ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রাখাল থেকে লাখপতি

ডা. মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ১০ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১২:৫৪, ১০ অক্টোবর ২০২১
রাখাল থেকে লাখপতি

একটা সময় মানুষের গরু নিয়ে মাঠে চরাতেন। রাখালি করে যা পেতেন, তা দিয়ে সংসার চালাতেন। তার বাবাও ছিলেন গোয়াল। দুধ সংগ্রহ করতেন।  একবেলা গরু চরানোর পর বাকি সময় বাবার তৈরি দই বিক্রি করতেন ভারে করে। বড় ছেলে বাবাকে সাহায্য করবেন এটাই তো স্বাভাবিক। তাই কাজের চাপে পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু দারিদ্র্যতা তাকে বেশিদিন আটকে রাখতে পারেনি। নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়েছেন। রাখাল থেকে হয়েছেন লাখপতি৷ যার নিজের কোনো গরুই ছিল না, সে কিনা এখন ৫০টি গরুর মালিক। বলছিলাম বিদ্যুতের কথা। তার বাড়ি আমের রাজধানী খ্যাত চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ভোলাহাট। 

দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন, কিন্তু পরিশ্রম করে ফিরিয়েছেন ভাগ্য। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। চেয়েছেন নিজের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে, তাইতো বৃদ্ধ বাবার দুধ থেকে দই বানানোর কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। অন্যের গরু চরিয়ে যা পেতেন, তা দিয়ে নিজে অল্প অল্প করে দইয়ের ব্যবসায় বাবার সঙ্গে বিনিয়োগ করেছেন।  প্রাপ্ত লাভ ও কিছু টাকা ধার করে কিনেছিলেন একটি গাভী। অন্যের গরুর পালের সাথে নিজের পরম আদরের গরুটিকে নিয়ে যেতেন বিলে। খাওয়াতেন, নিয়মিত গোসল করাতেন এবং যত্ন নিতেন। 

বিদ্যুত জানান, ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার না করে ঘাস-খড়ের পাশাপাশি খৈল, ছোলা ও ভুসি খাওয়ানোর মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন তিনি। তবে রোগ প্রতিরোধের টিকা তিনি গরুকে দিয়েছেন।

এই খামরি বলেন, বাজারে ভারতীয় গরু বেশি থাকায় আগের বছরগুলোতে ততটা লাভ করতে পারিনি। লোকসানের মুখে পড়েন আমার মতো অনেক খামারি। গরুগুলো একটু অসুস্থ হলেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সাথে যোগাযোগ করেছি, তারা সহযোগিতাও করেছেন। 

২০১৪ সাল থেকে পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ। তখন থেকেই ফল পেতে শুরু করেছেন। বর্তমানে এলাকায় প্রতিষ্ঠিত খামারিদের মধ্যে একজন হয়েছেন তিনি। বর্তমানে খামারে প্রায় ৫০টির মতো দেশি ও সংকর জাতের গরু রয়েছে। প্রতিদিনই প্রায় ২০টির মতো গাভীতে ১০০ লিটার দুধ হয়। সেই দুধ দিয়ে ঘি তৈরি করেন। বাকি অংশ দিয়ে সুস্বাদু দই তৈরি করেন। প্রতিদিনই প্রায় ১০০ কেজির বেশি দই উৎপাদন হয় বিদ্যুতের বাসায়। তাকে সহায়তা করছেন পরিবারের সবাই। 

প্রতিবছরই প্রায় ১০টি করে গরু বিক্রি করেন। বিশেষ করে কোরবানির সময় বিক্রি করে থাকেন। বছর শেষে হিসাব করলে তার বার্ষিক আয় প্রায় ৮-৯ লাখ টাকা। 

তিনি বলেন, একটা সময় আমার দুঃখ ছিল, মনে মনে চাইতাম আমারও কিছু গরু হোক। টাকা হোক। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন আমার দু’ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। 

ভোলাহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল্লাহ বলেন, একেবারে শূন্য থেকে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা বিদ্যুতের পেছনে প্রাণিসম্পদের অনেক অবদান রয়েছে। একটি গরু দিয়ে শুরু করা খামারে এখন ৫০টির বেশি গরু রয়েছে। প্রতিবছর তিনি কয়েক লাখ টাকা গরু বিক্রি করেন। 

এছাড়াও তিনি দই, ঘি প্রস্তুত করে বাজারজাত করছেন। এতে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি প্রোটিনের চাহিদাও মিটাচ্ছেন। তার এ বিশাল কর্মযজ্ঞে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর চিকিৎসা, পরামর্শ এবং প্রণোদনা প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আমরা তার আরও সফলতা কামনা করছি।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়