ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাঙাশ চাষ করে স্বাবলম্বী যে গ্রামের মানুষ

আবু কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ৮ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৩৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
পাঙাশ চাষ করে স্বাবলম্বী যে গ্রামের মানুষ

১৯৯৪ সালে আসাদুজ্জামান আসাদ নামের এক ব্যক্তি প্রথম আটিয়াতে পাঙাশ মাছ চাষ শুরু করেন। আসাদের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে আটিয়ার ঘরে-ঘরে তৈরি হয়েছে পাঙাশ চাষি। এই গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক পুকুরে এখন এ মাছ চাষ হচ্ছে। পোনা মজুদ, চাষ, মাছ ধরা, এমনকি বাজারে বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাঙাশ চাষের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার অধিকাংশ পরিবার এখন স্বাবলম্বী।

টাঙ্গাইল সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রাম। ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালে দেশীয় মুদ্রা সংস্করণে দশ টাকার নোটের প্রচ্ছেদে স্থান পাওয়া ৪০০ বছরের পুরনো মসজিদটির গ্রাম আটিয়া। পাশেই রয়েছে শাহান শাহ আদম (কাশ্মিরী) মাজার শরীফ। এজন্য গ্রামটির পরিচিতি দেশব্যাপী। এবার পাঙাশের গ্রাম নামে নতুন পরিচয় আটিয়া গ্রাম। বাড়ি-বাড়ি পুকুর। ঘরে-ঘরে চাষি। পুকুরের মাটি ও পানির গুণগত মান এবং পুষ্টিকর খাবারে উৎপাদিত পাঙাশ জেলার মানুষের আস্থা কুড়িয়েছে। 

গত কয়েক বছরে ধাপে-ধাপে বেড়ে খাবারের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় পাঙাশ চাষের আগাম দিনগুলো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। খাবারের দাম কমানো, মাছ সরবরাহের ব্যবস্থাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এই মুহূর্তে জরুরি বলে মনে করছেন এই গ্রামের চাষিরা।

পাঙাশ চাষি আসাদের এখন চারটি পুকুর। দুইটিতে ৩০ হাজার পাঙাশ চাষ করেন। বাকি দুইটি পুকুরে পোনা মজুদ রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম এই গ্রামে পাঙাশ চাষ শুরু করি। গ্রামে এখন দেড় শতাধিক পুকুরে এই মাছ চাষ হচ্ছে। বর্তমানে খাবারের দাম দ্বিগুণ। ৭/৮ শ’ টাকা মূল্যের খাবারের বস্তা হয়েছে ১৭/১৮শ টাকা। মাছের দাম আগের মতোই রয়েছে। দুইবার সেরা চাষির পুরস্কার পেয়েছি। বর্তমানে এই মাছ চাষ নিয়ে হতাশায় আছি।’

আসাদের পর ১৯৯৯ সালে পাঙাশ চাষ শুরু করেন বায়েজিদ হোসেন জুয়েল। তার চারটি পুকুরে ১৫ থেকে ২০ হাজার পাঙাশ পালন করছেন। জুয়েলও জানালেন মাছের খাবারের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কথা। ৩২/৩৪ টাকা কেজির খাবার হয়েছে ৫২/৫৩শ’ টাকা। প্রতি কেজিতে ১৯/২০ টাকা মূল্য বেড়েছে। খাবারের দাম কমানোর দাবি জানান এই চাষিও।

ডা. লুতফর রহমান ও জায়েদুর রহমানরা সাত ভাই মিলে ৬টি পুকুরে পাঙাশ চাষ করছেন। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডা. লুতফর রহমান নিয়েছেন বিকল্প পদ্ধতি। খাবারের সব ধরনের কাঁচামাল কিনে কারখানা থেকে ভাঙিয়ে নেন। ফলে মাছের খাবারের উর্ধ্বগতিতেও লাভের হিসাব আগের মতোই গুনছেন তিনি। কয়েকজন আবার বাড়িতে খাবার তৈরির জন্য ছোট আকারের মেশিন কিনেছেন। তাদের খাবার খরচ আরও কমে এসেছে। 

খায়রুল হোসেন বাচ্চুও চারটি পুকুরে পাঙাশ চাষ করছেন। এতদিন লাভবান হলেও বর্তমানে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় হোঁচট খাচ্ছেন তিনি।

স্বামী মারা যাওয়ার পর বিধবা নারী ঝরনাও শুরু করেন পাঙাশ চাষ। স্বামীর কাছ থেকে শিখেছিলেন কিভাবে এ মাছ চাষ করতে হয়। দুই মেয়ের বিয়ের খরচ যুগিয়েছেন তিনি। বাকি দু’জনের ভরণপোষণের জন্য মাছ চাষ ছাড়েননি এখনো।

ঝরনার মতো গ্রামের অনেকেই পাঙাশ চাষে ঝুঁকছেন। ফলে এ গ্রামে বেকার নেই বললেই চলে। সবাই এখন স্বাবলম্বী। প্রতি হাজার পাঙাশ চাষ করে বছরে ২৫/৩০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন চাষিরা। একজন চাষি ২৫ থেকে ৩৫ হাজার পাঙাশ চাষ করে গ্রামের অর্থনৈতিক চাকা বদলে দিয়েছেন। একদিকে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যদিকে গ্রামের অর্থনীতিকে মজবুত করেছেন। মাছের বর্তমান পাইকারি মূল্য মণ প্রতি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা। 

দেলদুয়ার উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আটিয়ার পাঙাশ প্রসিদ্ধ। পাঙাশ চাষ করে গ্রামের অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো চাষিদের সহযোগিতা করছি। প্রশিক্ষণসহ নানা পরামর্শ দিয়ে মৎস্য অফিস সবসময় এসব মাছ চাষিদের পাশে আছে।’

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়