ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘কখনো সাহায্যের জন্য মাথা নত করিনি’ 

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১১ মে ২০২১   আপডেট: ১৩:০৪, ১১ মে ২০২১
‘কখনো সাহায্যের জন্য মাথা নত করিনি’ 

আনোয়ার গাজী। চাঁদপুর শহরে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন। প্রতিদিন যা আয় করেন, তা দিয়ে চলে তার সংসার। তবে তিনি চাঁদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা নন। নাটোর থেকে জীবিকার উদ্দেশ্যে চাঁদপুরে এসেছিলেন। এরপর থেকেই ডিম বিক্রি করে সংসার চালাতে শুরু করেন।

আনোয়ার গাজী বলেন, আমি চাঁদপুরে এসে প্রায় ৩০ বছর ডিম বিক্রি করছি। তবে প্রায় এক যুগ পৌর কবরস্থানে কবর খোঁড়ার (আঞ্জুমানে খাদেম হিসেবে) কাজ করতাম। ওই সময়ে দিনে কবর খুঁড়তাম এবং সন্ধ্যার পর রাত পর্যন্ত ডিম বিক্রি করতাম। কিন্তু বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন শুধু ডিম বিক্রি করি। তাও ডিম বিক্রি শুধু রাতে এই বাসস্ট্যান্ডেই করি। অন্য কোথাও যাই না।

পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, স্ত্রীসহ তার দুই ছেলে। এরমধ্যে বড় ছেলের সঙ্গে আমার প্রায় ১৫ বছর যাবত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ছোট ছেলে পড়ালেখা করে, তাই আমার উপার্জন দিয়েই সংসার চলছে। নিম্ন আয়ের মানুষ তাতে কি! কারো কাছে কখনো সাহায্যের জন্য মাথা নত করিনি। 

বাসস্ট্যান্ডের পাশেই ভাড়া বাসায় থাকেন আনোয়ার গাজী। সন্ধ্যা হলেই ভ্যানে করে চুলা ও ডিম নিয়ে বেরিয়ে যান। বটগাছের নীচে দাঁড়িয়ে থেকেই রাত পর্যন্ত ডিম বিক্রি করেন। বাসস্ট্যান্ডের চালক, শ্রমিক, হেলপাড়, শ্রমিক নেতা, যাত্রী সবাই তার ক্রেতা। হাঁসের ডিম ১৫ টাকা পিস, পাকিস্তানি মুরগির ডিম ১৫ টাকা পিস, ফার্মের লাল ডিম ১০ টাকা পিস বিক্রি করেন। অনেকে একটা ডিম খেতে এসে কখনো কখনো ৪/৫টা ডিমও খেয়ে নেন।

ডিম সিদ্ধ ও গরম রাখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ডিম সিদ্ধ করি চুলায় আগুন জ্বেলে, এতে ডিমের একটা স্বাদ থাকে। আগুনে সিদ্ধ করা গরম ডিমের প্রতি মানুষের আলাদা চাহিদা থাকে। তাই গাছের কাঠ দিয়ে আগুন জ্বেলেই ডিম সিদ্ধ করে বিক্রি করি। দৈনিক সব আইটেমের মিলিয়ে দেড়'শ থেকে ২'শ পিস ডিম বিক্রি হয়। 

ঝড়-বৃষ্টি হলেও মনের জোর নিয়েই কাজে নামতে হয়। কারণ তার পরিবারে তিনি ছাড়া রোজগার করার মতো কেউ নেই। সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই নিজের থাকা খাওয়া এবং দেশের বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলের জন্য সংসারে খরছ পাঠাতে হয়। অবিক্রিত ডিম বাড়িতে নিয়ে যান। 

কোথায় থেকে ডিম সংগ্রহ করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ডিমগুলো পালবাজারের আমিনের গদি থেকে সংগ্রহ করি। পাইকারি মূল্যে ডিম ক্রয় করে এগুলো আবার সিদ্ধ করে পিস হিসেবে বিক্রি করি। পাইকারি মূল্যে হাঁসের ডিম ১০০ পিস এক হাজার টাকা, পাকিস্তানি মুরগির ডিম ১০০ পিস ৯০০ টাকা আর ফার্মের লালটা ১০০ পিস ৭৫০ টাকা। বাজারে দর উঠা-নামা করে। কখনো কম, কখনো বেশি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, যাতে কাজ করে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারি। কারো কাছে যেন হাত পেতে সাহায্য না চাইতে হয়।

চাঁদপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়