ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আজও ধরে রেখেছি, হারাতে দেইনি

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ৫ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৭:২০, ৫ এপ্রিল ২০২১
আজও ধরে রেখেছি, হারাতে দেইনি

কালের স্রোতে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে রেডিও। কিন্তু আজও রেডিওর অস্তিত্ব ধরে রেখেছেন দিনাজপুরের হিলির মতিয়ার রহমান। স্কুলের বারান্দায় না গেলেও রেডিও থেকে অনেক কিছু সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করেছেন তিনি। তাইতো রেডিওকে শিক্ষকের সঙ্গে তুলনা করেন এই মতিয়ার রহমান।

হিলি-বিরামপুর সড়কের ডাঙ্গাপাড়ার রাস্তার পাশে একটি ছোট মদির দোকান। সেখানে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের ৯ জন নাতি-নাতনিসহ মোট ১৭ জন সদস্য নিয়ে বসবাস করেন ৬৬ বছর বয়সী মতিয়ার রহমান। তিন বছর হলো তার স্ত্রী মারা গেছেন।  

বর্তমানে তার নিতান্তই সঙ্গী সেই ৩০ বছরের পুরনো একটি ডিলটন কোম্পানির রেডিও। ৭৬০ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন রেডিওটি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু রেডিওর প্রতি অনীহা আসেনি তার। এটা যেন তার একটি বড় ধরনের নেশা, সব ছাড়লেও, রেডিওটি ছাড়েননি তিনি।

এক সময় রেডিওই ছিল মানুষের একমাত্র সংবাদ মাধ্যম এবং বিনোদন কেন্দ্র। দেশ-বিদেশের সব তথ্য, এই রেডিওর মাধ্যমে মানুষ জানতে পারতো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে এই বেতারের মাধ্যমেই। তারপর মুক্তিযুদ্ধর খবর শুরু হয়। তখনকার দিনে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের খবর আর বিনোদনের জন্য রেডিও হাতে নিয়ে বসে থাকতো মানুষ। মানুষের একমাত্র বিনোদন আর সংবাদের মাধ্যম ছিল রেডিও। 

এখন তার একমাত্র সঙ্গী ৩০ বছরের পুরনো রেডিও

আজ যুগের পরিবর্তনে রেডিও প্রায় হারিয়ে গেছে। আধুনিক যুগের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মানুষ ব্যবহার করছে। ভিসিয়ার, ভিসিডি, টিভি আর মোবাইল ফোনের আবিষ্কারে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই রেডিও। বলতে গেলে চোখেই পড়ে না এই মাধ্যমটির।

স্থানীয় আফজাল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার জন্ম ৮০ সালে, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই, আমি রেডিও দেখে আসছি। এটাই ছিল তখনকার একটা সব কিছুর মাধ্যম। খবরসহ গান বিভিন্ন বেতার কেন্দ্রে শুনতাম। এখন কেউ আর রেডিও শোনে না।’

পার্শ্ববর্তী এক দোকানদার মুরাদ হোসেন বলেন, ‘এই মতিয়ার চাচাকে আমি সেই ছোটবেলায় থেকে দেখে আসছি, তিনি রেডিও ছাড়া কিছু বোঝে না। সারাক্ষণ রেডিওটি হাতে আর ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ান।’

মতিয়ার রহমান বলেন, ‘রেডিও আমার কাছে শিক্ষকের মতো। আমি কখনো লেখাপড়া করিনি। এই রেডিওর নিকট থেকে অনেক শিক্ষা অর্জন করেছি। জীবনে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, কিন্তু এটাকে হারাতে দেইনি। আমি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় বিবিসি খবর, সকাল সাড়ে ৮ টায় তেহরানের খবর এবং রাত ১০টায় ভয়েস অব আমেরিকার খবর শুনি। মাঝেমধ্যে পুরাতন শিল্পীদের গান হলে শুনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রেডিও থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খবর জানতে পারি। রেডিও থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি, তাতে অনেক অজানা তথ্য জেনেছি। এখনকার ছাত্রদের অনেক প্রশ্ন করছি, তারা ঠিকমতো বলতে পারেনি। ঘরে টিভি থাকলেও তা দেখি না। আজও ধরে রেখেছি, হারাতে দেইনি। আমার শেষ ইচ্ছা, বাকি জীবনে এই রেডিওটিকে ধরে রাখবো।’ 

দিনাজপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়