ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পশুপাখি থেকে মানুষের মধ্যে যেসব রোগ ছড়ায়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ২৩ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পশুপাখি থেকে মানুষের মধ্যে যেসব রোগ ছড়ায়

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : পশুপাখি থেকে যেসব রোগ ছড়ায় তাদেরকে জুনোটিক রোগ বলে। এ ধরনের রোগ বিস্ময়করভাবে কমন। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, মানুষের মধ্যে ছড়ানো প্রতি ১০টি পরিচিত সংক্রামক রোগের মধ্যে প্রায় ৬টি রোগ ছড়ায় পশুপাখি থেকে। সাধারণত সংক্রমিত পশু বা পশুর মল থেকে জুনোটিক রোগ ছড়ায়, কিন্তু কখনো কখনো দূষিত খাবার খাওয়ার কারণেও এসব রোগ হতে পারে। সবচেয়ে কুখ্যত জুনোটিক রোগ হলো র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক। পশুপাখি থেকে মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে এমন ১১ রোগ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* পোষা তোতা থেকে প্যারট ফিভার ছড়াতে পারে

সিটাকোসিস নামক ইনফেকশনটি প্যারট ফিভার নামেও পরিচিত। প্যারট ফিভার হলো ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশন। ডা. জিলদয়াল বলেন, ‘সংক্রমিত তোতা অথবা এই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বহনকারী অন্যান্য পাখির শ্বাসপ্রশ্বাসীয় তরল বা মল লোকজন শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে প্যারট ফিভার হতে পারে। পাখিদের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ নাও পেতে পারে, তাই এ রোগ শনাক্ত করা কঠিন।’ সিটাকোসিস মানুষের মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা ও শুকনো কাশির কারণ হতে পারে। সাধারণত এই ইনফেকশন মারাত্মক হয় না এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে এর চিকিৎসা করা যায়। এটি কিছু লোককে নিউমোনিয়ার দিকে পরিচালিত করে। সিটাকোসিস প্রতিরোধ করতে পাখির খাঁচা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন, একটি খাঁচায় বেশি পাখি রাখা থেকে বিরত থাকুন এবং একটি খাঁচার মল ও অন্যান্য বর্জ্য যেন আরেকটি খাঁচায় না পড়ে। সংক্রমিত পাখি ও খাঁচা ব্যবস্থাপনা করার সময় গ্লাভস ও মাস্ক পরা উচিত।

* কুকুর ও বিড়াল থেকে রিংওয়ার্ম ছড়াতে পারে

ডা. বার্ড বলেন, ‘অন্যতম সর্বাধিক কমন জুনোটিক স্কিন ইনফেকশন হলো রিংওয়ার্ম। নামে রিংওয়ার্ম হলেও এটি আসলে একটি ছত্রাকজনিত ইনফেকশন যা সাধারণত বিড়াল, কুকুর ও অন্যান্য পোষা প্রাণী থেকে ছড়ায়। এটি বৃত্তাকার লাল র‍্যাশের প্রকাশ ঘটাতে পারে এবং এতে আপনি চুলকানি অনুভব করতে পারেন। ডা. বার্ড বলেন, ‘এই ইনফেকশন টপিক্যাল অথবা ওরাল অ্যান্টিফাঙ্গাল দিয়ে সহজে নিরাময় করা যায়।’ রিংওয়ার্ম ঘরের আইটেমের ওপর বেঁচে থাকতে পারে, যেমন- বিছানাপত্র, আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড়। এই ইনফেকশনটি প্রাণী থেকে ছড়ায়, কিন্তু ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতেও এ ছত্রাক ছড়াতে পারে। রিংওয়ার্মে সংক্রমিত ব্যক্তি বা পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে এসেছে এমন আইটেম স্পর্শ করার আগে গ্লাভস পরুন এবং পোষা প্রাণী ধরার পর সবসময় হাত ধুয়ে ফেলুন।

* সরীসৃপ ও উভচর থেকে স্যালমোনেলা ছড়াতে পারে

স্যালমোনেলার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ততা রয়েছে দূষিত খাবারের। কিন্তু ডা. ফিয়োরিটো বলেন, গিরগিটি, সাপ ও কচ্ছপের মতো সরীসৃপ এবং ব্যাঙ ও স্যালামান্ডারের মতো উভচর প্রাণীর সংস্পর্শ থেকেও স্যালমোনেলা ইনফেকশন হতে পারে। স্বাস্থ্যবান মানুষদের মধ্যে স্যালমোনেলার উপসর্গ সাধারণত ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, জ্বর ও বমিতে সীমাবদ্ধ থাকে এবং চিকিৎসা ছাড়াই সেরে ওঠে। কিন্তু দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকদের (যেমন- শিশু ও বয়স্ক) ক্ষেত্রে এই ইনফেকশন মারাত্মক হতে পারে, এমনকি প্রাণনাশকও। যদি সন্দেহ করেন যে আপনার স্যালমোনেলা ইনফেকশন হয়েছে, তাহলে ডাক্তারের কাছে ভিজিট করুন।

