ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ৮ লক্ষণ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ৮ লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় যে ডায়াবেটিস বিকশিত হয় তাকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়। প্রেগন্যান্সি হরমোন শরীরের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করলে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। শুধু উপসর্গ দিয়ে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে, কারণ এটি গর্ভকালীন সমস্যার অনুরূপ উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।

তারপরও গর্ভাবস্থায় কিছু উপসর্গ একত্রে দেখা গেলেও এটা ধারণা করতে পারেন যে ডায়াবেটিস হয়েছে, তখন আর দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এখানে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ৮ লক্ষণ তুলে ধরা হলো।

ঝাপসা দৃষ্টি: অন্য ডায়াবেটিসের মতো জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসেরও অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে, চোখে ঝাপসা দেখা। হাউসটনে অবস্থিত ম্যাকগভার্ন মেডিক্যাল স্কুলের ম্যাটারনাল-ফেটাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট ক্লারা ওয়ার্ড বলেন, ‘ব্লাড গ্লুকোজ উচ্চ হলে চোখের ওয়াটার কনটেন্ট প্রভাবিত হয়, যার ফলে ফোকাস করতে সমস্যা হয় অথবা চোখে ঝাপসা দেখা যায়। সুগারের মাত্রা সবসময় উচ্চ থাকলে এ দৃষ্টি সমস্যা ক্রনিক হতে পারে। ইচ্ছেমতো খাবার খেয়ে হঠাৎ করে সাময়িকের জন্য ব্লাড গ্লুকোজ বেড়ে গেলেও এমনটা হতে পারে।’ ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আনলে চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

ক্লান্তি: হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশ গর্ভবতী নারী ক্লান্তি অনুভব করেছিল এবং তাদের ৬০ শতাংশ ক্লান্তির কারণে দিনেও ঘুমিয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লান্তি হতে পারে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসেরও একটি উপসর্গ। ডা. ওয়ার্ড বলেন, ‘সুগার বেড়ে গেলে শরীরের কোষ ও অঙ্গসমূহ প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে অক্সিজেন ও পুষ্টি ব্যবহার করতে পারে না। তাই এসময় শরীর ক্লান্তির মাধ্যমে এটা বলতে চেষ্টা করে যে বিশ্রাম নাও।’

অতিরিক্ত পিপাসা: গর্ভাবস্থায় তৃষ্ণা অনুভব করা একটি স্বাভাবিক ঘটনা- শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে এবং অতিরিক্ত বর্জ্য দূরীকরণে কিডনিকে সাহায্য করতে গর্ভবতী নারীদের অতিরিক্ত তরলের প্রয়োজন হয়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজেসের মতে, অন্য ডায়াবেটিসের মতো গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের একটি প্রধান উপসর্গ হচ্ছে, ঘনঘন তৃষ্ণা অনুভব করা। ডা. ওয়ার্ড বলেন, ‘ব্লাড সুগার উচ্চ হলে শরীর রক্তে সুগারের মাত্রাকে পাতলা করতে কোষ থেকে পানি টেনে নেয়। উচ্চ সুগার কিডনিকেও প্রভাবিত করে পানি পুনঃশোষণ প্রতিরোধ করে।’ শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। আমেরিকার ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন গর্ভাবস্থায় ১০ গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দিয়েছে। এরপরও পিপাসা পেলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

অতিরিক্ত প্রস্রাব: অন্য নারীদের তুলনায় গর্ভবতী নারীরা বেশি প্রস্রাব করেন, কারণ রক্তপ্রবাহ বেশি হলে প্রস্রাবও বেশি তৈরি হয়। এছাড়া মূত্রাশয়ের ওপর গর্ভস্থ বাচ্চার চাপও পড়ে। ডা. ওয়ার্ড জানান, ‘অতিরিক্ত সুগার দ্বারা কিডনি প্রভাবিত হলে তারা কঠোর পরিশ্রম করে এবং বেশি প্রস্রাব উৎপাদন করে।তাই সুগার যত বাড়বে তত বেশি প্রস্রাব তৈরি হবে। অতিরিক্ত প্রস্রাব উৎপাদিত হলে ঘনঘন প্রস্রাব করতে হবে এটাই তো স্বাভাবিক। ঘনঘন প্রস্রাব করার কারণে শরীর পানিশূন্যতার ঝুঁকিতে থাকে।’

