ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শাওনের মাছের খামারে ১০ জনের কর্মসংস্থান 

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ৬ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১২:৫৬, ৬ এপ্রিল ২০২১
শাওনের মাছের খামারে ১০ জনের কর্মসংস্থান 

শাওন খান। এখন একজন সফল মাছ চাষী। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অজপাড়া গাঁয়ে তার বাড়ি। গ্রামের স্কুলে তার পড়ালেখার হাতেখড়ি। গ্রামের স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে তার পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হয়। বেশ কিছু দিন তিনি পড়ালেখার বাইরে ছিলেন।

তবে সপ্তম শ্রেণিতে উঠার পর শাওন পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। পরে আবার পড়াশোনা শুরু করেন। ২০১৫ সালে আমলা সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। শুরু হয় বেকার জীবনযাপন। কিন্ত নিজের বুদ্ধি, মেধা ও সততাকে কাজে লাগিয়ে বেশি দিন তাকে বেকার হয়ে থাকতে হয়নি। বর্তমানে শাওন খান উপজেলার একজন সফল মাছ চাষী। বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়ীয়া-চরপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে শাওন খানের কথা।

শাওন খান এখন ৬০ বিঘা পুকুরে মাছচাষ করছেন। পৈত্রিক সূত্রে বাবার ১০ বিঘা জমি ছিল। সেইসঙ্গে মাছ বিক্রির টাকায় আরও ১০ বিঘা জমি কিনেছেন, বাড়ি বানিয়েছেন ও কিনেছেন একটি মোটরসাইকেল। মাছ চাষ করে ছয় বছরে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বর্তমানে ছেলেটির মাসিক আয় সাত লাখ টাকা।

সফল মাছ চাষী শাওন খান বলেন, ‘যখন বেকার জীবনযাপন করছি। ঠিক তখনই এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি মিরপুর উপজেলায় মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী উপজেলা মৎস্য অফিসে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তারপর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’

তারপর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় এক বিঘা পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। মাছ চাষ করে এখন স্বাবলম্বী শাওন। কিনেছেন ১০ বিঘা জমি। বাড়ি বানিয়েছেন ও কিনেছেন মোটরসাইকেল। বর্তমানে বছরে তার আয় ৮৫-৯০ লাখ টাকা। সেই হিসেব মতে, মাসে সে আয় করে সাত লাখ টাকা।

৬০ বিঘা জমির পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ, প্রচ্ছদে শাওন

শাওন খান আরও বলেন, ‘বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৬০ বিঘা জমির পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছেন। তারমধ্যে নিজের ২০ বিঘা পুকুর। আর গ্রামের বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে ৪০ বিঘা পুকুর ইজারা নিয়েছেন। প্রতি বিঘায় বছরে ২০ হাজার টাকা ইজারা দেন। শাওনের পুকুরে রুই-কাতলা, পাবদা, শিং, মৃগেল, সরপুঁটি, নাইলোটিকা ও সিলভার কার্প রয়েছে।’

শাওন খানের পিতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা মৎস্য অফিসে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরই মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয় শাওন। ২০১৫ সালে আমার ও মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতা এবং পরামর্শে বাড়ির পাশের এক বিঘা পুকুরে মাছ চাষ শুরু করে। বছর শেষে ভালো লাভ হয়। ২০১৬ সালে মৎস্য অফিস থেকে লোন নিয়ে তিনটি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে। ২০১৭ সালে আরও পাঁচটি পুকুরে নেয়। বর্তমানে ৬০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শাওন আর চাকরির পিছনে ছুটতে চায় না। বর্তমানে তার মাছের খামারে অনেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে শাওনকে দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ শুরু করেছেন। অনেকেই শাওনের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।’

শাওনের মাছের খামারের কর্মী আইয়ুব আলী, আশিকুল ও মনি বলেন, শাওন খুব কর্মঠ ছেলে। রাত-দিন পরিশ্রম করে। শাওন চাকরির পেছনে না ছুটে মাছ চাষ শুরু করে। এখন তার খামারে আমরা ১১ জন কাজ করি। মাছ চাষে শাওনের ভাগ্য বদলে গেছে, আমাদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে।

মিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘শাওন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমাদের অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। ছয় বছরে কোটিপতি হয়েছেন। বর্তমানে ৬০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করেন। মৎস্য অফিস থেকে শাওনকে সব প্রকার সাহায্যে সহযোগিতা করা হয়।’

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বলেন, ‘শাওন খান মাছ চাষে এ উপজেলার মডেল মাছ চাষি। সে অনেকের কর্মসংন্থান সৃষ্টি করেছে। শাওনের মতো শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি কেউ মাছ চাষ করতে চায়, তাদের উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।’

কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজদার রহমান বলেন, ‘বর্তমানে কুষ্টিয়ার যুবকরা মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দিন দিন মাছ চাষে বেকার যুবকদের সংখ্যা বাড়ছে। যারা মাছ চাষ করছেন, তাদের জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

কুষ্টিয়া/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়