ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মানসিক ভারসম্যহীনদের জন্য আশীর্বাদ মিন্টু

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ৬ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৩:৫৭, ৬ জানুয়ারি ২০২২
মানসিক ভারসম্যহীনদের জন্য আশীর্বাদ মিন্টু

কেটে দেওয়া হচ্ছে হাতের ময়লাযুক্ত নখ। গোসল করিয়ে পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে গন্ধযুক্ত শরীর। আবার চুল কেটে পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। দেখে মনে হচ্ছে নিজের কোনো আপনজনকে এভাবে সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছেন। এভাবে নিজের আপনজনের মতো করে প্রায় দুই বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনদের সেবা দিয়ে চলেছেন মোজাম্মেল হক মিন্টু নামে এক যুবক। 

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের নাচনাপাড়া মহল্লার আজিজুক হকের ছেলে মিন্টু। রাস্তায় পরে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়েই তার চিন্তা। করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর থেকেই এসব মানুষদের খুঁজে বের করে এক বেলা করে খাবার দিচ্ছেন তিনি। তাদের দিয়েছেন শীতবস্ত্র। এছাড়া কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ মারা গেলে তার দাফনসহ সব কাজই সম্পন্ন করছেন তিনি। 

মিন্টুর এমন কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার কিছু বিত্তমান মানুষ। তবে মানবিক এ কাজ করতে গিয়ে তিনি হারিয়েছেন হোটেল কর্মচারীর চাকরি। বিক্রি করে দিয়েছেন নিজের ১০ শতাংশ জমি। সব কিছু হারিয়ে মানসিক ওই সব রোগীদের সেবা করতে পেরেই খুশি মিন্টু। 

মিন্টু বলেন, ‘দুই বছর আগে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর শরীরে পোকা ধরে। তাকে হাসপাতালের সামনে ফেলে রেখে চলে যায় কে বা কারা। ওই নারীর গাঁ থেকে গন্ধ বের হচ্ছিল। কেউই তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। পরে আমি ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাই। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে বরিশালে নিয়ে চিকিৎসার করাই। কিন্তু ওই নারী মারা যান। সেদিন থেকেই আমি রাস্তায় ঘোরাফেরা করা মানসিক ভারসাম্যহীনদের সেবা করবো বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এরপর থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীনদের সেবা করে আসছি।’ 

চাকরি চলে যাওয়া কিংবা জমি বিক্রির কোনো দুঃখ নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ওদের একবেলা খাওয়াতে পারছি এতেই আমার সুখ। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে আমার এই কাজটা আরো সহজ হতো।’

মিন্টুর বাবা আজিজুল হক বলেন, ‘আমার ছেলে এ কাজ করতে গিয়ে সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছে। এতে মিন্টুর মনে বিন্দু মাত্র দুঃখ নেই। কারণ সে মানবিক কাজ করছে।’

মিন্টুর স্ত্রী অঞ্জলী আক্তার জুঁই বলেন, ‘স্বামীর কাজে আমি নিজেও সহযোগিতা করছি। আমি আমার স্বামীর এমন কাছে সহযোগিতা করতে পেরে অনেক খুশি।’ 

কলাপাড়া পৌর শহরের অনামিকা বিজনেস সেন্টারের স্বত্বাধিকারী দেবাশীষ মুখার্জি টিঙ্কু বলেন, ‘মিন্টুর এ কাজ আসলে সব মানবিকতাকে হার মানিয়েছে। তাকে প্রায়ই তিনি সহযোগিতা করেন।’

কলাপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারী মস্তফা মিয়া বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্যে। মিন্টুর এ কাজ সেটিকে প্রমাণ করেছে।’ 

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রাকিবুল আহসান বলেন, ‘মিন্টুকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া ভবিষ্যতে তাকে এ মহতী কাজ চালিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

ইমরান/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়