ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রবাস জীবন ছেড়ে চায়ের দোকানে ভাগ্যবদল 

আল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ২০ জুন ২০২১   আপডেট: ১৭:৫৯, ২০ জুন ২০২১
প্রবাস জীবন ছেড়ে চায়ের দোকানে ভাগ্যবদল 

পরিবারের ভাগ্যের চাকা বদলাতে ২০০৭ সালে দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে একটি দোকানে চাকরি করতেন। পাশাপাশি শিখেছেন ভালো মানের চা বানানোর কাজ। সেখানে পাননি ভালো বেতন। প্রবাসে কাঠিয়েছেন পাঁছটি বছর। এত সময়েও যখন পরিবারের কোনো উন্নতি করতে পারেননি, তখন পরিবারের কথা চিন্তা করে ২০১২ সালের শেষের দিকে চলে আসেন দেশে। দেশে এসে দুই বছর ছিলেন বেকার। 

কৃষক বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে না পেরে আবার বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ শুরু করেন। বাবা-ছেলে মিলে নিজের কাজের সঙ্গে অন্যের কাজ করে কিছু টাকা আয়-রোজগার করে পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় পলাশ বাজারে একটি চায়ের দোকান দেন। ভালো মানের চা বিক্রি করেন তিনি। তার চায়ের সুনাম রয়েছে জেলাজুড়ে। জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা তার চায়ে এক চুমুক দিতে ছুটে যান তার সেই দোকানে। এই চায়ের দোকানে এখন বদলে গেছে তার ভাগ্য।  

বলেছিলাম সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের ছয়ারা গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম আলীর ছেলে মো. সুজন মিয়ার কথা। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সুজন মিয়া ছিলেন তিন নম্বর। তার বড় দুই বোন। বাবার পরেই পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য তিনি। তিনি সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের পলাশ বাজারে দিয়েছেন চায়ের দোকান।  

সুজন মিয়া বলেন, ২০০৭ সালে দুবাইয়ে গিয়ে পরিবারের তেমন কোনো উন্নতি করতে পারিনি। কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে পরিবারের কথা চিন্তা করে পাঁচ বছর কাজ করেছি। পরিবারের কথা চিন্তা করে খুব কষ্ট হতো তখন। শেষে ২০১২ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে আসি। দেশে এসে কোনো কাজ না পেয়ে দুই বছর বেকার। পরে বাবার সাথে কৃষি কাজ করি। এরপর ধীরে ধীরে এই পর্যায়ে।

তার দোকানে উন্নত মানের মালাই চা, দুধ চা ও রঙ চা বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে খাটি গরুর দুধ দিয়ে মালাই চা ও দুধ চা তৈরি করে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৩০০ কাপ মালাই চা, সাড়ে ৬০০ কাপ দুধ ও রং চা বিক্রি করতে পারেন। সবমিলিয়ে দৈনিক ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার চা বিক্রি করতে পারেন তিনি।

সুজন মিয়া আরও বলেন, এই চা খাওয়ার জন্য সুনামগঞ্জ শহর থেকে লোকজন এসে খেয়ে যান। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরাও আসেন। তারা বেশির ভাগই মালাই চা পছন্দ করেন। এই চা বিক্রি করে সুজন মিয়া তার পাঁচ বোনকে বিয়ে দিয়েছেন এবং তিন ভাইকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। ছোট ভাইয়েরা লেখাপড়ার পাশাপাশি দোকানেও কিছু সময় দেন। পাশাপাশি তার দোকানে স্থানীয় তিনজনকে চাকরি দিয়েছেন। এছাড়া তিনি চায়ের দোকান দিয়ে এলাকায় কিছু জায়গাও (জমি) কিনেছেন। অনেকটা চায়ের দোকানে ভাগ্য বদল হয়েছে তার।  

চা কীভাবে বানানো শিখলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, দুবাইয়ে যে দোকানে চাকরি করতেন, সেই দোকানে চা বানানো হতো। প্রায় সময় নিজের ইচ্ছা থেকে চা বানানোর কাজ শেখেন। সেখানে গাভীর দুধ দিয়ে মালাই চা তৈরি করা হতো। ওই অঞ্চলে মালাই চায়ের প্রচুর চাহিদা ছিল। প্রায় সময় দোকানে চায়ের কারিগর না থাকলে সুজনকে চা বানিয়ে দিতে হতো। এ থেকে তার এই চা বানানো শেখা।

বর্তমানে সুজন মিয়ার চায়ের চাহিদা বেশি থাকায় পলাশ বাজারের চায়ের দোকানী শড়কপাড় গ্রামের শিরু মিয়া, পলাশ গ্রামের করম আলী, পুকুরপাড় এলাকার উজ্জল মিয়া, একই গ্রামের ভুট্টু মিয়াসহ ৩৯ জন চায়ের দোকানদার তার কাছ থেকে চা বানানো শিখে ওই বাজারে চায়ের দোকান দিয়েছেন। তাদের চা ভালো বিক্রি হচ্ছে।

শহর থেকে আসা এনামুল হক চৌধুরী রুমেন বলেন, প্রায় সময় আমরা এখানে চা খাওয়ার জন্য আসি। সুজন মিয়ার দোকানের চায় ভালো হয়। খাটি গরুর দুধ দিয়ে তৈরি করেন চা। খুব ভালো লাগে। শুধু তিনি নয় তার চা খাওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন।

পলাশ বাজারের চায়ের দোকানদার শড়কপাড় গ্রামের শিরু মিয়া বলেন, আগে আমি দিনমজুরের কাজ করতাম। প্রায় সুজন মিয়ার দোকানে চা খেতে যেতাম। এই চায়ের চাহিদা বেশি থাকায় আমি সুজন মিয়ার কাছ থেকে চা বানানো শিখে এখন পলাশ বাজারে চায়ের দোকান দিয়েছি। আমার দোকানেও ভালো ব্যবসা হচ্ছে। আরও অনেকে আমার মতো দোকান দিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়