প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পাচ্ছেন গাজীপুরের সেই মনিরা সুলতানা 

গাজীপুর শহরের জোড়পুকুর পাড় এলাকার বিদেশ ফেরত মনিরা সুলতানা মুনমুন। বাড়ির ছাদে ব্যতিক্রমী ছাদকৃষি জন্য এবার 'বাড়ির ছাদে বাগান সৃজন' ক্যাটাগরিতে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি। মনিরা সুলতানা তার স্বামী আকরাম হোসেনের সহযোগিতায় গত ৮ বছরে তার বাড়ির ছাদ সাজিয়েছেন নিজের স্বপ্নের মতো করে। 

মঙ্গলবার (২৪ মে) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা দীপঙ্কর বরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মনিরা সুলতানাসহ অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পুরস্কারপ্রাপ্তির তথ্য জানা যায়।

মনিরা সুলতানার ছাদকৃষি নিয়ে গত বছরের মার্চ মাসে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে নিউজ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে মনিরার ছাদকৃষি সম্পর্কে সাধারণ মানুষসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর জানতে পারে। 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে রোববার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার -২০২০' পদকসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও পদক মূল্যায়ন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো . আখতারুজ্জামানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারের জন্য এ বছর সাত ব্যক্তি ও ১৬ প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয় । 

মনিরা সুলতানা বলেন, ‘পুরস্কার সবসময় আনন্দের। পাশাপাশি এটি কাজ ও দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। কৃষিছাদ করতে পারায় আমি আমার পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞ। 

মনিরা সুলতানার ছাদে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বড় বড় সব পানির পাত্রে উঁকি দিয়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা ও পদ্ম। পাশেই বড় ধরনের পানির হাউস তৈরি করা হয়েছে। সেখানে লাফালাফি করছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ছাদজুড়ে যেন প্রাণ-প্রকৃতির খেলা চলছে। বাহারি ফুল, ফল, সবজি, ঔষধি গাছ, লতাগুল্মে ছেয়ে আছে ছাদের চারপাশ। ছাদের দক্ষিণ পাশে পাখিদের বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেখানে একটু পর পর উড়ে এসে বসছে ঘুঘু, বুলবুলি, শালিক, চড়ুই। 

মনিরা সুলতানা শখের বশে ২০১৪ সালের দিকে অল্প কিছু গাছ এনে ছাদে লাগিয়েছিলেন। এরপর হঠাৎ মাথায় এলো কীভাবে এটিকে উৎপাদনমুখী ও বাণিজ্যিক করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের ওষুধি গাছ, সবজি ও নানা ধরনের ফলের গাছ আমদানি করেন। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ফেসবুকে ‘প্ল্যান্টস ফ্রম মুন’ নামের একটি গ্রুপ খোলেন। সেখানে সদস্য হন অনেকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে চলছে তার বাগান পরিচর্যা। এছাড়া মাছ পালনের পানির হাউস থেকে ফাইটোপ্লাংকটন মিশ্রিত পানি দেওয়া হচ্ছে গাছের গোড়ায়।

মনিরা সুলতানার ছাদ বাগানে ওষুধি গাছের মধ্যে আছে অর্জুন, আমলকী, বহেরা, হরীতকী, ঘৃতকুমারী, নিম, তুলসী, থানকুনি, বাসক, পেইন কিলার, অ্যাড্রেসিয়া বেরি, ডেইজি, কিডনি প্ল্যান্ট, ভ্যানিলা অর্কিড, কর্পূর, জয়ত্রী, গোলমরিচ, সুইট রেসিন, ট্রি রেসিন, কারি পাতা প্রভৃতি।  সবজির মধ্যে আছে লেটুস, করলা, ধনেপাতা, বেগুন, কাঁকরোল, পটল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লাউ, লাল ঢেঁড়স, শিম, শসা, টমেটোসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতি।

মনিরা সুলতানা উৎপাদন করছেন জৈব সার। গাছগুলোর গোড়ায় মাটি না দিয়ে সেখানে দেওয়া হচ্ছে নারকেলের ছোবড়া ও অন্য কৃষি উপকরণ। ছাদকৃষি শুধু নিজের মধ্যে না রেখে তিনি তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্যদের মাঝেও। 

আরো পড়ুন: মনিরা সুলতানার ব্যতিক্রমী ছাদকৃষি