ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় কোটি টাকার সুপারি

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ২২ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৫:২০, ২২ নভেম্বর ২০২১
প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় কোটি টাকার সুপারি

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাধাল বাজার। জেলার অন্যতম বৃহৎ সুপারির হাট। এখানেই প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় কোটি টাকার সুপারি। সপ্তাহে দুদিন রোববার ও বৃহস্পতিবার বসে এই হাট। 

রোববার (২১ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে বাধাল বাজার ঘুরে দেখা যায় হলুদের সমারোহ। বাজারে বিক্রেতা ও ক্রেতার সমাগমও চোখে পড়ার মতো। ভোরের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান, নছিমন, মটোরসাইকেল, বাইসাইকেলে করে বস্তা বা ঝাকা ভর্তি সুপারি নিয়ে হাটে আসছেন ব্যবসায়ীরা। চলছে দাম কষাকষি। বিক্রিও হচ্ছে খুব। পাইকাররা সুপারি ক্রয় করে নিজেদের গদিতে (ভাড়া করা ঘর) স্তুপ করে রাখছেন। এই সুপারি আবার বাছাই এবং চূড়ান্ত গণনা শেষে বস্তা ভর্তি করতে কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক। 

বাগেরহাটের চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সুপারি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, নাটোর, গাইবান্ধাসহ দেশের ২০টি জেলায় সরবরাহ করা হয়। 

এছাড়াও উপজেলার তালেশ্বর, টেংরাখালি, গজালিয়া বাজারেও সুপারি বিক্রি হয়। চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন বিক্রেতারা। এভাবে বাজারদর অব্যাহত থাকলে সুপারির চাষিরা লাভবান হবে বলে জানান বিক্রেতারা।

বাগেরহাট জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল সুপারি। সুপারি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাতও এই জেলা। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে ২০২০ সালে বাগেরহাটে ৩৭০০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়। এতে সুপারি উৎপাদন হয়েছিল ২৫ হাজার ৬০৫ টন। ২০২১ সালে ৪০৯৭ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষের লক্ষ্যমাত্রা। উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল ২৫ হাজার ৬০৫ টন। তবে এবার চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে ২৫ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন সুপারি। 

জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে সব থেকে বেশি সুপারি উৎপাদিত হয় কচুয়া উপজেলায়। এই উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে।  

আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সুপারি হাটের জন্য বিখ্যাত কচুয়ার বাধাল বাজার। বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হাটে কোটি কোটি টাকার সুপারি বেচা-কেনা হয়।’ খাজনা বেশি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘সুপারির বস্তাপ্রতি ১০০ টাকার ইজারা নেওয়া হয়। খাজনা যদি একটু কম হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে।’

কচুয়া উপজেলার গোপালপুর থেকে সুপারি বিক্রি করতে আসা মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমাদের সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। সুপারির আকারও অনেক ভালো। পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছি। সুপারির এমন বাম্পার ফলনে আমরা খুব খুশি।’ 

সুপারি গণনা ও বাছাই কাজে নিয়োজিত শ্রমিক শহিদ, ইউনুস ও মোবারেক জানান, সপ্তাহে দুই দিন আমরা এই হাটে সুপারি গণনা করি। ফজরের নামাজের পরেই হাটে চলে আসি। রাত ১০টার সময় বাড়িতে যাই। এক কুড়ি সুপারি বাছাই শেষে গণনা করে বস্তায় ঢুকালে আমরা পাই ৫ টাকা। প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা আয় হয় আমাদের। সুপারির মৌসুমে এই কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। 

বাধাল বাজারের আড়তদার কেয়াম গাজী বলেন, ‘এই হাটে আমরা ৯ জন আড়তদার আছি। প্রতি হাটে দেড় থেকে ২ হাজার বস্তা সুপারি আসে এই বাজারে। এখন বাজার মূল্য  ভালো। গত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় সুপারির উৎপাদনও ভালো হয়েছে। এভাবে থাকলে আমরাও লাভবান হব এবং চাষিরাও লাভবান হবেন।’ সুপারি বেপারি ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বাধাল হাট থেকে সুপারি কিনে আমরা সরাসরি রংপুর ও এর আশেপাশের জেলাতেও বিক্রি করি। এ বছর সুপারির বাজার ভালো। এক কুড়ি সুপারি কখনো ২৩০ থেকে ৪০০ টাকায় আবার কখনো ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।  আশাকরি মৌসুমের শেষ পর্যন্ত বাজারদর অব্যহত থাকলে ব্যবসা ভালো হবে।‘

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাট-এর প্রশিক্ষণ অফিসার মোতাহের হোসেন বলেন, ‘সুপারি এবং নারকেলের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রসিদ্ধ। এছাড়া বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সুপারি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষীরা। আমরাও কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা লাভবান হতে পারেন।’

কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় এই সুপারি রপ্তানি হয়। কচুয়ার প্রায় সব পরিবারে সুপারির গাছ রয়েছে। সুপারি শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে চাষীদের সরকারি-বেসরকারি সহযোগীতা প্রয়োজন।’

বাগেরহাট/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়