ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যান্ত্রিক যুগেও তাদের ভরসা ঘোড়ার গাড়ি

অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ১৩ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৫:৫৬, ১৩ এপ্রিল ২০২১
যান্ত্রিক যুগেও তাদের ভরসা ঘোড়ার গাড়ি

যান্ত্রিক যুগে গ্রাম-বাংলার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের বাহন ঘোড়ার গাড়ি বিলুপ্ত প্রায়। সচরাচর নেই সেই বাহন। কিন্তু সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলের মানুষ এখনো সেই ঘোড়ার গাড়ির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা আর শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের মালামাল বহনের একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। পানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে যমুনা মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এতে জেলার কাজিপুর, চৌহালী, উল্লাপাড়া ও সদর উপজেলার চরবাসীর যাতায়াত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল বহনে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করতে হচ্ছে। 

প্রবাহমান যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এতে নৌযান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই বিকল্প হিসেবে হেঁটেই নিত্য দিনের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। এতে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগের বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। শুকনো মৌসুমে চরবাসী তাদের লালিত স্বপ্নের ফসল চাষ করে থাকেন। চরাঞ্চলে সাধারণত বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, বোরো ধান, মিষ্টি আলু চাষ হয়ে থাকে। এ কারণে চরাঞ্চলে যোগাযোগ খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

দু’চোখ যত দূর যায় ধু ধু বালুর চর। এতে চরাঞ্চলের মানুষের মালামালের বাহন হিসেবে ঘোড়ার গাড়িই এখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরাঞ্চলের চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসল জমি থেকে তুলে বাড়ি ও উপজেলা সদরে বিক্রি করার জন্য নদীর ঘাটে নিয়ে আসার একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। রাস্তাঘাট না থাকায় চলাঞ্চলের অধিকাংশ ঘোড়ার গাড়ির চালকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছে এ চর থেকে ওই চরে।

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের কাটাঙ্গার চরের বাবলু মিয়া (৪০) নামের এক ঘোড়ার গাড়ি চালক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কাম না করলে খাবো কী। একবেলা কাম করলে আরেক বেলা কাম করতে পারি না। সংসার চালানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ঘোড়ার গাড়ি চালাই।’ 

দৈনিক ৮০০-৯০০ টাকা আয় করেন তিনি। ঘোড়ার খাবারের জন্য তাকে প্রতিদিন ব্যয় করতে হয় ২০০-২৫০ টাকা। বাকি টাকায় চলে সংসার। 

তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছর আগেও এই চরাঞ্চলে ১০-১২টা ঘোড়ার গাড়ি ছিল। আর এখন এই ইউনিয়নে ২৫-৩০টা ঘোড়াগাড়ি হয়েছে। দিন দিন ঘোড়ার গাড়ির চাহিদা বাড়ছে।’ 

চৌহালীর স্থল ইউনিয়নের তেগুরি চরের ঘোড়ার গাড়ি চালক জহুরুল ইসলাম ও কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চরের বকুল শেখ বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের মানুষের ও প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। আমরা প্রায় এক যুগ ধরে এই চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি চালাই। তবে ঘোড়ার পেছনে যে টাকা খরচ হয়, অনেক সময় তা উঠাতেও পারি না। প্রতিদিন ঘোড়ার খাওয়ার পেছনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচ হয়। এখন আর কিছু করতে না পারায় বর্তমানে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়েই সংসার চালাচ্ছি।

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম ভুঁইয়া বলেন, ‘যমুনায় চর জেগে ওঠায় নৌ চলাচল অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। এ কারণে চরাঞ্চলে যাতায়াতের সুবিধার্থে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও পণ্য পরিবহনে ঘোড়াগাড়ি ব্যবহার বেড়ে গেছে। অনেকেই কৃষি ও মৎস্য শিকারের পেশা ছেড়ে ঘোড়ার ঘাড়ি ও মোটরসাইকেল কিনে ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।’

সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ঘোড়ার গাড়ি আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য, কালের বির্বতনে এ ঘোড়ার গাড়ি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। জেলার ৪টি উপজেলা যমুনার চরাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার মানুষ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।’ 

বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুম এলেই চরবাসীর যোগাযোগের বাহন হয়ে দাঁড়ায় এ ঘোড়ার গাড়ি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সিরাজগঞ্জ/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়