ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মৃত্যুর খবরে ছুটছেন তারা

জাহাঙ্গীর লিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২৮ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৫:১৭, ২৮ জুলাই ২০২১
মৃত্যুর খবরে ছুটছেন তারা

তিন সংগঠনের ৬৫ মরদেহ সৎকার-দাফন

সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের মধ্যেও করোনায় মৃতদেহ দাফন বা সৎকারে সক্রিয় রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সবুজ বাংলাদেশ, ইনাফা ও নন্দন ফাউন্ডেশন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বেচ্ছাসেবী এই তিনটি সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন। 

করোনা মহামারির শুরুর দিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির মরদেহ দাফন নিয়ে সংকট দেখা দেয় লক্ষ্মীপুরজুড়ে। সংক্রমণের আশঙ্কায় এ কাজে লোকজনের অনীহা সৃষ্টি হয়। এরকম মৃত্যুর খবর শুনলেই স্বজন ও প্রতিবেশীরা নিরাপদ দূরত্বে গা ডাকা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে জেলায় প্রথমবারের মতো এগিয়ে আসে সবুজ বাংলাদেশ, ইনাফা ও নন্দন ফাউন্ডেশন নামে তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

এদের কারোরই দাফনকাজের অভিজ্ঞতা নেই। তবুও সময়ের প্রয়োজনে মনের ভয়কে জয় করে তারা নেমে পড়েন দাফন ও সৎকার কাজে। এপর্যন্ত সবুজ বাংলাদেশ ও ইনাফার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ৩৯ মরদেহ ও নন্দন ফাউন্ডেশন ২৬ মরদেহ দাফন ও সৎকার কার্য সম্পাদন করে। সারাদিনই তারা প্রস্তুত থাকে কখন কোন মৃত্যুর খবর আসে, সেই অপেক্ষায়। কি দিন কি রাত খবর পেলেই তারা পিপি, হ্যান্ড গ্লাভস, বুট পরে ছুটে যান সেখানে। সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে সম্পন্ন করেন দাফন ও সৎকার কাজ।

সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু জানান, বর্তমান কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতেও তাদের দাফন সেবা চলমান। এপর্যন্ত ৩৯টি লাশ দাফন করতে হয়েছে। ফোন আসলেই দিন কিংবা রাতে ছুটে চলে তার টিম। একাজে পরিবহন সহযোগিতা করছেন সাবেক ছাত্রনেতা একেএম বদরুল আলম শাম্মী।

অভিজ্ঞদার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৮ জুলাই বিকাল ৫টায় কল আসে চরশাহী ইউনিয়নে করোনায় ইসমাইল হোসেন (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। টিম রেডি করে ওই স্থানে গিয়ে এশার নামাজ শেষ করলাম। মসজিদের ইমাম বলছেন আপনাদের মধ্যে হুজুর আনেননি। বললাম আপনিতো আছেন। তিনি জানালেন তার পিপি নাই, পরে পিপি ব্যবস্থা করলাম। এরপর গোসলের কাজ চলছে। ইমাম তখনও আছেন মসজিদের আশেপাশে। প্রতিবেশিরা মৃত ব্যক্তিকে অনেক গালাগালি করলো। শহর থেকে কেন গ্রামে আসছেন। এবার গোসল শেষ করে লাশ রাস্তায় নিয়ে আসে জানাজা হবে। রাস্তার পাশে রাখা হলো লাশবাহী খাটিয়া। ইমামকে ফোন করা হলো গোসল শেষ জানাজা পড়াতে হবে, আপনি আসেন। ইমাম সোঁজা না করে দিলো, তিনি আসতে পারবেন না। টিমের সবাই আমরা বিস্মিত একটু আগে ইমাম বললো পিপিসহ সব কিছু রেডি রাখতাম, এখন তিনি আর আসলেন না। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে একজন হাফেজকে এনে জানাযা শেষ করে কবর দিলাম আমরা ৬ জন। আর কেউ নেই। 

তিনি বলেন, প্রথমদিকে দাফনের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরলে পরিবারের লোকজনও আমাদের কাছাকাছি আসত না। প্রতিবেশীরাও কাছে ভিড়তে না। এখন অবশ্য তেমন পরিস্থিতি নেই।

‘নন্দন টিম’-এর প্রধান রাজু আহমেদ জানান, কাজের শুরুতে স্থানীয় লায়ন ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা টিমের জন্য পিপি, গ্লাভস, গামবুট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করে। তবে যাতায়াতের জন্য মাইক্রোভাড়া তারা টিমের সদস্যরা চাঁদা দিয়ে ম্যানেজ করে। পরবর্তী সময়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় কয়েক সমাজ হিতৈষী তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। এতে দারুণভাবে উৎসাহিত হন তারা।

কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, গত বছর আগস্টের ২০ তারিখ সদর উপজেলার পার্বতীনগরের একজন ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা সেখানে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন ওই ব্যক্তির স্বজনসহ প্রতিবেশী কেউই সেখানে উপস্থিত নেই। শুধু ঘরে পড়ে আছে মরদেহ। পরে তারা নিজেরাই মৃতদেহের গোসল দিয়ে কাফন পরিয়ে জানাযার কাজ সম্পন্ন করে দাফন শেষ করেন।

লক্ষ্মীপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়