ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে মনিষার মাসে আয় ২৫ হাজার টাকা  

তমাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ১৫ জুন ২০২১   আপডেট: ২০:১৬, ১৫ জুন ২০২১
চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে মনিষার মাসে আয় ২৫ হাজার টাকা  

দিন যত যাচ্ছে করোনা নামক মহামারির ভয়াবহতা তত বাড়ছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় দীর্ঘ দিন ধরে চলমান লকডাউনে অসংখ্য মানুষ হারিয়েছেন চাকরি। এর মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে কেউ কেউ নতুন উদ্যোমে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। কেউ হাল ধরেছেন অনলাইন শিক্ষা বিস্তারে, কেউবা গৃহবন্দি মানুষকে বিনোদন দিতেও কাজ করে যাচ্ছেন। আবার অনেক শিক্ষার্থী এবং বেকার শ্রেণি হয়ে ওঠেছেন উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

এদের মতো একজন ঢাকার মেয়ে ফাবিয়া হাসান মনিষা। তিনি রাজধানীর হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে গত দুই বছর ধরে একটা কোম্পানিতে চাকরি করছেন। স্বামীর ইচ্ছায় পাশাপাশি ইউটিউবকে কাজে লাগিয়েও করছেন ব্যবসা। করপোরেট লাইফের পাশাপাশি এখন ইউটিউবে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। নতুন জগতে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের দুনিয়া।

একজন মেয়ে হিসেবে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পথচলাটা মসৃণ ছিল না। যদিও বাবার ও স্বামীর পরিবার থেকে সর্বোচ্চ সমর্থন পেয়েছেন, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া বুলিং থেকে কখনো রক্ষা পাননি। মনিষার পেজে সবসময় বুলিংসমৃদ্ধ মন্তব্য আসতো। কিন্তু কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণে যাননি তিনি। সব সময় চেষ্টা করেছেন ইতিবাচক উত্তর দিতে। হাসিমুখে এসমস্থ 'hate speech '-এর মোকাবিলা করে গেছেন।

শুরুর দিকে ফোন, আর নরমাল মাইক্রোফোন দিয়ে ভিডিও বানাতেন, আস্তে আস্তে সেগুলা আপডেট করেছেন। মনিষা মূলত ‘Food Vlogger, তাঁর চ্যানেলের নাম FoodAppi। রেস্টুরেন্টে ঘুরে ঘুরে পছন্দের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেন এবং তার কিছু মুহূর্তে ফ্রেম বন্দি করেন ইউটিউবের জন্য। সেগুলোর রিভিউ করে পোস্ট করেন তার চ্যানেলে। মনিষার খরচ বাদে মাসে আয় ২০-২৫ হাজার টাকা। নিজের চ্যানেলে একজন এডিটরও নিয়োগ দিয়েছেন, এতে একজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

পরিবারে মা-বাবার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছেন। তারা সবাই আগ্রহে বসে থাকতেন কবে মেয়ের ভিডিও আসবে আর সেগুলোয় লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করবেন, সেই আশায়। এরই মধ্যে গত ২৭ মার্চ মনিষার বাবা মারা যান। শ্বশুর বাড়ির লোকেরাও অনেক বেশি সাপোর্টিভ মনিষার ক্ষেত্রে। সোশাল মিডিয়া বুলিংয়ের শিকার হয়ে যদি ছেলের বউ ভ্লগিং ছেড়ে দেয়, সেই ভয়েই থাকেন সব সময়। দুই পরিবার আর স্বামীর ভালোবাসা ও সমর্থনে মনিষা নিয়মিত ভিডিও বানিয়ে যাচ্ছেন সব সমালোচনা এক পাশ করে।

স্বপ্ন দেখেন একদিন সেরা ভ্লগার হবেন। ঢাকার ভেতরের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা প্রায় শেষ। এখন স্বপ্ন ঢাকার বাইরের খাবারের স্বাদ নেওয়া। আনন্দের মুহূর্তগুলোকে ফ্রেমবন্দি করার পাশাপাশি দৃষ্টি নন্দন প্রকৃতির সৌন্দর্য তুলে ধরা।

চ্যানেলের নাম কেনো ‘ফুড আপ্পি’ হলো, সেটা না হয় মনিষার মুখ থেকেই শোনা যাক। তিনি বলেন, একদিন রাত ১২টায় আমি আর ও (স্বামী) সংসদ ভবনের সামনে ফুচকা-চটপটি খাচ্ছিলাম আর দোকানের মামা আমাকে আপ্পি আপ্পি বলে ডাকতেছিল। সেখান থেকেই ফুড আর আপ্পির আইডিয়া নিয়ে আমার স্বামী নাম রাখছেন ‘ফুডআপ্পি’।

মনিষা তার ফ্যানসদের জন্যেও কাজ করেন। নির্বাচিতদের ইনভাইট করেন নিজের ভিডিওতে। তাদের সাথে আড্ডা দেন, খাবার ভাগাভাগি করেন। সবশেষে আবার সুবিধাবঞ্চিতদের জন্যেও খাবারের ব্যবস্থা করেন।

সোশ্যাল মিডিয়া বুলিংয়ের কারণে অনেক নারীই সাহস পান না নিজে মেলে ধরার। এগুলো যেমন একদিকে আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়, অপরদিকে মানসিক অস্বস্তিও তৈরি করে। এসব যারা মোকাবিলা করে টিকে থাকতে পারেন, তারাই সফল হন। মনিষাও সেই পথেই এগোচ্ছেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়