ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

রক্তদানে করোনাভাইরাসের করুণ গল্পের সমাপ্তি ঘটবে?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রক্তদানে করোনাভাইরাসের করুণ গল্পের সমাপ্তি ঘটবে?

সম্প্রতি চীনের একজন সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নতুন করোনাভাইরাস থেকে আরোগ্য লাভ করা লোকদেরকে রক্তদানের জন্য আহবান জানান। কারণ করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের রক্তের প্লাজমায় বিদ্যমান মূল্যবান প্রোটিন এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তুলতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপের একটি ঘোষণার পর প্লাজমা ডোনেশনের এই আহ্বান জানানো হয়। কোম্পানিটির মতে, এসব অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে ১০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীর অবস্থার উন্নয়ন করা গেছে- তাদের প্রদাহ ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমে গেছে।

কিন্তু এটা কি ভালো পদ্ধতি? এ প্রসঙ্গে কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লাইভ সায়েন্সকে জানান যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বাঁচাতে এটা যুক্তিসংগত ও আশাপ্রদায়ক মাধ্যম হতে পারে। এ বিষয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর সময় সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে চিকিৎসকদের উচ্চ মাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে।

অ্যান্টিবডি হচ্ছে এমন প্রোটিন যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মতো আক্রমণকারীর সঙ্গে লড়তে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দ্বারা উৎপন্ন হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির উৎপাদন বাড়াতে শরীরের সময় লাগে। নতুন ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়াটি ভবিষ্যতে আবার আক্রমণের চেষ্টা করলে শরীর সহজে তাকে শনাক্ত করে এবং দ্রুত প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

যারা সম্প্রতি কোভিড-১৯ (নতুন করোনাভাইরাসে সৃষ্ট রোগের নাম) থেকে নিরাময় পেয়েছেন তাদের রক্তে এখনো করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় অ্যান্টিবডি রয়েছে। তাদের অ্যান্টিবডি নিয়ে অসুস্থ রোগীদের শরীরে ইনজেক্ট করলে এ ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকরী লড়াইয়ের সক্ষমতা অর্জিত হতে পারে।

অন্যকথায়, এ চিকিৎসাতে আরোগ্য রোগীর ইমিউনিটি অসুস্থ লোকের শরীরে স্থানান্তর করা হবে- এ ধরনের পদ্ধতি পূর্বে ফ্লু মহামারীতে ব্যবহার করা হয়েছিল, টাইমসকে বলেন ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক বেঞ্জামিন কাউলিং। করোনাভাইরাস জয় করা মানুষদের ব্লাড প্লাজমা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বায়োলজি অ্যান্ড নিউরাল সায়েন্সের অধ্যাপক শসকেস রেইস। তিনি এ গবেষণায় জড়িত না হলেও এ চিকিৎসার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) মতে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বাইরেও কিছু পরিস্থিতিতে পরীক্ষামূলক ওষুধ ব্যবহার করা যাবে, বিশেষ করে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে এবং এছাড়া আর কোনো উপায় না থাকলে। চীনের চিকিৎসকেরাও গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরকে আরোগ্য রোগীর ব্লাড প্লাজমা দিয়েছেন, যা এফডিএ’র নীতিমালার সঙ্গে মিলে গেছে।

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা করতে বিশেষজ্ঞরা অন্যান্য অপশনের পাশাপাশি প্লাজমা ইনফিউশনকেও বিবেচনায় রাখছেন। কিন্তু এ পদ্ধতিকে নিরাপদ ও কার্যকর বানাতে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া মেনে চলে আরো কাজ করতে হবে। এছাড়া নতুন করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিভাইরালকে রিপারপোজ করার চেষ্টা করছেন এবং এমন ব্র্যান্ড-নিউ মলিকিউলের অনুসন্ধান করছেন যা কোষ ও করোনাভাইরাসের বন্ধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

তথ্যসূত্র : লাইভ সায়েন্স


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়