ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৫০ গ্রাম হোয়াইট টি’র দাম ১৩০০ টাকা

আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫১, ২ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:৫৯, ২ ডিসেম্বর ২০২১
৫০ গ্রাম হোয়াইট টি’র দাম ১৩০০ টাকা

দেশের সর্ব উত্তরের কৃষি সমৃদ্ধ জেলা পঞ্চগড়। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল এখন ‘চা’। ইতোমধ্যে দেশের দ্বিতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়। এ জেলায় উৎপাদিত চা ইতোমধ্যে জায়গা করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। মানুষের প্রাত্যহিক তালিকায় থাকা সব ধরনের চা প্রক্রিয়াজাত হয় এখানকার কারখানাগুলোতে। সৌখিন-স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি, তুলসি টি, ইয়োলো টিসহ উন্নতমানের বিভিন্ন চা। 

সম্প্রতি পঞ্চগড়ে উৎপাদন হচ্ছে ঔষুধি গুণসম্পন্ন চায়ের বিশেষ ধরন ‘হোয়াইট টি’ বা সাদা চা। উন্নতমানের এই চা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ২৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের মাত্র দুইটি প্রতিষ্ঠান হোয়াইট টি উৎপাদন করছে। এরমধ্যে পঞ্চগড়ের কাজী অ্যান্ড কাজী টি ফ্যাক্টরি একটি।

হোয়াইট টি’র রঙ পিত-হলুদ বা পিতলের মতো হলুদ। এর মূল রঙটা সবুজ ও হলুদ রঙের মাঝামাঝি। একে হোয়াইট-টি বলার কারণ হলো- এর গায়ে সাদা লোমের মতো আবরণ রয়েছে। একে কেউ কেউ ‘সিলভার নিডল হোয়াইট-টি’ বা রূপার সুইয়ের মতো সাদা চা বলেন। হোয়াইট টি-তে আদি ও অকৃত্রিম সব গুণাগুণই থাকে অটুট। আর এর অসাধারণ ঘ্রাণে যেকোনো চা-প্রেমীই মুগ্ধ হবেন।

কাজী অ্যান্ড কাজী টি’র বিক্রয় কেন্দ্র পঞ্চগড় জেলা শহরের মীনা বাজার। সেখানে ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি, তুলসি টি, ইয়োলো টি, অর্গানিক টিসহ বিভিন্ন উন্নতমানের চায়ের প্যাকেট সাজানো রয়েছে। এদের সঙ্গে রয়েছে চায়ের বিশেষ ধরন হোয়াইট টিও। 

মীনা বাজারের বিক্রয় প্রতিনিধি রাজু ইসলাম জানান, ৫০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি হোয়াইট টি’র প্যাকেট ১ হাজার ৩০০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়। এই চায়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। পঞ্চগড়ের স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের জেলার লোকজনও কিনে নেন। প্রতি মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ প্যাকেট হোয়াইট টি বিক্রি হয় এখান থেকে।

জানা গেছে, হোয়াইট টি উৎপাদনের সূচনা হয়েছিল চীনে। তখন হোয়াইট টি ছিল চীনের খুবই অভিজাত একটি পানীয়, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল। ‘হোয়াইট-টি’ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা তারুণ্য বজায় রাখে এবং ক্লান্তি দূর করে মনকে ঝরঝরে করে তোলে। আরও একটি বিশেষ গুণ হলো- এই চা ফ্যাট বা চর্বি কমায়। পৃথিবীতে এই মুহূর্তে যত ধরনের চা পাওয়া যায়, তার মধ্যে হোয়াইট টি-ই হলো সবচেয়ে কম প্রক্রিয়াজাত। 

কথা হয় চা নিয়ে কাজ করা জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি পঞ্চগড়ের ‘রিলাক্স হিমালয় টি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, হোয়াইট টি’র বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। এটি তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় চায়ের ক্যামেলিয়া সাইনেসিস গাছের একটি বন্ধ কুঁঁড়ি। অর্থাৎ যে কুঁঁড়ি এখনো প্রস্ফুটিত হয়নি। সেই বন্ধ কুঁড়িগুলোকে একটি একটি করে চা গাছ থেকে তুলে প্রক্রিয়াকরণের পরই এই বিশেষ চা তৈরি হয়। একই গাছ থেকে অন্যসব ধরনের চাও উৎপন্ন হয়। এই চা উৎপাদনে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়। হোয়াইট টি ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামীম আল মামুন বলেন, চা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে দেশের দুইটি প্রতিষ্ঠান হোয়াইট টি বাজারজাত করছে। এর মধ্যে একটি চট্টগ্রামেরর, আরেকটি পঞ্চগড়ের কাজী অ্যান্ড কাজী টি ফ্যাক্টরি। 

তিনি জানান, পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় চা চাষের প্রসার ঘটছে। উৎপাদনে ছাড়িয়ে যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা। পাঁচ জেলার ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর জমির ২৭টি চা বাগান এবং ৭ হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে গত মৌসুমে চা উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ কেজি। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫ লাখ কেজি। এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ কোটি কেজি। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ কেজি। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ২০ লাখ কেজি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়