ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনাকালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যেসব ফল খেতে পারবেন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:০২, ২৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনাকালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যেসব ফল খেতে পারবেন

চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে ফল খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। কারণ স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে বা প্রতিবেদন পড়ে আমরা জেনেছি যে ফলের পুষ্টি সংক্রমণকে দমনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু অনেক ডায়াবেটিস রোগী ফল খাবেন কি খাবেন না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন, কারণ মনে রক্ত শর্করা বেড়ে যাওয়ার ভয়। ডায়াবেটিস রোগে কি ফল মোটেই খাওয়া যাবে না?

ডায়াবেটিস রোগীদের ফল খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, কিন্তু এই রোগে যে ফল একেবারেই খাওয়া যাবে না এই ধারণা ঠিক নয়। ফলও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণী ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। মেরিল্যান্ড প্রাইমারি কেয়ার ফিজিশিয়ানের সুসান বেসার বলেন, ‘একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে চিনি রয়েছে বলে ডায়াবেটিস রোগীদের ফল খাওয়া উচিত নয়, কিন্তু এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য নয়। এটা কার্বোহাইড্রেট হলেও সীমিত পরিমাণে খেলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, কারণ ফল হলো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য কার্বোহাইড্রেটের (যেমন- কেক, কুকিজ ও ক্যান্ডি) চেয়ে ভালোভাবে বিপাক হয়।’

প্রকৃতপক্ষে, গবেষণায় দেখা গেছে যে সতেজ ফল খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যে উন্নতি আসে। পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সে ২০১৭ সালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, যেসব সুস্থ মানুষ নিয়মিত সতেজ ফল খেতেন তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস বিকাশের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কম ছিল ও যেসব ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত সতেজ ফল খেয়েছেন তাদের মধ্যে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি কম ছিল। এই গবেষণার গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন, ডায়াবেটিস রোগীদের সতেজ ফল খেতে অনুৎসাহিত করা উচিত নয়।

* ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন ফলগুলো সবচেয়ে ভালো?

ডায়াবেটিস রোগীদের সীমিত পরিমাণে ফল খেতে বারণ না থাকলেও তাদের ডায়েটে সেসব ফলের প্রাধান্য থাকা উচিত যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখবে। ডা. বেসার বলেন, ‘ডায়াবেটিস রোগে সতেজ ফল খেতে পারবেন, কিন্তু ক্যানের ফল বা প্রক্রিয়াজাত ফল অথবা শুষ্ক ফল এড়িয়ে চলতে হবে। শুষ্ক বা প্রক্রিয়াজাত ফলে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। এসব ফলের পানি অপসারিত হয় বলে সতেজ ফলের তুলনায় বেশি করে খাওয়ার প্রবণতা থাকে ও রক্ত শর্করা বেড়ে যায়।’

ডায়াবেটিস রোগীরা সতেজ ফল খেতে পারলেও অত্যধিক খাওয়া উচিত নয়। এই রোগে সকল ফলের গুরুত্ব সমান নয়, কিছু ফল অন্য ফলের চেয়ে বেশি ফোকাস পাওয়ার দাবি রাখে। কোন ফলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত তা নির্ভর করছে কি পরিমাণে চিনি, আঁশ ও পানি রয়েছে এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কত তার ওপর।

জিআই হচ্ছে কোন খাবার কত দ্রুত রক্ত শর্করার মাত্রা বাড়াবে তা নির্ধারণের সূচক। এই সূচক সংখ্যা যত বড় হবে, রক্তে শর্করার মাত্রা তত দ্রুত বাড়বে- এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। জিআই সংখ্যা ৫৫ বা এর কম হলে নিম্ন জিআইয়ের খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে নিম্ন জিআইয়ের খাবার উচ্চ জিআইয়ের খাবারের তুলনায় বেশি উপকারী।

কম জিআইয়ের কিছু ফলের একটি তালিকা হলো:

* অ্যাভোকাডো: ১৫

* আপেল: ৩৬

* কমলা: ৪৩

* কলা: ৫১

উচ্চ জিআই ও বেশি চিনিযুক্ত ফলের একটি তালিকা হলো:

* আম: ৫৬

* আঙ্গুর: ৫৯

* তরমুজ: ৭৬

কিন্তু কেবল জিআই একটি ফলকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ বিবেচনার মাপকাঠি হতে পারে না, পানিও ম্যাটার করে। উদাহরণস্বরূপ, তরমুজের জিআই উচ্চ হলেও এই ফলটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ, কারণ এতে ৯২ শতাংশ পানি রয়েছে। একটি ফল কিভাবে আপনার শরীরকে প্রভাবিত করছে তা জানতে খাওয়ার আগে ও খাওয়ার ১-২ ঘন্টা পর রক্ত শর্করা মেপে দেখুন।

ভাইরাস মহামারিতে ফল খাওয়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। ফলের পুষ্টি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে বা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে শরীরের রোগদমন ক্ষমতা বাড়ায়। ডায়াবেটিস আছে বলে ফল না খেলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়বে ও শরীর সংক্রমণে সহজে কাবু হবে। ডায়াবেটিস থাকলেও দিনে আধ বাটি ফল অনায়াসে খেয়ে ফেলা যায়। এসময় ডায়েট থেকে অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে ফেলুন। কোন ফল কি পরিমাণে খাওয়া উচিত তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়