ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ‘ড্রাগন’

এনাম আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ২৬ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৮:৫৩, ২৬ নভেম্বর ২০২১

বগুড়ায় চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল। ছোটবড় মিলে প্রায় ৭০টির মতো বাগান রয়েছে এই জেলায়। এর মধ্যে বাণিজ্যিক বাগানের সংখ্যা ১৫টি। যেখান থেকে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন চাষিরা। 

কৃষি বিভাগ বলছে, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর মতো বগুড়ায় এখনও ড্রাগন উৎপাদন হয় না। তবে ড্রাগন চাষের জমি প্রতি বছর বাড়ছে। চাষিরা বলছেন, প্রথম দিকে ড্রাগন চাষ ব্যয়বহুল হলেও নির্দিষ্ট সময় পর এই ফল থেকে বছরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সমন্বিত উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ড্রাগন চাষ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেয় বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টার। কৃষকদের মধ্যে বিদেশি এই ফলের প্রদশর্নী করা হয়। সে সময় মাত্র দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ হয়।  কিন্তু বর্তমানে জেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। ছোট বড় মিলে প্রায় ৭০টি বাগানে ড্রাগনের খুটি রয়েছে।  ড্রাগন ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ। জমিতে লাগানোর পর এর পরিচর্যা খুব বেশি করতে হয় না এবং পোকামাকড়ও অনেক কম। এতে পানিও কম লাগে। 

বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, কাহালু উপজেলার চাষীরা ড্রাগন চাষে ঝুঁকছে বেশি।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ফুলদীঘি এলাকার ড্রাগন চাষী বেসরকারি একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাছিব। তিনি জানান, ব্যাংকে চাকুরী করা অবস্থাতেই তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের তাড়না থেকেই তার এই স্বপ্ন। সেটি বাস্তবে রূপ দিতে তিনি বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে উচ্চমূল্যের ফল ড্রাগন চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর ড্রাগন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ৩ বছর আগে ১ বিঘা ৬ শতাংশ জমিতে ড্রাগনের ২০০ খুটি রোপন করেন। রোপনের এক বছর পর থেকে ফলন পেতে শুরু করেন। বর্তমানে ড্রাগন চাষে বিনিয়োগ টাকা উঠানোর পর লাভের মুখ দেখতে পেয়ে নিজেকে একজন সফল ড্রাগন চাষী হিসেবে দাবী করছেন। তিনি বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ১৫০ খুটি লাগানো এবং ফল সংগ্রহের আগমুহুর্ত পর্যন্ত খরচ হবে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এক খুটিতে ৪টি করে গাছ থাকে। আর এই ৪টি গাছের মধ্যে ৩টি মেয়ে এবং ১টি ছেলে গাছ থাকে। গাছ লাগানোর এক বছর পর ফল পাওয়া যায়। তবে গাছের বয়স যত বাড়বে, গাছের আকার বড় হবে। এতে ফলনও প্রতি বছর দ্বিগুণ হারে বাড়তে থাকবে। বছরে ৮ বার ফলন সংগ্রহ করা যায়।’ 

মাহমুদুল হাছিব বলেন, ‘সাড়ে চার বছর বয়সী একটি খুটি থেকে বছরে এক থেকে দেড় মণের মতো ফল সংগ্রহ করা যাবে। এই গাছগুলো সাধারণত ৫০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয় বলে জেনেছি। আগামী বছর তিনি এক বিঘা জমি থেকেই ১৫০ মণেরও বেশি ফল সংগ্রহ করতে পারবো বলে আশা করছি। বাজারে এই ফলের চাহিদা এবং দাম দুটোই বেশি। দেড়শ মণ ফল যদি গড়ে ২৫০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করা যায় তাহলে এক বিঘা থেকেই বিক্রি করতে পারবো ১৫ লাখ টাকার ফল।’ 

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর এলাকার ড্রাগন চাষী হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার মাসনবী বলেন, ‘৩ বছর আগে এক বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি। এরপর ড্রাগন চাষের জমি পর্যায়ক্রমে আরো আড়াই বিঘা বৃদ্ধি করি।  ১ বিঘা জমি থেকে গত তিন বছরে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয়েছে।  ড্রাগনের জন্য সাড়ে ৩ বিঘা জমি তৈরি করতে যে টাকা খরচ হয়েছিলো চলতি বছর সেই টাকা ফল বিক্রি করেই উঠিয়ে নিয়েছি। আগামী বছর যা উৎপাদন হবে সেটি হবে পুরোটাই লাভ।’   

বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বলেন, ‘বগুড়ার বাজারে এখন যে ড্রাগন ফল দেখা যাচ্ছে এগুলো বগুড়ার কৃষকরাই উৎপাদন করছেন। তবে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর মতো বগুড়ায় এখনও ড্রাগন উৎপাদন হচ্ছে না। যে কারণে বাইরের জেলাগুলোতেও বগুড়ায় উৎপাদিত ড্রাগন যাচ্ছে না। দানাদার ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘ড্রাগন প্রথম যখন বাজারে আছে তখন এর দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে কিন্তু এর দাম ৬০০ টাকা কেজি পর্যন্ত ওঠে। হর্টিকালচার সেন্টারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে গাছের চারা বিক্রি করা হয়। দানাদার ফসলের চেয়ে উচ্চমূল্যের এই ফসলে দাম বেশি যে কারণে ড্রাগন চাষে কেউ আগ্রহী হলে হর্টিকালচার সেন্টার তাকে পরামর্শসহ টেকনিক্যাল সহযোগিতা করবে।’

বগুড়া/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়