ফার্মে খাদ্যের যোগান দিতে বাড়ছে ভুট্টা চাষ
রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম
গাজীপুরের কালীগঞ্জে চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় চাষিরা। উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ওইসব ফার্মের খাদ্যের যোগান দিতে স্থানীয় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তা ছাড়া, ভুট্টা চাষ সহজ ও লাভজনক। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে উৎপাদন হবে দ্বিগুণ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, কালীগঞ্জ পৌর এলাকাসহ উপজেলার তুমলিয়া, নাগরী, বক্তারপুর, জাঙ্গালীয়া, মোক্তারপুর, জামালপুর ও বাহাদুরসাদী ইউনিয়নে ভুট্টার আবাদ হয়। তবে উপজেলার জামালপুর ইউনিনে ভূট্টার আবাদ একটু বেশি হয়। আর স্থানীভাবে উৎপাদিত ভুট্টার জাতগুলোর মধ্যে সুপার সাইন ২৭৬০, রাজলক্ষ্মী ৩৩৫৫। তবে এই দুটি জাতের মধ্য সুপার সাইন ২৭৬০ বেশি চাষ হয়। ভুট্টা চাষের মোট ২১ হেক্টর জমির মধ্যে ১৯ হেক্টর জমিতে সুপার সাইন ২৭৬০ চাষ হলে বাকী ২ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে রাজলক্ষ্মী ৩৩৫৫।
সূত্র আরও জানায়, স্থানীয় কৃষকরা গত বছর মাত্র ১২ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছে। সে বছর ওই পরিমাণ জমিতে ৮ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপন্ন হয়। কিন্তু এ বছর ২১ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। তবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করলেও গত বছরের উৎপাদনের তুলনায় চলতি বছরে উৎপাদন দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি অফিস।
উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের উত্তর খৈকড়া গ্রামের ভুট্টা চাষি মোক্তাজুল খান (৩৫) জানান, গত বছর তিনি কৃষি অফিসের সহযোগীতায় ১ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। ওই বছর ফলনও ভালো ছিল। প্রায় ৪৫ মণ উৎপাদিত ভুট্টা পুরোটাই তিনি গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এবারও তিনি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ২ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। আশা করছেন এ বছর বাম্পার ফলন হবে। আর ফলনকৃত ভুট্টার কিছু গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বাকিটা তিনি বিক্রি করে দেবেন।
জামালপুর ইউনিয়নের খাগড়াচর এলাকার ভুট্টা চাষি আবু তাহের (৪৭) বলেন, আমি গত বছর আধা বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। স্থানীয়ভাবে মাছ ও গরু খামারিদের কাছে ভুট্টার বেশি কদর থাকায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় এবার আমি ১ বিঘা জমিতে সুপার সাইন ২৭৬০ জাতের ভুট্টার চাষ করেছি। এ ছাড়া, ওই ১ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে ডিএপি, এমওপি সার ও বীজ পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
একই এলাকার ভুট্টা চাষি মোর্শদা বেগম (৪৫) জানান, তিনি গত বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। এবারও তিনি একই পরিমাণ জমিতে সুপার সাইন ২৭৬০ জাতের ভুট্টার আবাদ করেছেন। তবে এ বছর তার পুরো জমিতে কৃষি অফিসের অধীনে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে একটি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। আর তাতে তিনি বিনামূল্যে ডিএপি, এমওপি সার, বীজ ছাড়াও বালাইনাশক ও কীটনাশক পেয়েছেন।
উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর ব্লকের দায়িত্বে থাকা কৃষি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, জামালপুর ইউনিয়নের খাগড়াচর এলাকার ভুট্টার ফলন উপজেলার অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে চোখে পড়ার মতো। তা ছাড়া, চাষিদের উৎপাদন করা ভুট্টা নিজেদের গরুর খামারে গরুর খাদ্য ও মৎস্য খামারে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। ভুট্টা চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়ায় এখানকার কৃষকের মাঝে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, কালীগঞ্জে প্রচুর ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওইসব ফার্মের খাদ্যের জোগান দিতে কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আর ভুট্টা চাষ এগিয়ে নিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। আমরা প্রণোদনা কর্মসূচি ও রাজস্ব প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভুট্টার প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছি। এ বছর সরকারের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে স্থানীয় ২শ কৃষককে বিনামূল্যে ২ কেজি করে ভুট্টার বীজ ও ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে। তা ছাড়াও, সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ১০টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ব্লকের দায়িত্বে থাকা কৃষি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত ভুট্টার ক্ষেত পরিদর্শনসহ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর ভুট্টার ফলন যেভাবে দেখা যাচ্ছে, তাতে স্থানীয় কৃষক আগামী বছর ভুট্টা চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে। তবে এ বছর হেক্টর প্রতি সাড়ে ৮ থেকে ১০ টন করে ভুট্টার ফলন পাবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
/মাহি/
আরো পড়ুন