ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটতে পেরে খুশি কৃষকেরা

মাওলা সুজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ২৯ এপ্রিল ২০২১  
কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটতে পেরে খুশি কৃষকেরা

ডিজিটাল যুগে সব কিছুর পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিতেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। যেখানে আগে ধান কাটতে শ্রমিক সংকটের সঙ্গে সময়ের অপচয় হতো, এখন সেখানে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে একরের পর একর ধান কাটতে শ্রমিকের মজুরির সঙ্গে সময়েরও অপচয় হচ্ছে না।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি কাজের জন্য নোয়াখালীর কৃষকদের মালিকানায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মাড়াইকল ও কয়েক হাজার পাওয়ার টিলার রয়েছে। কৃষি ও কৃষকদের সুবিধার্থে ৫০-৭০ ভাগ সরকারি প্রণোদনায় দেওয়া ১৩৩টি রিপার ও ৫৯টি কম্বাইন হারভেস্টার রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা বিভিন্ন জেলা থেকে ৫০টি কম্বাইন হারভেস্টার ভাড়া এনেছেন। এতে শ্রমিক সংকট লাঘব হচ্ছে। কম সময়ে বেশি জমির ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দি করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার কৃষক মো. সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আগে ধান কাটতে অনেক শ্রমিক লাগতো, অনেক সময় লাগতো। কিন্তু এখন শ্রমিক পাওয়া যায় না। অনেক সুবিধা হয়েছে এই মেশিন দিয়ে ধান কাটতে।’ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বোরো ধান কাটার উপকারিতা এভাবেই ব্যক্ত করলেন তিনি।

শুধু তিনিই নন, এখন নোয়াখালী জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলার কৃষকই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। তবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দি-একসঙ্গে তিন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। যদিও এসব মেশিনের দাম সাধারণ কৃষকদের নাগালের বাইরে। কম্বাইন হারভেস্টারের দাম ২৯-৩২ লাখ টাকা। কয়েক বছর ধরে সরকারি প্রণোদনায় দেওয়া কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কম সময়ে বেশি ধান কাটছেন কৃষকরা।

আরেকজন কৃষক আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমি প্রতি বছর নয় একর জমিতে ধান চাষ করি। প্রতি বছর নয় একরের ধান কাটতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়। এ নয় একর ধান কাটতে আমার ১৫ থেকে ১৬ দিন সময় লাগে। কিন্তু বর্তমানে এই মেশিনটার কারণে এক দিনেই ধান কাটা শেষ। শুকাতে লাগবে আরও দুই দিন। শ্রমিকেরও অশান্তি, সঙ্গে বৃষ্টি-বাদল। ভবিষ্যতে এই মেশিনটা থাকলে কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন এবং কৃষকরা আরও আগ্রহী হবেন ধান চাষ করতে।’  

তরুণ উদ্যোক্তা কম্বাইন হারভেস্টারের চালক আমির হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সরকারি প্রণোদনায় যে কম্বাইন হারভেস্টারটি দেওয়া হয়েছিল, তা আমি গত বছর ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে পেয়েছি। গত বছর এবং এই বছর আমি অনেক ধান কেটে দিয়েছি। দেখেছি কৃষক পর্যায়ে এই মেশিনটির যথেষ্ট চাহিদা আছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে খুব দ্রুত ফসল ঘরে তোলার জন্য এই কম্বাইন হারভেস্টারটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

হারভেস্টারের চালক আরও বলেন, ‘এ মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও বস্তাবন্দি সব একসঙ্গে করা সম্ভব। প্রতিদিন এই মেশিন দিয়ে ৮ থেকে ১০ একর জমির ধান কাটা যায়। এক একর ধান কাটতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। পাশাপাশি এক ঘণ্টায় ডিজেল খরচ হয় ৮ থেকে ১০ লিটার । এই মেশিন পেয়ে যেমন কৃষকরা খুব আনন্দিত, তেমনি নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা খুব আনন্দিত।’

জেলা কৃষি প্রকৌশলী শারমিনা নাসরিন বলেন, ‘নোয়াখালী জেলায় মোট ৩৭ লাখ ২৭ হাজার ৬৭২ জন মানুষের মধ্যে কৃষক পরিবার আছেন তিন লাখ ৮৯ হাজার ৮৯১ জন। জেলার উপকূলবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্নচর ও সদর উপজেলায় ৭০ শতাংশ প্রণোদনায় কৃষকদের রিপার ও হারভেস্টার দেওয়া হচ্ছে। বাকি উপজেলাগুলোতে ৫০ শতাংশ প্রণোদনায় দেওয়া হচ্ছে। জনসংখ্যা হিসেবে এসব যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত নয়, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যার কারণে বাহির থেকে মেশিন ও শ্রমিক আনতে হয়।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক বলেন, ‘চাষাবাদে যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে বোরো জমি চাষে কৃষকরা সবকিছু করছেন যন্ত্রপাতিতে। নোয়াখালী জেলায় এখন পর্যাপ্ত পাওয়ার টিলার ও মাড়াইকল রয়েছে। তবে কম্বাইন হারভেস্টার কৃষকদের চাহিদার তুলনায় কম। পুরো জেলায় শতভাগ ধান মেশিন দিয়ে কাটতে হলে অন্তত দুই হাজার কম্বাইন হারভেস্টার প্রয়োজন। এসব মেশিনের দাম বেশি, কারণ এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এছাড়া সব জমিতে হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা সম্ভব নয়। তবে সরকার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রণোদনায় এসব মেশিন কৃষকদের দিচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষকবান্ধব। নোয়াখালীতে প্রায় ৪ লাখ কৃষি শ্রমিক রয়েছেন। তারা উপকূলীয় এলাকাসহ পুরো জেলায় ধান কাটা-মাড়াই করেন। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। মেশিনের সহযোগিতায় স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচে তাদের ধান ঘরে তুলতে পারবে। বর্তমানে জেলায় কৃষি ও কৃষকদের সুবিধার্থে ৫০-৭০ ভাগ সরকারি প্রণোদনায় দেওয়া ১৩৩টি রিপার ও ৫৯টি কম্বাইন হারভেস্টার রয়েছে। এতে কৃষকদের সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।’

নোয়াখালী/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়