ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

চাচা-ভাতিজার জ্ঞানের বাতিঘর ‘প্রজন্ম’  

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১২, ২ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৩:২৩, ২ আগস্ট ২০২১
চাচা-ভাতিজার জ্ঞানের বাতিঘর ‘প্রজন্ম’  

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‌বলেছেন, ‘শিখিবার কালে, বাড়িয়া উঠিবার সময়ে, প্রকৃতির সহায়তা নিতান্তই চাই। গাছপালা, স্বচ্ছ আকাশ, মুক্ত বায়ু, নির্মল জলাশয়, উদার দৃশ্য-ইহারা বেঞ্চি এবং বোর্ড, পুঁথি এবং পরীক্ষার চেয়ে কম আবশ্যক নয়।’ 

কিন্তু আমাদের সন্তানদের প্রতি প্রকৃতির যে ভয়ালরূপ করোনাকাল, তা হাড়ে হাড়ে জানান দিয়ে যাচ্ছে। করোনায় সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বইয়ে বেড়াতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরই।

শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা করোনা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই দুঃসময়ে শিক্ষার সংগতি নির্ধারণ করবেন কারা, তা কেউ জানেন না। এমন বাস্তবতায় গাজীপুরে ‘প্রজন্ম’ নামে ভিন্নধর্মী জ্ঞানের বাতিঘর গড়েছেন চাচা-ভাতিজা। এতে ইতিহাস ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, ভ্রমণ কাহিনি, শিশু গল্প, ধর্মগ্রন্থ, ইংরেজি সাহিত্যসহ কবিতা উপন্যাসের আট শতাধিক বই রয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নিয়ামত সড়কের মারিয়ালী এলাকায় চাচা এশরাকুল মজিদ ও ভাতিজা রেদওয়ান উল মজিদের বাড়ি। তারা নিজ বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন দুইটি কক্ষে এমন একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘প্রজন্ম’। করোনাকালীন সময়ে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই সময়ে এলাকার শিশু-কিশোর ও তরুণ ছেলে-মেয়েরা মোবাইলে নানারকম গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের সেখান থেকে ফিরিয়ে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতেই এলাকায় নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা হয়েছে।

পাঠাগারের উদ্যোক্তা এশরাকুল মজিদ বলেন, ২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করে। সেসময় শুরু হয় বাংলাদেশেও। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। 

সময়ের এই কঠিন বাস্তবতায় বই পড়ার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে পারিবারিক উদ্যোগে একটি মননশীল পাঠাগার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেই। যেখানে আগ্রহী পাঠকেরা শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি সাহিত্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বিভিন্ন বই পড়ার সুযোগ পাবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজ বাড়ির দুইটি কক্ষে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভক্ষণে ‘প্রজন্ম-একটি মননশীল পাঠাগার’ নামে যাত্রা শুরু করে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে লক্ষীপুরা হয়ে মারিয়ালীর দিকে ইটের পাথরের ঢালাই করা একটি রাস্তা চলে গেছে কলবাগানের দিকে। সেই পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন একটি বাড়ির নীচতলায় পাতাবাহার গাছ ঝুলে আছে। লাল ইটের গাঁথুনি দেওয়া একটি বারান্দা। তাতে রয়েছে সাদা রংয়ের একটি দরজা। বাইরে একটি কাঠে লেখা ‘প্রজন্ম’ তার নীচে লেখা আছে একটি মননশীল পাঠাগার। বাহির থেকে দেখলেই বোঝা যায় ভেতরের সুন্দর পরিবেশ। 

ভেতরে তাকে তাকে সাজানো রয়েছে শত শত বই। আছে পিয়ানো, গিটারসহ বিভিন্ন কারুকাজের জিনিসপত্র। সেখানে বইয়ে ধ্যানমগ্ন কয়েকজন পাঠক। যার যার পছন্দমতো বই নিয়ে পড়ছেন তারা। এখানে বই পড়তে আসা আব্দুল্লাহ হিল দিদার বলেন, অবসরে এখানে এসে বই পড়ি। এখানে প্রায় সব ধরনের বই পাওয়া যায়। মনোরম পরিবেশে বই পড়া একটি আলাদা অনুভূতি। 

আইয়ুবুর রহমান তৌফিক একজন বইপ্রেমী। পাঠাগার সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয়ই মহৎ কাজ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলো হলো জ্ঞান। এই জ্ঞানের আলো যেখান থেকে ছড়িয়ে যাবে, সেটা হলো আলোর দিশারি। এই সমাজে এই আলোর দিশারির অভাব। ধন্যবাদ ‘প্রজন্ম’ আলোর দিশারির উদ্যোক্তাকে। সমাজের পাঠক শ্রেণির কাছে প্রত্যাশা, চলুন এই আলোয় নিজে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে আলোকিত করি। 

টঙ্গী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আকন্দ বই পড়ছিলেন। তিনি বলেন, এলাকার শিশু-কিশোর ও তরুণ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সৃজনশীল সাহিত্য চর্চা, অধ্যবসায়, জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন, মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা, শিক্ষার প্রসার, সামাজিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অবক্ষয় রোধকল্পে পাঠাগার একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। 

পাঠাগারের উদ্যোক্তা ভাতিজা রেদওয়ান উল মজিদ বলেন, শিশুদের আগামী দিনের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে এ পাঠাগার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা রাখি। আমাদের এই পাঠাগার জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলে জ্ঞান বিতরণে নিরন্তর অবিচল থাকবে। 

গাজীপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়