ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যে যা করবেন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যে যা করবেন

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে কি হয়নি তা শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে, কারণ প্রতিদিন মলত্যাগ না করা শিশুদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি বিষয়। এ প্রসঙ্গে বাল্টিমোরে অবস্থিত জনস হপকিনস চিলড্রেন সেন্টারের অন্তর্গত পিডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, হেপাটোলজি ও নিউট্রিশনের পরিচালক ওলিভা-হেমকার বলেন, ‘তিন বছর অথবা ততোধিক বয়সের শিশুদের মলত্যাগের স্বাভাবিক হার হচ্ছে, সপ্তাহে তিন বার থেকে দিনে তিন বার।’ আপনার শিশু সপ্তাহে দু’বারের কম মলত্যাগ করলে ধরে নিতে পারেন যে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যান্য লক্ষণ হচ্ছে: পেট ব্যথা, মলত্যাগে ব্যথা ও শক্ত, শুষ্ক মল। এখানে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যে পিতামাতার করণীয় আলোচনা করা হলো।

আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ান : প্রত্যেক পিতামাতা জানেন যে শিশুরা হচ্ছে খুঁতখুঁতে খাদক, অর্থাৎ তাদেরকে যা খেতে দেয়া হয় তা খেতে চায় না, তারা যা খেতে পছন্দ করে তা খাওয়ার বায়না ধরে, যেমন- চিপস। কিন্তু ফল ও শাকসবজি থেকে পর্যাপ্ত আঁশ তাদের শরীরে না গেলে দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, তাদের ডায়েটে প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে। প্রত্যেক পিতামাতা যেন সন্তানদেরকে শৈশব থেকেই সেসব রঙের খাবারের সঙ্গে পরিচিত করান যা রংধনুর প্রতিনিধিত্ব করে, বলেন ডা. ওলিভা-হেমকার। তিনি আরো জানান, ‘পিতামাতাদেরও এসব খাবার খাওয়া উচিত এবং জাঙ্ক ফুড সীমিত করতে হবে। তারা নিজেরাই স্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে গেলে শিশুদেরকে এসব খাবার খাওয়ানো কঠিন হবে।’

বাথরুম রুটিনে অভ্যস্ত করুন : অনেক সময় দেখা যায় যে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য শারীরিক নয়, মনস্তাত্ত্বিক কারণে হচ্ছে। শিশুরা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলে বাথরুমের বেগ আসলেও সাড়া দেয় না অথবা বাইরের বাথরুম ব্যবহারে অস্বস্তিবোধ করতে পারে। কিন্তু তাদেরকে বাথরুম রুটিনে অভ্যস্ত করালে অথবা প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মলত্যাগ করাতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে পারে। আপনার শিশুকে প্রত্যাশিত সময়ে বাথরুমে নিয়ে যান, যেমন- খাবার খাওয়ানোর পর অথবা আপনি ঘর ছাড়ার আগে।

প্রচুর টয়লেট টাইম দিন : মলত্যাগের পূর্বে আপনার শিশু টয়লেটের ওপর ১০ মিনিট পর্যন্ত বসে থাকতে পারে। তাই আপনার বাচ্চা তাড়াতাড়ি মলত্যাগ না করলে তাড়া দেবেন না অথবা টয়লেট থেকে নিয়ে আসবেন না, তাকে প্রচুর টয়লেট টাইম দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে মলত্যাগের জন্য প্রচুর সময় দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। এসময় তাদের হাতে বিশেষ বই অথবা স্টিকার ধরিয়ে দিতে পারেন, যেন তারা টয়লেটে বিরক্তিবোধ না করে।

