণমাধ্যমে আসুক, অনুরোধ আওয়ামী লীগের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১৭ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৬:৪০, ১৭ নভেম্বর ২০২২
অবশ্যপ্রাপ্য প্রশংসাও গণমাধ্যমে আসুক, অনুরোধ আওয়ামী লীগের

গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের। ছবি: রাইজিংবিডি

সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি উন্নয়ন, অর্জন এবং বিশ্বসংস্থাগুলোর প্রশংসাও গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে আসুক, এ অনুরোধ জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

গণমাধ্যমকে উদ্যেশ্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছে আমাদের ডিউটা চাই।’

‘আমরা চাই পূর্ণিমার আলোয় যেটা ঝলমল সেটাকে আলো হিসেবে দেখুন। আমাবশ্যার অন্ধকারকে আপনি যদি আলো ভাবেন সেটাতো আলো নয়। আমরা এই কথাটাই বলছি।”

বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাতে রাজধানীতে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ডিউ কাভারেজ চাই। আমরা বেশি চাই না। আমরা এটা বলি না বিরোধীদলের কাভারেজ দেবেন না। আমরা শক্তিশালী বিরোধীদল চাই।  কারণ গণতন্ত্র তো এক চাকার সাইকেল না।’

বৈশ্বিক সংকটে সরকার মানুষকে ভালো রাখতে শেখ হাসিনার সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজকে বিশ্ব সংকটে বাংলাদেশের যে বাস্তবতা, এই বাস্তবতা তিনি মেনে চলছেন। আমাদের আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানুষ কষ্টে আছে। গরীব মানুষ, স্বল্প বিত্ত, স্বল্প আয়ের মানুষ সত্যি কষ্টে আছে। এই বিক্ষুদ্ধ মানুষগুলো ধৈর্য্য ধরে আছে। তারা যে কোনো দলের জনসমাগম, ঢল, স্রোত; এসবের সঙ্গে মিশে গেছে তা নয়।’

‘বিট্রেনে কস্ট অব লিভিং এতো বেড়ে গেছে যে ৪০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ব্রিটেনের জনগণ অ্যাকশন চায়, তারা সরকারের পতন চায়নি। আমেরিকায় একই অবস্থা। সেখানে বাইডেনের পদত্যাগ তো কেউ দাবি করে না। রেকর্ড সেখানে হয়ে গেছে কস্ট অব লিভিং। একটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে আমরা তার মূল্য দিচ্ছি। আমাদের অবস্থান যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে। আমরা এর ভুক্তভোগী।”

বিএনপিতে গণতন্ত্র নেই, দলটি দেশের গণতন্ত্র কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবে সেই প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যাদের দলের গণতন্ত্র নেই তারা দেশে গণতন্ত্র আনবে কি করে? তাদের চেতনায় গণতন্ত্র থাকলে ঘরে গণতন্ত্র থাকতো। আমাদের নিয়মিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক, প্রতি মাসে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা হয়।

‘ফখরুল সাহেবের কি মনে আছে তাদের কবে কাউন্সিল হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দুটো হয়ে গেছে। তাকে একটু জিজ্ঞেসা করুন, সম্মেলনটা কবে হয়েছে? কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা কবে হয়েছে।  লা মেরিডিয়ানে পাঁচশ মার্কা জাম্বু কমিটির একটা মিটিং বোধহয় হয়েছিলো, তা মানুষ ভুলে গেছে।”

তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করুক। আওয়ামী লীগকে নেত্রী (শেখ হাসিনা) বলে দিয়েছেন, তোমরা বাধা দেবে না। আমরা কাউন্টার করবো না। এখন পর্যন্ত কোনোটার কাউন্টার করিনি।’

‘আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সম্মেলন করছে। আমরা কাউন্টার প্রোগ্রাম করছি না। আমরা জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আমাদের উপজেলা পর্যন্ত কাউন্সিল করছি। আমাদের ভুল-ত্রুটি ধরতে পারেন, তবে এদেশে আমরাই একমাত্র দল যারা গণতন্ত্রের চর্চা করি। আমাদের ওয়ার্ড থেকে জেলা রেগুলার সম্মেলন হচ্ছে।’

এ সময় প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের তিনি বলেন, ‘কেন ৭ ধারা তুলে দিলো গঠনতন্ত্র থেকে বিএনপি।  সেখানে কি আছে? দণ্ডিত ব্যক্তি দলীয় প্রধান হতে পারবে না।’

এ সময় সরকারে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একটা দল এতদিন ক্ষমতায় ছিলো। কি দেখাবে তারা। উন্নয়নের একটা দৃশ্যমান কিছু তারা কি জনগণকে দেখাতে পারবে। পদ্মা সেতু হয়েছে। সামনে মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা থেতে এলেঙ্গা ৬ লেন রাস্তা প্রস্তুত হয়ে আছে। আরো অনেক কাজ প্রস্তুত হচ্ছে।

বিএনপি সরকারের শাসনামলে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথাও তোলেন ওবায়দুল কাদের।

‘বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমান কাদের সৃষ্টি আপনারা ভুলে গেছেন। প্রকাশ্যে মিছিল করেছে অস্ত্র নিয়ে। আমরা এদের বিরুদ্ধে কথা বলি। এদের বিরুদ্ধে আমরা সরব। এটা আওয়ামী লীগের রাজনীতি।”

এ সময় তিনি বলেন, কৌশলগত কারণে অনেক ধরনের ঐক্য আতাত এদেশে হয়। সেখানে নির্বাচনি রাজনীতির খেলা। আমাদের বিরুদ্ধে একটা জোট হচ্ছে। আমাদেরও এখানে একটা জোট করতে হবে। এসব আছে, এখন আপনি যদি বলেন একেবারে ডিভাইসি হয়ে যাও, পোলারাইজড হয়ে যাও; তাহলে তো চলতে পারবো না। তাহলে ৯৬ তে আমরা জয়ী হতাম না।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় সভায় অতিথিরা। ছবি: রাইজিংবিডি

কাদের বলেন, ‘ডিজিটাল যে অ্যাক্ট হলো এটা কিন্তু আমি সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলাম, সরকারের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের নামে মামলা করা উচিত না।’

সভায় স্বাগত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গণমাধ্যম সমাজকে সঠিক চিন্তা করতে সহায়তা করে, গণমাধ্যম সমাজকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করতে পারে। আবার গণমাধ্যম যদি চেষ্টা করে, সমাজে ভুল বার্তাও দিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো সরকার দাবি করতে পারবে না শতভাগ নির্ভুল কাজ করেছে অথবা করবে। আমাদেরও ভুল ত্রুটি আছে। সেই ভুল ত্রুটিগুলোকে যদি অনেক বড় করে দেখানো হয়, অর্জনগুলোকে যদি ছোট করে দেখানো হয়; তাহলে সমাজে সঠিক চিত্র প্রস্ফুটিত হয় না। আমরা গণমাধ্যমের সহায়তা চাই। কারণ গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।’

‘গণমাধ্যমের সহায়তা ছাড়া বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বিতর্ক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার ভিত গভীরে পতিত হয় না। আমাদের ভুল-ত্রুটি অবশ্যই তুলে ধরবেন, একই সাথে এই যে দেশটা বদলে গেলো, বিশ্বব্যাপী প্রশংসা বাংলাদেশের জন্য... বিশ্বব্যাংক প্রশংসা করে, জাতিসংঘ প্রশংসা করে, সেটি বড়ো আকারে গণমাধ্যমে আসে না। আমরা এক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা চাই।”

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, সাংবাদিক নেতা, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

/পারভেজ/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়