ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অ্যালঝেইমারস রোগ এড়াতে যা করবেন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৮ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অ্যালঝেইমারস রোগ এড়াতে যা করবেন

অ্যালঝেইমারস রোগ হলো স্মৃতিভ্রংশের সাধারণ রূপ। এই সমস্যা তীব্র অবস্থায় চলে গেলে এটি রোগীকে তার দৈনন্দিন কাজ করতে, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজনকে চিনতে এবং কোনো কথা বুঝতে বাধা দেয়। এই রোগের কোনো নিরাময় নেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগে অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়। আলঝেইমারস ব্রেনের ক্ষয়জনিত রোগ, এটা কোনো মানসিক রোগ নয়।

অর্ধেকেরও বেশি স্মৃতিভ্রংশ রোগীদের মধ্যে অ্যালঝেইমারস রোগ ধরা পড়ে। সকল অ্যালঝেইমারস রোগীদের মধ্যে স্মৃতি সমস্যা থাকে, কিন্তু সকল স্মৃতিভ্রংশ লোকের অ্যালঝেইমারস রোগ থাকে না, বলেন রচেস্টার মিনেসোটায় অবস্থিত মায়ো ক্লিনিকের নিউরোলজিস্ট ডেভিড নপম্যান।

গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্লেকস ও ট্যাঙ্গলস নামক দুটি সঞ্চিত প্রোটিন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর কানেকশনে বাধা দিয়ে অ্যালঝেইমারস রোগ সৃষ্টি করে, এর কারণ হচ্ছে- প্রতিবন্ধকতার কারণে স্নায়ুকোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও শেষপর্যন্ত মারা যায়। এ প্রতিবেদনে অ্যালঝেইমারস রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো।

ব্রেইন স্ক্যান করুন : এমআরআই অথবা সিটি স্ক্যান হচ্ছে অ্যালঝেইমারস রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের সবচেয়ে আশাদায়ক ক্ষেত্রগুলোর একটি, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালঝেইমারস অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী। নিউরোইমেজিংয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরূপণ করে অ্যালঝেইমারস রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে, বলেন ডাউনস্টেট মেডিক্যাল সেন্টারের নিউরোলজির ক্লিনিক্যাল প্রফেসর ও নিউরোলজিস্ট গায়ত্রী দেবী। তিনি আরো জানান, স্ট্রাকচারাল ইমেজিংয়ে টিউমার, স্ট্রোকের প্রমাণ, তীব্র হেড ট্রমা জনিত ড্যামেজ অথবা মস্তিষ্কে পুঞ্জিভূত তরল ধরা পড়তে পারে। একটি বেসলাইন ব্রেইন এমআরআই মিনিস্ট্রোকের প্রমাণ দেখাতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুমান : বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করলে, অর্থাৎ চোখে ঘুম না আসলে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডে মস্তিষ্ক-ধ্বংসাত্মক প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। একটি গবেষণা ধারণা দিচ্ছে যে, মধ্যবয়সে দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের সমস্যা পরবর্তী জীবনে অ্যালঝেইমারস রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ডা. দেবী বলেন, ‘আপনাকে ঘুমের গুরুত্ব বুঝতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি হিসেবে প্রাধান্য দিন।’

সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকুন : সামাজিক নিমন্ত্রণকে হ্যাঁ বলুন। গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, বড় সামাজিক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত লোকদের অ্যালঝেইমারস রোগ ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কম থাকে। ডা. নপম্যান বলেন, ‘সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকলে মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। যারা সামাজিক কার্যক্রমে যত বেশি অংশগ্রহণ করেন, তাদের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি তত বেশি ইতিবাচক বা উন্নত হয়।’

জ্ঞানার্জন অব্যাহত রাখুন :  উচ্চতর ডিগ্রিধারী লোকদেরও অ্যালঝেইমারস রোগের ঝুঁকি কম। শিক্ষার্জনে জ্ঞানের ভাণ্ডার গড়ে ওঠে, যা স্নায়ুতাত্ত্বিক ড্যামেজ প্রতিরোধে মস্তিষ্ককে সমর্থ করে। ডা. নপম্যান বলেন, ‘অ্যালঝেইমারস রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জ্ঞানার্জনে শক্তিশালী ইফেক্ট পাওয়া যায়।’ শেখার কোনো বয়স নেই, আপনি চাইলে বয়স্ককালেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে পারেন, যা আপনাকে অ্যালঝেইমারস রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।

ভিন্ন ভাষা শিখুন : একাধিক ভাষায় কথা বলে আপনি অ্যালঝেইমারস রোগ ও অন্যান্য টাইপের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কমাতে পারেন, বলছে গবেষণা। ডা. নপম্যান বলেন, ‘কোনো গবেষকই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি যে কেন দ্বিতীয় ভাষা অ্যালঝেইমারস রোগ প্রতিরোধে এত বেশি সহায়তা করে, কিন্তু তত্ত্ব রয়েছে যে একাধিক ভাষায় যোগাযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টাতে মস্তিষ্কে ব্যায়াম চর্চা হয়, যা গ্রে ম্যাটার ও নিউরন সুরক্ষায় সাহায্য করে।’

সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন : নতুন উপায়ে আপনার মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জে রেখে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারেন, যা পরবর্তীতে অ্যালঝেইমারস রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। ডা. দেবী বলেন, ‘আমার ফোন বা কম্পিউটার অথবা ঘরের কোনো জিনিসে সমস্যা দেখা দিলে আমি প্রথমে নিজে নিজে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করি। কোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলে তা মস্তিষ্কের জন্য ভালো।’ অ্যালঝেইমারস রোগের ঝুঁকি কমাতে মস্তিষ্ককে নতুন কাজ দিতে পারেন, কারণ আপনার মস্তিষ্ক যত বেশি অলস হবে, অ্যালঝেইমারস বা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি তত বেড়ে যাবে।

সক্রিয় থাকুন : শরীর কিংবা মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য এক্সারসাইজের প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণা জানাচ্ছে, যারা নিয়মিত এক্সারসাইজ করেন তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম সংক্রান্ত ক্ষয় ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালঝেইমারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে আছে, ১১টি গবেষণার সমন্বিত ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নিয়মিত এক্সারসাইজে ডিমেনশিয়া ডেভেলপের ঝুঁকি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে, অন্যদিকে অ্যালঝেইমারস রোগ ডেভেলপের ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

হলুদ ব্যবহার করুন : অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, কিছু গবেষণা বিজ্ঞানীদেরকে আশাবাদী করে তুলেছে যে, এ মসলাটি অ্যালঝেইমারস রোগের চিকিৎসা বা প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ডা. দেবী বলেন, ‘এগুলো প্রাথমিক গবেষণা হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে স্নায়ুকোষের সঠিক ফাংশন ও সুস্থতায় অবদান রাখতে পারে হলুদে বিদ্যমান উপাদান কারকুমিন। আপনার স্নায়ুকোষগুলো যত বেশি সচল থাকবে, অ্যালঝেইমারস অথবা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি তত হ্রাস পাবে।’

পড়ুন :

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়