ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মাশরুমে স্কুলশিক্ষার্থীর মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা 

এইচ মাহমুদ, নরসিংদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২২, ১১ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১২:৩০, ১১ জানুয়ারি ২০২২
মাশরুমে স্কুলশিক্ষার্থীর মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা 

ছবি: রাইজিংবিডি

আব্দুল্লাহ, স্কুলশিক্ষার্থী। নরসিংদী সদর উপজেলার পৌরশহরের বীরপুর মহল্লার সন্তান। বাড়ির ছাদে মাশরুম চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে সে। চাষ শুরু করার ছয় মাসের মাথায় এখন তার প্রতিমাসে গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তার বাগানের নাম ‘ফিউচার মাশরুম সেন্টার’। 

বাবা মকবুল হোসেনের আদরের সন্তান সে। নরসিংদী আইডিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার এ সাফল্য দেখে অনেকেই এখন মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

আব্দুল্লাহ জানায়, সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে ট্রেনিং নিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে গত বছরের মাঝামাঝি বাড়ির ছাদে মাশরুম চাষ শুরু করে। এখন তার সেন্টারে ১ হাজারের উপরে খড়ের স্পন প্যাকেট রয়েছে। বর্তমানে তার বিনিয়োগ ২ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল্লাহর তিনতলা বাড়ির ছাদের একপাশে টিনের শেড। শেডের নিচে পাটের রশির শিক্কা। শিক্কায় ঝুলছে মাশরুমের বীজপত্র স্পন। খড় দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো এই বীজপত্রের চারপাশ দিয়ে ছোট-বড় মাশরুম উঁকি দিচ্ছে।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে সারাদেশের ন্যায় যখন তারও স্কুল বন্ধ, সেসময়ে বাসায় বেকার বসে না থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি নতুন কিছু শেখার এবং করার প্রত্যয়ে সে অনলাইনে মাশরুম সম্পর্কে জানতে আগ্রহ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে একটি প্রশিক্ষণ কোর্স করে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে মাশরুম ফার্ম করার উদ্যোগ নেন। ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে চাষ শুরু করেন। প্রথমে কোনোরকমে আয় আসলেও গত দুইমাস ধরে অনেকটা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি বাবার কাছ থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। গত ছয় মাস কাজ করেছি, তিন মাস লাগে একটা বীজপত্র বা মাইসিলিয়াম শেষ হতে, প্রতিটি মাইসিলিয়াম থেকে দেড় কেজি মাশরুম আসে। প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি হয় ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। এখন আমার পুঁজি ২ লাখের বেশি টাকা। মোট আয় হয় মাস প্রতি ৩৫-৪০ হাজার টাকার বেশি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে গড়ে আমার ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকছে।’ 

মাশরুম চাষ পদ্ধতি নিয়ে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘খড়, কাঠের গুঁড়া, ভুসি, তুষ ও চুন দিয়ে নিজেরাই মাশরুমের বীজ তৈরি করা যায়। পরে বীজের সঙ্গে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সেন্টার থেকে আনা টিস্যু কালচার যুক্ত করে সঠিক পরিচর্যা ও নিয়মিত পানি স্প্রের ২০ দিনের মাথায় শুরু হয় ফলন। এ কাজে তেমন একটা পরিশ্রম নেই।’

মাশরুম বাজারজাতকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশে প্রতিদিন প্রায় সবাই মাশরুম খেয়ে থাকেন। এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। তবে আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত মাশরুমটা সমাজের সব স্তরে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কেউ কেউ ব্যাঙের ছাতা বলে থাকেন। আমরা একে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকি। অনলাইনে অর্ডার নেই, পরে কুরিয়ার করে পাঠাই। আবার অনেকে এসে বাড়ি থেকেই নিয়ে যায়। তবে বেশিরভাগই মাশরুম আমার বাড়ি থেকে লোকজন এসে নিয়ে যান।’

আব্দুল্লাহর পিতা মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের এইরকম কাজে আমি অত্যন্ত খুশি। অবসর বসে না থেকে সে যে উৎপাদনমুখী কাজ করছে, এটাই অনেক।’

নরসিংদী আইডিয়াল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনজিল-এ মিল্লাত বলেন, ‘কোভিড-১৯ মানুষকে যেমন আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। আবার কাউকে নতুন করে শিক্ষার পথও দেখিয়েছে। তারই অনুকরণ আমার এ ছাত্র আব্দুল্লাহ। কোভিডের কারণে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, সে তার সময়টা নষ্ট না করে পড়াশুনার পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে নিজের একটা আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছে। আমি তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’  

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মাহবুবুর রশীদ বলেন, ‘মাশরুম চাষে এখনো পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে কোনো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা শুরু হয়নি। তবে, সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে যে কেউ। এছাড়া, আঞ্চলিকভাবে নরসিংদীতে যারা মাশরুম চাষ করে, সহজভাবে বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে আমরা তাদের বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেই।’

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়