টয়লেট স্টুল কিনুন : কিছু টয়লেট শিশুদের উপযোগী করে বানানো হয় না, কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম বা প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সঠিক পজিশনে বসে মলত্যাগ করা। আপনার বাসায় হাই কমোড থাকলে বাচ্চাদের কথা বিবেচনা করে একটি স্টেপ স্টুল কিনে ফেলুন, যেন তারা শক্ত পৃষ্ঠের ওপর পা রাখতে পারে। এটি শিশুদেরকে আরো কার্যকরভাবে মলত্যাগে সহায়তা করে।

এক্সারসাইজে সম্পৃক্ত করান : শিশুদের অন্ত্রের কার্যক্রম ধীর হয়ে পড়লে দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। তাই শিশুদের হাঁটা বা দৌঁড়ের মতো এক্সারসাইজে সম্পৃক্ত করলে অথবা খেলাধুলা করতে দিলে অন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক ট্র্যাকে চলে আসবে ও নিয়মিত মলত্যাগের বেগ আসবে- এটি হচ্ছে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পরীক্ষিত উপায়। আপনার শিশুকে প্রতিদিন ন্যূনতম ৬০ মিনিট শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখা উচিত।

সরবিটলের যোগান দিন : অনেকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় প্রুনের ব্যবহার হয়ে আসছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন আমরা এটা জানি যে কেন প্রুন খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়- এ ফলে সরবিটল নামক প্রাকৃতিক সুগার অ্যালকোহল রয়েছে, যা অন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে মলত্যাগে ভূমিকা রাখে। নাশপাতি ও প্রুন হচ্ছে সরবিটলের চমৎকার উৎস, যা শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যে প্রাকৃতিক মল-নরমকারী হিসেবে কাজ করে। এসব ফলে কাজ না হলে আপনার শিশুকে সরবিটল সাপ্লিমেন্টও সেবন করাতে পারেন।

পর্যাপ্ত পানি পান করান : পর্যাপ্ত পানি ছাড়া আঁশ বা সরবিটল সমৃদ্ধ ডায়েটও শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে অন্ত্রের ভেতরকার জিনিস সচল রাখতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন পড়ে। ডা. ওলিভা-হেমকার বলেন, ‘কিন্তু আপনার বাচ্চাকে চিনিযুক্ত পানীয় বা প্রক্রিয়াজাত ফলের জুসে অভ্যস্ত করবেন না, কারণ এসব পানীয় খেলে তারা সাধারণ পানির প্রতি অনীহা দেখাবে। পানিই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো ড্রিংক।’ একটা শিশুকে দিনে প্রায় ১ লিটার পানি পান করানো উচিত।

ম্যাসাজ করুন : শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণের অন্যতম সেরা কৌশল হচ্ছে, তাদের পেটে ম্যাসাজ করা। এ হালকা চাপে পেশির প্রতিবন্ধকতা ছুটে যায় ও অন্ত্রের কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। প্রায়ক্ষেত্রে এসব স্থানের প্রতিবন্ধকতা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে থাকে, যা সিম্পল ম্যাসাজে দূর করা যেতে পারে।

স্টুল সফেনার ট্রাই করুন : শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যে প্রাকৃতিক পন্থা কার্যকর না হলে স্টুল সফেনার (যা মলকে নরম করে) ব্যবহারের প্রয়োজন হবে। শিশুদের স্টুল সফেনার লিকুইড ফর্মে অথবা সাপোজিটরি হিসেবে পাওয়া যায়- সেসব শিশুদের জন্য যারা পিল সেবন করতে পারে না বা চায় না।

ল্যাক্সাটিভ বিবেচনা করুন : শিশুদের ডায়েটে পরিবর্তন আনয়ন অথবা স্টুল সফেনার ব্যবহারেও দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যে তেমন প্রভাব না পড়লে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ল্যাক্সাটিভের ব্যবহার নিয়ে কথা বলুন। দীর্ঘসময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে এমন শিশুদের ক্ষেত্রে ল্যাক্সাটিভ ব্যবহার করা যেতে পারে। ল্যাক্সাটিভের ব্যবহার অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে।

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়