ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জামালের পরিবর্তনের লড়াই

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৮ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জামালের পরিবর্তনের লড়াই

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: শৈশবে গ্রামের অন্য দশজন শিশুর মতো বেড়ে উঠলেও, সামাজিক নানা অসংগতি তাকে ভাবিয়ে তুলতো। মাধ্যমিকে পড়াকালীন তিনি অংশ নিতেন অনেক সামাজিক স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে। জামাল হোসেন কাজ করছেন দরিদ্র মেধাবীদের জন্য, পাগলদের জন্য, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য। জ্ঞান পিপাসু মানুষদের জন্য প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তুলেছেন পাঠাগার। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জামাল হোসেন জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি পুরস্কার, যুব ছায়া সংসদের ডেপুটি স্পিকার পুরস্কার এবং টিআইবি সেরাদের সেরা ইয়েস ফ্রেন্ডস অ্যাওয়ার্ড।

জামাল হোসেন জন্মেছেন কৃষক পরিবারে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার প্রত্যন্ত টিপার বাজার গ্রামে। বাবা কৃষক আব্দুল ছাত্তার, মা সাহের বানু গৃহিণী। শিক্ষা জীবন শুরু করেন গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে। হরিদাস উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি পড়ছেন লালমনিরহাট সরকারী কলেজে।
 


জামাল হোসেন অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন রাজধানীতে আসেন জাতীয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। তখন উচ্চারণ ভুল করায় তাকে নিয়ে অনেকে উপহাস করতেন। সঠিক উচ্চারণ শেখার জন্য তিনি বই খুঁজতে থাকেন লাইব্রেরিগুলোতে। কোথাও খুজেঁ পাননি। তাছাড়া নিজ উপজেলা আদিতমারীতে পাঠাগার নেই। তখন ভাবলেন নিজেই একটি সামাজিক গণ-পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করবেন। যেখানে জ্ঞানের সব শাখার বই থাকবে, থাকেব জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকা। নিজে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়া ৪৫টি বই দিয়ে ২০১৪ সালে সূচনা করেন ‘সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগার’। বর্তমান পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা ১২০০ জন। পাঠাগারে বইয়ের সংগ্রহ ১৫০০টি।  প্রতিদিন গড়ে শতাধিক পাঠক মাদুর পেতে পড়েন প্রিয় বই কিংবা পত্রিকা।

সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগার থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজও পরিচালনা করেন জামাল হোসেন। দরিদ্র পরিবারকে ঈদ সামগ্রী বিতরণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, উলঙ্গ পাগলদের পোশাক কিনে দেওয়া, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার নিয়ে নিজেই অভিনয় করেন পথ নাটকে, শর্টফিল্মে। এমনকি তিনি গ্রামের নারীদের অক্ষর জ্ঞান দিতে চালু করেছেন বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র। সামাজিক কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা, অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। ওরা বলতো ‘সমাজের বড় লোকেরা করবে এ সব কাজ, তোমার নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কি দরকার?’ পরিবার বলতো ‘আমাদের অভাবের সংসার, এ সবে ভাত জুটবে না।’ জামাল হোসেন তবু থেমে যাননি, নিজের টিউশনির টাকা আর টিফিনের টাকা দিয়ে সেবামূলক কাজ করার চেষ্টা করতেন।
 


সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী কাজের জন্য স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অনেক অর্জন রয়েছে জামাল হোসেনের। জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী পুরস্কার- ২০১৫, শ্রেষ্ঠ একক অভিনয় পুরস্কার- ২০১৫, শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি পুরস্কার- ২০১৭, যুব ছায়া সংসদের ডেপুটি স্পিকার পুরস্কার-২০১৫, যুব ছায়া সংসদের পুরস্কার-২০১৬ (সিনেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) সহ আরও অসংখ্য পুরস্কার ও সংবর্ধনায় ভূষিত হয়েছেন।

জামাল হোসেন সামাজিক কাজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, পাঠাগারটিকে আধুনিক পাঠাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই এবং যুব সমাজের জন্য কম্পিউটার শিক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা এবং একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়েও কাজ করতে চান তিনি।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়