ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খাঁটি মধুতে রুবেলের জীবিকা

মো. মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১২, ৯ মে ২০২১   আপডেট: ১৩:২৯, ৯ মে ২০২১
খাঁটি মধুতে রুবেলের জীবিকা

রুবেল মিয়া। হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা। মধুর চাক যেখানে, সেখানেই তার বিচরণ। চাক থেকে মধু সংগ্রহ করার পর বিক্রি করে তার জীবিকা নির্বাহ হয়। তাই সকাল হলে বাড়ি থেকে তিনি বের হন মধু চাকের সন্ধানে। মৌসুমে সপ্তাহে এক দুইটি চাক থেকে তার ৫/৬ কেজি মধু সংগ্রহ হয়। প্রতি কেজি মধু ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করেন।

রুবেল মিয়া (৩৬) জেলার চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা বাগান এলাকায় চাক থেকে মধু সংগ্রহ করার পর বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে আলাপকালে রুবেল মিয়া এসব তথ্য দেন। তিনি জানান, খাঁটি বলেই লোকজন তার বাড়ি থেকে মধু কিনে নেয়। লোকজনের কাছে তার সংগ্রহ করা মধু জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, ‘রুবেল মিয়ার সংগ্রহ করা মধু খাঁটি। তার কাছ থেকে কিনে খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি।’ একই কথা জানালেন ক্রেতা কাজল মিয়া, শামীম ও উজ্জল।

রুবেল মিয়া বলেন, ‘আমি সবসময় সৎপথে আয়ের চিন্তা করি। তাই কোনো ভেজাল মিশাই না মধুতে। এ থেকে আমার যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলছে।’

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিকটি বিবেচনা করে যদি আমরা খাবারের একটি তালিকা করি, সে তালিকার প্রথম সারিতেই থাকবে মধুর নাম। এটি শরীরের জন্য উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশমন্টোজ।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি। যাইহোক রুবেল মিয়া খাঁটি মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। এ টাকায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। চাইলে আমরা তাকে মধু চাষ করার পরামর্শ দিতে পারি।’

হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালরে চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ দাশ জানান, শক্তি প্রদায়ী, হজমে সহায়তা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তশূন্যতায়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে, অনিদ্রায়, যৌন দুর্বলতায়, প্রশান্তিদায়ক পানীয়, মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়, পাকস্থলীর সুস্থতায়, তাপ উৎপাদনে, পানিশূন্যতায়, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, রূপচর্চায়, ওজন কমাতে, হজমে সহায়তা, গলার স্বর, তারুণ্য বজায় রাখতে মধু খুব উপকারী। 

এছাড়াও তিনি জানান, হাড় ও দাঁত গঠনে, রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, আমাশয় ও পেটের পীড়া নিরাময়ে, হাঁপানি রোধে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, রক্ত পরিষ্কারক, রক্ত উৎপাদনে সহায়তা, হৃদ্রোগে, রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় খাঁটি মধু। তবে খাঁটি মধু পাওয়া কঠিন। এখানে রুবেল মিয়ার কাছ থেকে লোকজন খাঁটি মধু কিনে খেতে পারছেন। তার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে, অন্তত খাঁটি মধু বিক্রতার কাতারে তার নাম ধাকবে।

হবিগঞ্জ/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়