ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

রাজপথ ছাড়বেন না: নেতাকর্মীদের কাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৮:১৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
রাজপথ ছাড়বেন না: নেতাকর্মীদের কাদের

বিএনপি কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি দেয় না জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই কর্মসূচি থাকবে।

রাজপথ ছেড়ে দিলে বিএনপি আবারো ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ করবে দাবি করে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে নির্দেশ দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিনিধি সভায় বক্তব‌্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপির চার দিনের কর্মসূচির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে নেই। নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে ছিলাম, আছি, থাকবো। আমাদের প্রতিদিন কর্মসূচি আছে। গণসংযোগ, শীতবস্ত্র বিতরণ- সব কর্মসূচি আছে।

এসময় রাজপথ না ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি সতর্ক পাহারায় থেকে প্রতিদিন কর্মসূচি রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

‘কোনো অপশক্তিকে আগুন নিয়ে বাংলার মাটিতে খেলতে দেব না। তাদের খালি মাঠ দিয়ে দেব? পরিবহন ভাঙচুর করবে? বিদ‌্যুৎ অফিস জ্বালিয়ে দেবে? তারা রেলস্টেশন, রেললাইন পুড়িয়ে দেবে? রাস্তার পাশের গাছ কেটে দেবে?- সেই সুযোগ দেব না।’

তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের পথে কখনো চলে না। তারা যে পথে আন্দোলন করতে চায়, সেই সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী কায়দার জবাব দেওয়া হবে।

এসময় মুখ চিনে নেতা না বানানোর আহ্বান জানিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বশীল নেতাদের উদ্দেশ‌ করে আ.লীগ সম্পাদক বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন করছেন না? কতদিন আগে সম্মেলন করলেন। কিছু লোক বলেন, তাদের কোনো পদ নেই। সেজন‌্য আরম্ভ করতে পারছি না, কাজ করতে পারছি না।

‘পকেটের লোক ঢুকাবেন না। আত্মীয়স্বজন দিয়ে কমিটি করা যাবে না। কমিটি করতে হবে দলের ত‌্যাগী, দুঃসময়ে যারা ছিল, সুখে-দুখে যারা দলে ছিল, তাদের দিয়ে।’

দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগেই গণতন্ত্রের চর্চা হয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব কবে আপনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, আপনাদের মনে আছে? এর মধ‌্যে আমরা ৩টি সম্মেলন করে ফেলেছি। সময়ের আগেই আমাদের সম্মেলন হয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়েও বেশিরভাগ সম্মেলন আমরা করে ফেলেছি। কিন্তু বিএনপির কোনো সম্মেলন হয়নি।’

‘বিএনপি কোন মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। দলেই তো গণতন্ত্র চর্চা করে না, দেশে প্রতিষ্ঠা করবে কীভাবে? তারা বিদেশের কাছে নালিশ করে শেখ হাসিনার সরকার নাকি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা তো গণতন্ত্র নিজের ঘরেই চর্চা করে না। শেখ হাসিনা ঘরেও চর্চা করে, দেশেও করে। শেখ হাসিনা ভোট চুরির জন‌্য এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার বানাননি। এমএ আজিজ মার্কা, তিনি ছিলেন বিএনপি দলীয় নেতা। শেখ হাসিনা দলীয় কাউকে নির্বাচন কমিশনার বানাননি। আইনের মাধ‌্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। তাহলে গণতন্ত্র আমরা ধ্বংস করলাম কীভাবে?’

তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত; এই ধরনের দাবি আমরা করি না। গণতন্ত্র একটি বিকাশমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া বিকাশ হতে থাকবে। ত্রুটিগুলো সংশোধন হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবং গণতন্ত্র পরিপূর্ণতা অর্জন করে। এটা সময়ের ব‌্যাপার।’

‘একুশ বছর আমাদের দেশে গণতন্ত্রই ছিল না। আমরা ৫০ বছরের স্বাধীনতার পুরোটা গণতন্ত্রে থাকতে পারিনি। সামরিক, আধা-সামরিক আর খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিল, কেমন গণতন্ত্র ছিল সবাই দেখেছেন।’

পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে কেউ ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর তার বাড়িতে গিয়ে দেখেন গ‌্যাস-পানি-বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন।

এসময় দলীয় নেতাকর্মীদের ইতিহাস জানতে এবং পড়াশোনা করার পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা পড়ার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে হওয়া অপপ্রচারের জবাব দিতে সেল গঠনেরও নির্দেশ দেন।

সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারই বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে মেরে জানাজাও দিয়ে দিয়েছে। কোন দল এটা করে, এটা কারা করেছে সবাই দেখেছে। এটা তারাই করে যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক এবং নষ্ট রাজনীতির ধারক-বাহক।

‘প্রধানমন্ত্রীকে যে ভাষায় গালিগালাজ-মিথ্যাচার করে আরেকটি ৭৫ ঘটানোর হুমকি দেয়, এদের সাথে সহজ ভাষায় কথা বলে...আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস, এগুলো জেনে কি আমরা চুপচাপ থাকবো?’

এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস‌্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রের নির্দেশনার বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আমিরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে সম্মেলনে সম্পন্ন হওয়া উপজেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে কেন্দ্রে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেসব উপজেলার সম্মেলন এখনো বাকি আছে সেগুলো আসন্ন রমজান মাসের পূর্বেই সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। আমার জেলায় মোহনগঞ্জ, পূর্বধলা ও আটপাড়া উপজেলার সম্মেলন এখনো বাকি আছে। আশা করি, এই সম্মেলনগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো।

আমিরুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রাখতেও বলা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। কোনো ধরনের গ্রুপিং রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়।

পারভেজ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়