ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শসা চাষে বদলে গেছে রূপসা পাড়ের ৩০ গ্রাম  

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:২৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১
শসা চাষে বদলে গেছে রূপসা পাড়ের ৩০ গ্রাম  

খুলনার রূপসা পাড়ের ৩০টি গ্রামে চাষ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল ৭টি জাতের শসা। বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই সবুজে ঘেরা শসা ক্ষেত। ঘেরের পাড়ে সারি সারি মাচায় ঝুঁলছে শসা আর শসা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দামও মিলছে। শসা চাষ বদলে দিয়েছে গ্রামগুলোর চিত্র। এতে ভাগ্য খুলছে উপজেলার ২০০ কৃষক পরিবারের। তাদের মুখে দেখা দিয়েছে সফলতার হাসি।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দুর্জ্জনীমহল, ডোমরা, চন্দনশ্রী, বাধাল, ভবানীপুর, পেয়ারা, জাবুসা, আমদাবাদ, দেবীপুর, নৈহাটী, সামন্তসেনা, তিলক, খাজাডাঙ্গা, পাথরঘাটা, স্বল্পবাহিরদিয়া, আলাইপুর, পুটিমারি, আনন্দনগর, পিঠাভোগ, গোয়ালবাড়িরচর, সিঁন্দুরডাঙ্গা, নারিকেলী চাঁদপুর, ডোবা, বলটি, নতুনদিয়া, ধোপাখোলা, গোয়াড়া, শিয়ালী, চাঁদপুর ও বামনডাঙ্গা গ্রামের মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে এ বছর শসা চাষ হয়েছে। তবে ঘাটভোগ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি জমিতে শসা চাষ হয়েছে। ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে কম সময়ে অধিক ফলন ও ভালো দাম পেয়ে এসব গ্রামের কৃষকরা দারুণ খুশি। মূলত ঘেরের পাড়ে শসা চাষ পাল্টে দিয়েছে রূপসা উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রামের আর্থ-সামাজিক চিত্র। 

এদিকে, ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত শসা কেনা-বেচার জন্য গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে শসার মৌসুমি আড়ত। স্থানীয়ভাবে এ আড়তকে ‘গালা’ বলা হয়। তাই শসা বিক্রি করতে সাধারণত পরিবহন খরচ লাগে না। কৃষকেরা ক্ষেত থেকে শসা তুলে এনে আড়তে বিক্রি করেন। শসা চাষে নারী ও বেকার যুবকসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। শসা পরিবহনে মিলেছে এলাকার ভ্যানগাড়ি ও অটোটেম্পু চালকদের আয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার শসা ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা টাটকা শসা কিনতে পেরে খুশি। 

উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের শসা চাষি মো. টিপু সুলতান বলেন, এ বছর মৎস্য ঘেরের পাড়ে এক বিঘা জমিতে গ্রিন লাইন নামক হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করেছি। এতে বীজ, সার, মাচা তৈরি, শ্রমিক ও কীটনাশক বাবদ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ মণ শসা (প্রতি মণ ৭০০ টাকা দরে) স্থানীয় আড়তে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আরও প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। 

পুটিমারি গ্রামের কৃষক মো. শহিদুল শেখ জানান, ঘেরের পাড়ে চার বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৮০০ টাকা মণ দরে এ পর্যন্ত ১০০ মণ শসা ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এরকম দাম থাকলে আরও ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারবো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার শসার ফলন ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি। 

কৃষকেরা বলেন, রূপসা উপজেলার আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রহমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের পাশে থেকে শসা চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ফলে সাফল্য সহজে ঘরে তুলতে পারছেন তারা। 

টিপু সুলতান ও শহিদুল শেখ ছাড়াও আনন্দনগর গ্রামের চাঁন মিয়া, মুরাদ লস্কর, শাহীন শেখ, হুজাইফা, জসীম লস্কর, শানু লস্কর, আরমান, ফেরদৌস, রিয়াজ, আহাদসহ প্রায় ২০০ কৃষক মৎস্য ঘেরের পাড়ে গ্রীনলাইন, আলাভি গ্রীন, প্যারাডাইজ, বাম্পার, হিমালয়, ব্র্যাক, থাইল্যান্ড এসব হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। 

রূপসার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লাভ হওয়ায় মৎস্য ঘেরের পাড়ে শসা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার কৃষকেরা। তাই গত চার বছরে রূপসা উপজেলার অনন্ত ৩০ গ্রামে ঘেরের পাড়ে শসা উৎপাদনের এ কর্মযজ্ঞ ছড়িয়ে পড়েছে। শসা উৎপাদনে সরগরম হয়ে উঠেছে এসব গ্রামগুলো। একসময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, ঘেরের পাড়ে শসা ও অন্যান্য শাকসবজি চাষে এখন তাদের ভাগ্য বদলে গেছে, মুখে ফুটেছে হাসি ।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, উপজেলার প্রতিটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলে, কৃষকেরা ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন। 

/মাহি/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়