বমিভাব ও বমি: আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু হরমোন বৃদ্ধির কারণে ৭৪ শতাংশ নারীর বমিভাব ও বমি হয়। কিন্তু এটা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসেরও উপসর্গ হতে পারে। এখন কিভাবে বুঝবেন যে আপনার বমিভাব ও বমি গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নাকি ডায়াবেটিস জনিত? এটা জানতে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের প্রতিবেদনে ল্যাব টেস্ট করতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে প্রথম ট্রাইমেস্টারে অব্যাহত বমিভাব ও বমি থাকলে।

ওজন হ্রাস: বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণের আগে ওজনকে স্বাস্থ্যকর লেভেলে নিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত, কিন্তু গর্ভবতী হয়ে গেলে ওজন কমানো উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থার যেকোনো পর্যায়ে ওজন কমে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে এবং এসময় ওজন হ্রাস পেলে চিকিৎসককে জানাতে হবে। ডা. ওয়ার্ড জানান, ‘ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে কোষসমূহ সুগারকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না। শরীর শক্তির এ ঘাটতিকে উপবাস মনে করে ক্ষুধাকে উদ্দীপ্ত করে। এটি একটা দুষ্টুচক্র সৃষ্টি করে, অর্থাৎ আপনি ক্ষুধা অনুভব করে খাবার খাবেন, কিন্তু আপনার শরীর খাবারগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবে না, যার ফলে ওজন কমে যাবে।’ ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, যেসব স্থূল নারীর জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের কারণে ওজন কমে গিয়েছিল তারা স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের বাচ্চা প্রসব করেছিল। এছাড়া এসব নারীরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজনের বাচ্চা প্রসব অথবা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বাচ্চা জন্মদান অথবা খর্বাকৃতির বাচ্চা প্রসবের ঝুঁকিতেও থাকেন। তাই গর্ভবতী নারীদের ওজন হ্রাস পেলে চিকিৎসককে জানানো উচিত।

ঘনঘন ইনফেকশন: গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের ঘনঘন ইনফেকশনের প্রবণতা বেশি। এমনিতে গর্ভাবস্থায় নারীদের যোনি ও মূত্রতন্ত্রে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি, কিন্তু জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বিকশিত হলে ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। ডা. ওয়ার্ড জানান, ‘ডায়াবেটিস ইনফেকশনের প্রবণতা বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে ত্বক, যোনি ও মূত্রতন্ত্রে। ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট গ্লুকোজ খেয়ে বেঁচে থাকে।তাই রক্তে যত বেশি সুগার বাড়বে তাদের বেঁচে থাকার পরিবেশ আরো অনুকূল হবে।’ আপনার ঘনঘন ইনফেকশন হলে চিকিৎসক দিয়ে চেক করিয়ে নিন।

নাক ডাকা: আপনার পূর্বে নাক ডাকার ইতিহাস না থাকলেও গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ফোলা থেকে নাসিকাপথ সংকুচিত হয়ে নাক ডাকতে পারেন। কিন্তু নর্থওয়েস্টার্নের একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, নাক ডাকার সঙ্গে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রেগন্যান্সিতে নাক ডাকা স্বাভাবিক হলেও এটা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসেরও উপসর্গ হতে পারে। একারণে নিয়মিত গ্লুকোজ স্ক্রিনিং করা গুরুত্বপূর্ণ এবং উদ্বেগ উদ্রেককারী উপসর্গ লক্ষ্য করলে চিকিৎসককে জানাতে হবে।


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়