ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

স্বপ্নপূরণে ব্যস্ত রানা প্লাজায় এতিম হওয়া ৬৬ শিশু

সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ২৪ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১৪:৫২, ২৪ এপ্রিল ২০২২
স্বপ্নপূরণে ব্যস্ত রানা প্লাজায় এতিম হওয়া ৬৬ শিশু

বিথি, সাগরিকা, মুক্তা, জেবা, আয়সা, জিম, স্বপন, আসিফসহ ৬৬ জন ফুটফুটে কিশোর কিশোরী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজার ট্রাজেডিতে এদের মতো অনেকেই এতিম হয়ে যায়। এদের কারো নেই বাবা, কারো নেই মা আবার কারো বাবা-মা দুজনই নেই। 

ঘরবাড়ি থাকতেও এখন তাদের আশ্রয় হয়েছে ‘অরকা হোমর্স’-এ। তারপরও কেউ থেমে নেই। তারা পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কেউ হতে চায় ডাক্তার, ইঞ্চিনিয়ার, পাইলটসহ নানা স্বপ্ন ওদের চোখে। ওদের ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়নের চেষ্টার কোনো কমতি নেই কর্তৃপক্ষের। 

গাইবান্ধা থেকে নারী ও পুরুষ শ্রমিক পেটের দায়ে সন্তান ও মা-বাবার মুখে খাবার তুলে দিতে কাজ নেয় পোশাক কারখানা ‘রানা প্লাজা’য়। এখানে তাদের এভাবে জীবন দিতে হবে, তা তারা কোনোভাবেই বুঝতে পারেনি। 

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়লে সহশ্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। কারো মরদেহ উদ্ধার হয়, কারো মরদেহ পর্যন্ত মিশে গেছে দেয়ালের সাথে। সরকারি সিন্ধান্ত অনুযায়ী নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ নগদ অর্থসহ স্বজন ও শিশু, কিশোর-কিশোরীদের লালন পালনে এগিয়ে আসে বিজিএমইএ। 

তারা ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন-‘অরকা হোমস’-এর মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে পিতৃমাতৃহীন শিশুদের মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা হাতে নেয়। এই কর্মসূচির আওতায় গাইবান্ধার কঞ্চিপাড়া পল্লীতে গড়ে ওঠে বিশাল অবকাঠামো নিয়ে বেসরকারি সংগঠন ‘অরকা হোমস’। 

চারদিকে দেয়াল ঘেরা একাধিক চারতলা আবাসিক ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিহতদের মধ্যে সারাদেশের শ্রমিক থাকলেও গাইবান্ধার প্রায় ২ শতাধিক নারী-পুরুষকে প্রাণ দিতে হয়। এদের মধ্যে যাদের কোথাও কোনো ঠাঁই হয়নি, যাদের স্বজনরা নিহতের শিশুদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায়, তাদের মধ্যে অনেকের ঠাঁই হয়েছে এই অরকা হোমসে। 

তাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে হলেও বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর এদের ঠাঁই হয়েছে গাইবান্ধায় অরকা হোমসে। আহত-পঙ্গু মায়ের সন্তান রংপুরের জেবা আকতার, মুক্তা বানু, মা হারানো শিশু সাগরিকা ও বাবা-মা হারানো আল আমীন। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের আহত মায়ের ছেলে জীম, পাবনার বাবা-মা হারানো আসিফ মনির, স্বপন ইসলাম, আহত মায়ের কন্যা পাবনার আয়শা আকতারের মতো বাবা-মা হারানো ৬৬ শিশুর আশ্রয় জোটে এখানে। তখন এরা সবাই শিশু ছিল, এখন কেউ কিশোর-কিশোরী আর তরুণ-তরুণী। শিশুদের বিকাশ ও স্বপ্ন পূরণে শিশুদের দেওয়া হয় বাবা-মায়ের আদর। বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করেন বাবা মিল্লাত মন্ডল ও মা নুরজাহান বেগম। শিশুদের রাতদিন পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন তারা। 

মিল্লাত মন্ডল বলেন, আমি ৬৬ জন সন্তানের বাবা হিসাবে গর্ব করি। ওদের সাথে কাটে আমার কাছে রাতদিন। সব সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেই। কার কী দরকার, কখন কে কী খাবে, সব বাবার মতো পূরণ করতে চেষ্টা করি। 

নুরজাহান বেগম বলেন, নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আমি এতগুলো মেয়ের মা হয়ে আছি। রাতদিন সব সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়ে চলি। ওরা তো ছোট ছিল, তখন থেকে এখন ওরা বড় হলেও আমার কাছে শিশু বাচ্চা। 

অরকা হোমসের পরিচালক জাহেদুল হক বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর আমরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে অনেক বাবা-মা হারানো শিশুর দায়িত্ব নিয়েছি। তাদের পড়ালেখা, খাওয়া-দাওয়া, কাপড়-চোপড়সহ যাবতীয় কাজে আমরা সহযোগিতা দিয়ে থাকি। ওরা তো ছিল শিশু কিন্তু এখন ১০ বছরে ওরা অনেক বড় হয়েছে। ওদের অনেক স্বপ্ল বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে থাকি। 

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়