ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘ব্রিধান-৬৭’র বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি 

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৬, ১১ মে ২০২১   আপডেট: ১২:৩২, ১১ মে ২০২১
‘ব্রিধান-৬৭’র বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি 

খুলনার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামের আদর্শ কৃষক যুধিষ্টির পাল ব্রিধান-৬৭ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তিনি এবছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রূপসা, খুলনার সহায়তায় জিকেবিএসপি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পঞ্চাশ শতক জমিতে ব্রিধান-৬৭ জাতের একটি বোরো ধানের প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করেন। এ প্রদর্শনীর নমুনা থেকে হেক্টর প্রতি ১০ মেট্রিক টন ধানের ফলন পাওয়া গেছে। এতে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে প্রায় ৩৭ মণ। ধানের এ বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে ফুটেছে। 

কৃষক যুধিষ্টির পাল জানান,  বীজতলায় বীজ বপন ও চারা রোপণের পর ১৪৪ দিনের মধ্যে তিনি এ ধান কেটে বিঘা প্রতি ৩৭ মণ ফলন পেয়েছেন। অধিক ফলন হওয়ায় এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও এ জাতের ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ গ্রামের অনেক কৃষক তার নিকট বীজের জন্য এ ধান কিনতে চেয়েছেন। তিনি এধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে তা আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিক্রি করবেন। যাতে আগামীতে পিঠাভোগ গ্রামে ব্রিধান-৬৭ ধানের ব্যাপক চাষ হয়। 

কৃষক যুধিষ্টির পাল বলেন, ‘এ উপজেলার ঘাটভোগ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রামপ্রসাদ বালা সার্বক্ষণিক পাশে থেকে ধান চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।’ 

একই গ্রামের সুজন পাল, নুর ইসলাম ভূইঁয়া, আজমল খাঁ, বাবুল রায়, শংকর রায় ও কানাই মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন কৃষক এবছর ব্রিধান-৬৭ জাতের ভালো ফলন দেখে খুব খুশি। কৃষকরা জানান, এ জাতের ধানের ফলন বেশি এবং পোকামাঁকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম। বিশেষ করে ক্ষতিকর ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয় না। 

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, ব্রিধান-৬৭ লবণ সহিষ্ণু একটি জনপ্রিয় উচ্চফলনশীল জাতের বোরো ধান। ব্রিধান-৬৭ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডি এস/মিটার (৩ সপ্তাহ পর্যন্ত) লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। তাছাড়া এ জাতটি অংগজ বৃদ্ধি থেকে প্রজনন পর্যায় পর্যন্ত লবণাক্ততা সংবেদনশীল সব ধাপে ৮ ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করে ফলন দিতে সক্ষম, যা প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাত ব্রিধান-২৮ পারে না। 

এ জাতটি ব্রিধান-৪৭ এর মতো লবণ সহ্য করতে পারে। শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। পূর্ণ বয়স্ক ধানগাছ ১০০ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। ডিগ পাতা প্রচলিত ব্রিধান-২৮ এর চেয়ে খাড়া থাকে। এর জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন। এ জাতের ধানে পোকামাঁকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম। বিশেষ করে ক্ষতিকর ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয় না। লবণাক্ততার মাত্রা ভেদে হেক্টর প্রতি ৭.৪ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। যা ব্রিধান-২৮ এর থেকে ১.৫ টন/হে. বেশি। এ ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা এবং ভাত ঝরঝরে হয়। 

রূপসা উপজেলার কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘এবছর উপজেলায় মোট ১৭৩ হেক্টর জমিতে ব্রিধান-৬৭ চাষ হয়েছে। এ জাতটি লবণ সহনশীল এবং অধিক ফলন দেয়। এ জাতের ধান চাষ ও বীজ উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করতে উপজেলায় জিকেবিএসপি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৫টি প্রদর্শনী বাস্তবায়িত হয়েছে।’ 

তিনি জানান, এসব প্রদর্শনীর ব্রিধান-৬৭ জাতের নমুনা শস্য কর্তন করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। এসব প্রদর্শনীতে উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আগামীতে এ ধানের চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।

খুলনা/মাহি  

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়