ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

তফসিলের আগে খালেদার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ চায় বিএনপি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তফসিলের আগে খালেদার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ চায় বিএনপি

 জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ চেয়েছে দলটি।

একই সঙ্গে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এছাড়াও নির্বাচনে ইভিএম বাতিল, সেনা মোতায়েন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের  দাবিও জানিয়েছে তারা।

রোববার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় দলটির পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি এবং ৯ লক্ষ্যের কথা জানানো হয়।

এতে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিএনপির দাবিগুলো এবং ক্ষমতায় আসলে বিএনপি কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে সেই বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

জনসভায় সভাপতির বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব দাবি ও লক্ষ্য গুলো তুলে ধরেন।

৭ দফা দাবি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তারেক রহমানসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি, সংসদ বাতিল করে সরকারকে পদত্যাগ করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার, ভোটকেন্দ্রে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম বাতিল, নির্বাচনের স্বচ্ছতার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও তাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ না করা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’



এছাড়া ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যে বিষয়গুলোকে সামনে রেখে দেশ পরিচালনা করবে সেগুলোও তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।

এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করে ন্যায়ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ করার জন্য দলীয়করনের বিপরীতে গণতান্ত্রিক ধারার প্রচলন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ ও বিচারবিভাগের স্বাধীণতা নিশ্চিত করা, স্বশস্ত্র বাহিনীকে আরো আধুনিক ও কার্যকর করা, দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রভাবমুক্ত রাখা, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নেই- এই নীতির আলোকে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভুখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে মিল রেখে বেতন নির্ধারণ এবং আয় বৈষম্য দূর করে ভারসাম্য আনতে সমতাভিত্তিক নীতি গ্রহণ, সকলের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য বেকার ভাতা, কৃষি সম্প্রসারণে কার্যকর পদক্ষেপ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐক্য, সৃষ্টি প্রভৃতি।

ঐক্যনবদ্ধ হওয়ার ডাক
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সবাইকে ঐক্যিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে খুন-গুম করছে। যেসব মিথ্যা। মামলা হচ্ছে সেসব মামলায় কোনো ভিত্তি নেই। এগুলোর জন্য  ভবিষ্যততে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকারের কেউ-ই রেহাই পাবে না। তারা ১০ বছর লুট করেছে আরো লুট করতে চায়।

খালেদা ছাড়া নির্বাচন হবে না
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে কোনো অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন হবে না এবং বিএনপি সেই নির্বাচন আয়োজন করতে দেবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।



তিনি বলেন, ‘এই দেশের মানুষ আর ফ্যা সিস্ট সরকারকে দেখতে চায় না। সরকারের এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন কোনো খাত নেই, যে খাতে লুট হয়নি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ঐক্যেসর ডাক দিয়েছে। সেই ঐক্যের ডাক দেশের মানুষ গ্রহণ করে ঐক্য বদ্ধ হয়েছে।’    

৭ দিনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন  বাতিল
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ৭ দিনের মধ্যে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকদের একজন ব্যা রিস্টার মওদুদ আহমদ।

আইনের বেশ কয়েকটি ধারা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই আইন জঘন্যিতম কালো আইন। এসব সংবিধানের পরিপন্থি। সরকারের অপকর্ম যাতে গণমাধ্যমমে প্রকাশ না পায় সেজন্যথ নির্বাচনের আগে এই আইন করা হয়েছে।’ আইনটি বাতিলে সরকারকে চাপ দিয়ে গণমাধ্যাম সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যা।

বিএনপিকে রাজপথে প্রতিহত করার যে ঘোষণা আওয়ামী লীগ দিয়েছে- সেই প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ন আন্দোলনে বাধা দেওয়া হলে আমরা প্রতিহত করবো। এবার ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা প্রতিহত করবেন আর আমরা ঘরের মধ্যেও বসে থাকবো? যদি সেটা ভেবে থাকেন তাহলে এটা দু:স্বপ্ন।’



প্রায় ১০ মাস পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যাানে এই জনসভা করলো বিএনপি, যেখানে দলটির চেয়ারপারসন কারান্তরীণ খালেদা জিয়ার জন্য  একটি চেয়ার রাখা হয়। এর কারণ ব্যা খ্যাে দিতে গিয়ে নেতারা বলেন, যেদিন খালেদা জিয়া এসে এই চেয়ারে বসবেন, সেদিনই দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে।’

দুপুর ২ টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যযমে জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে নেতাকর্মীরা রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যা নার ফেস্টুন নিয়ে জনসভা স্থলে আসেন। এসবে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাাহারের দাবি জানানো হয়।   

জনসভার গন্ডি সোহরাওয়ার্দী উদ্যাান পেরিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজপথেও ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে রমনা পার্কের ভেতরেও অবস্থা নেয়। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। জনসভার ঠিক পাশেই স্থাপন করা হয় পুলিশ কন্ট্রোলরুম।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরো বক্তব্যে রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর  রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব দুলু, মাহবুবুর রহমান শামীম,  সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ।

এছাড়াও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরের নেতা কাজী আবুল বাশার, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের রাজীব আহসান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আহমেদ আজম খান, মাহমুদুল হাসান, জয়নাল আবেদীন (ভিপি), অধ্যাপক সাহিদা রফিক, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, লুৎফুর রহমান খান আজাদ, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নাজিমউদ্দিন আলম উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়