* অ্যাকুরিয়ামের মাছ থেকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে

ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা হলো একটি বিরল স্কিন ইনফেকশন যা সাধারণত সেসব লোকের হয়ে থাকে যারা মাছের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন, আমেরিকান অস্টিওপ্যাথিক কলেজ অব ডার্মাটোলজি অনুসারে। ডা. বার্ড বলেন, ‘মাইকোব্যারিয়াম মেরিনাম দ্বারা ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা বিকশিত হয়। এটি সেসব লোকের হাতে লাল স্ফীত ক্ষত নিয়ে আবির্ভূত হয় যারা হাতে অ্যাকুরিয়ামের মাছ ধরেন অথবা অ্যাকুরিয়াম পরিষ্কার করেন।’ পেট শপ স্টাফ, অ্যাকুরিয়াম ওয়ার্কার এবং জীবিত শেলফিশ নিয়ে কাজ করা লোকেরা বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে, কিন্তু অ্যাকুরিয়ামের মাছ অথবা অ্যাকুরিয়ামের সংস্পর্শে আসা যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই ইনফেকশনের সর্বাধিক কমন স্থান হলো প্রধান হাতের পিঠ, যেখানে যন্ত্রণাদায়ক ক্ষত বিকশিত হতে পারে। ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা নিরাময় করতে অ্যান্টিবায়োটিকের একটি লম্বা কোর্স প্রয়োজন হতে পারে, যদিও সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে দুই বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা প্রতিরোধ করতে পেট ফিশ বা জীবিত শেলফিশ ব্যবস্থাপনা অথবা ফিশ ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের সময় ওয়াটারপ্রুফ গ্লাভস পরুন এবং নন-ক্লোরিনেটেড স্ট্যান্ডিং ওয়াটারে ত্বকের সংস্পর্শ সীমিত করুন।

* খামারের পশু থেকে লেপ্টোস্পাইরোসিস ছড়াতে পারে

লেপ্টোস্পাইরোসিস বা ওয়েইল’স রোগ হলো একটি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন যা সাধারণত খামারি অথবা পশু (যেমন- গরু, ভেড়া ও শূকর) পালনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত লোকদের মধ্যে ছড়ায়। ডা. অ্যাডিলিন পিটারস বলেন, ‘লেপ্টোস্পাইরোসিস সাধারণত সংক্রমিত পশুর মূত্রের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়। উপসর্গের তীব্রতা সাধারণত হালকা ও ফ্লু’র মতো হয়ে থাকে। অধিক তীব্র ইনফেকশনে চোখ বা ত্বক হলুদ হতে পারে অথবা লিভার ও কিডনি অকার্যকর হতে পারে।’ ঘোড়া, কুকুর ও ইঁদুরও এই ইনফেকশন বহন করতে পারে, যা প্রায়ক্ষেত্রে দূষিত পানি, ছেঁড়া ত্বক অথবা চোখ-নাক-মুখের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসায় এই ইনফেকশন তিন সপ্তাহ থেকে একমাসের মধ্যে নিরাময় হয়, কিন্তু চিকিৎসা না করলে সেরে ওঠতে কয়েক মাস লাগতে পারে।

* পশুর লালা থেকে র‍্যাবিস ছড়াতে পারে

অন্যতম মারাত্মক জুনোটিক রোগ হলো র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক। চিকিৎসা না করলে এ ভাইরাসটি সবসময় মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়। ডা. জিলদয়াল বলেন, ‘এ রোগটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সংক্রমিত করে এবং জরুরিভাবে মেডিক্যালি চিকিৎসা করা না হলে মৃত্যু অবধারিত বললেই চলে। প্রায়ক্ষেত্রে সংক্রমিত কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বেজি ও বাদুরের লালার মাধ্যমে র‍্যাবিস ছড়ায়, প্রকৃতপক্ষে যেকোনো স্তন্যপায়ী প্রাণী এ রোগটি ছড়াতে পারে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, র‍্যাবিসের প্রাথমিক উপসর্গ হলো মাথাব্যথা, দুর্বলতা এবং ইনফেকশনের স্থানে কিছু ফুটার অনুভূতি বা চুলকানি। এ ইনফেকশনের অগ্রগতিতে জ্বর, কনফিউশন, খিটখিটে মেজাজ বা উন্মত্ততা ও খিঁচুনি হতে পারে। র‍্যাবিসের শেষপর্যায়ে হাইড্রোফোবিয়া বা পানি দেখলেই ভীতির সঞ্চার হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উপসর্গ দেখা দিলেই ধরে নিতে হবে যে বেঁচে থাকার আশা আর নেই বললেই চলে। ডা. ফিশোরিটো বলেন, ‘বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতন থাকতে হবে যেন কোনো প্রাণীর মাধ্যমে র‍্যাবিস না ছড়ায়। কামড় ছাড়াও একজন মানুষ অন্যভাবে র‍্যাবিসে আক্রান্ত হতে পারে, যেমন- গলা বা মুখের ক্ষতে সংক্রমিত পশুর লালা প্রবেশ করলে।’ কোনো পশু কামড়ালে অথবা অন্য উপায়ে র‍্যাবিসে আক্রান্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তার দ্বারা মূল্যায়ন করতে হবে। এ রোগের একটি চিকিৎসা হলো ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে চারটি টিকা প্রয়োগ করা। র‍্যাবিসের সংস্পর্শে আসার পর অবিলম্বে চিকিৎসা নিলে প্রায় ১০০ শতাংশ কার্যকর ফল পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার

পড়ুন :


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়