ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হলুদের আঙিনায় শিশুদের খুনসুটি

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০২, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৪:০৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১
হলুদের আঙিনায় শিশুদের খুনসুটি

শীতের এমন সময় ফসলি জমির মাঠজুড়ে যতদূর চোখ যায়, শুধু হলুদ রঙ দেখা যায়। সবুজ রঙের ধানী জমিগুলো যেন হলুদ ফুলের গালিচায় পরিণত হয়। দিগন্তজোড়া সবুজের রাজ্য যেন সরিষা ফুলের দখলে। এসময় প্রকৃতির নির্মল বাতাসে ভেসে বেড়ায় মাতাল করা ঘ্রাণ। মৌমাছিরাও দলে দলে ছোটে মধু আহরণে। আবার কখনো দেখা মেলে শিশুদের খুনসুটি।

সাধারণত কৃষকরা কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সরিষার বীজ বপন করেন। শীতকালে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে তাই গ্রামের মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় এ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ লক্ষ্য করা যায়। আমন ধান ঘরে তোলার পরপরই কৃষকরা ওই জমিতে সরিষা চাষ শুরু করেন। তাই কৃষকরা এমন মৌসুমে সরিষা চাষকেই বেছে নেন। যেখানে ক্ষতির সম্ভাবনা কম, লাভ থাকে বেশি। এখন সরিষা গাছগুলোতে দানা বাধতে শুরু করেছে। আবার কোথাও কোথও পুরোদমে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। 

প্রকৃতিপ্রেমীরাও এমন সব ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে ছুটছেন ফসলি মাঠে। ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর গন্ধে মাতোয়ারা হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শোভা পাচ্ছে হলুদ রঙের দৃষ্টিনন্দন ছবি। কেউ কেউ আবার দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। হলুদের রাজ্যগুলো মুখর দর্শনার্থীদের পদচারণায়। সবাই নিজেদের মতো করে প্রকৃতির সাথে মিলে যাচ্ছেন।

কৃষক রমিজ আলী রাইজিংবিডিকে জানান, কম পুঁজিতে সরিষা চাষে দ্বিগুণ লাভ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ করে ৭ থেকে ৮ মণ সরিষা উৎপাদন করা যায়। আবার সরিষা ঘরে তোলার পর ওই জমিতেই ধান চাষ করেন তিনি। সরিষা আবাদের কারণে ওই জমিতে বাড়তি হাল চাষ, সার, কীটনাশক ঔষধও দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাই তার মতো অনেকেরই সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।

আরেক কৃষক জামিল মিয়া বলেন, স্বল্প খরচে অধিক ফলন ও ভালো দাম। তাই প্রতিবছরই এ সময়ে সরিষার আবাদ করি। বীজ বপনের সর্বোচ্চ ৮০ দিনের মধ্যেই সরিষার ফলনও ঘরে তুলতে পারি। আমন তোলার পর এই সময়ে জমিতে সরিষার চেয়ে আর কোনো ভালো ফসল হতেই পারে না। 

এমন সুন্দর জায়গা পেয়ে প্রতিদিনই সকাল-বিকাল ছোটাছুটি করে শিশুরা। নাবিলা, সাকিব ও হাবিবার প্রতিদিনের কাজ সরিষা ক্ষেতে ঘুরে বেড়ানো আর ফুল নিয়ে ঘরে ফেরা। মৌমাছি ও প্রজাপতির সাথে মিতালী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। তাই সরিষা ফুলের মাঠ তাদের খুব প্রিয়। ফুলের গন্ধও তাদের অনেক ভালো লাগে।


 
সরিষা ফুলের সৌন্দর্য‌ দেখতে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পর্যটকরা ছুটে যান। নরসিংদী থেকে আসা মাহাতাব বিনতে ফয়সাল বলেন, এমন সৌন্দর্য‌ কাছ থেকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। এখানে আমার আত্মীয়ের বাড়ির সুবাদে প্রতিবছরই এমন সময়ে এখানে ছুটে আসি। বিশাল এক হলুদের মাঠ। আসলেই যে সুঘ্রাণটি অনুভব করি, সেটি ভাষার প্রকাশ করার মতো নয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ছাইফুল আলম বলেন, সরিষা ফুলের চাষ কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসময় কৃষকরা বোরো চাষ ব্যহত না করে, স্বল্প সময়ে একটি বাড়তি ফসল উৎপাদন করতে পারে। কৃষকরাও লাভবান হয়, পাশাপাশি জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এ ফসলটি দেশের তেলের চহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি কৃষকরা মৌ চাষ করে মধু আহরণ করেও ৩০ ভাগ বেশি লাভ করতে পারে। তাই দিন দিন এ জেলায় সরিষার আবাদ লক্ষ্যণীয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবছর জেলায় ৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে সাত মণ হারে সরিষার ফলন হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, কিশোরগঞ্জ জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সরিষা উৎপাদন হতে পারে।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়