ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নারীর তিন স্বাস্থ্য সমস্যা

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ৮ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নারীর তিন স্বাস্থ্য সমস্যা

নারীরা মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতায় বেশি ভুগেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সমস্যা শনাক্ত হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তিনজন নারীর মধ্যে একজনের জীবনকালে কখনো না কখনো মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধি হানা দেয়। কিন্তু সমস্যাগুলো প্রায়শ উপেক্ষিত থেকে যায়।

শারীরিক গঠন ও মনোসামাজিক কারণে একই অসুস্থতা নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাজির হতে পারে। অবশ্য এমন কিছু রোগ রয়েছে যা নির্দিষ্টভাবে শুধু নারীদের হয়। এখানে নারীদের এমন তিনটি স্বাস্থ্য সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলো যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অশনাক্ত থেকে যায়।

এন্ডোমেট্রিয়োসিস: এ কন্ডিশনটি নির্ণয়ের পূর্বে অনেক নারী দীর্ঘসময় সমস্যাটিতে ভুগে থাকেন। এন্ডোমেট্রিয়োসিস হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ও প্রগতিশীল রোগ, যেখানে জরায়ুর ভেতরে যে টিস্যু ডেভেলপ হওয়ার কথা তা এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সমস্যাটি কিছু উপসর্গ প্রকাশ করে, যেমন- অনবরত পেট ব্যথা, পেলভিক অংশে বা নাভির নিচে তীব্র ব্যথা, অস্বাভাবিক মাসিক রক্তক্ষরণ, যৌনমিলনের সময় ব্যথা ও অন্যান্য।

এসব উপসর্গ নারীদের জীবনমানের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের কাজের গতি কমে যায় এবং শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় স্বাস্থ্য শোচনীয় হয়। উপসর্গের প্রকাশ থেকে সঠিক রোগনির্ণয় পর্যন্ত সময়ের দৈর্ঘ্য লম্বা হতে পারে। বিশ্বের সবখানে ডায়াগনস্টিক ল্যাপারোস্কপি ও হরমোনাল টেস্ট সহজলভ্য নয় বলে এ সমস্যাটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তের হার কম।

এডিএইচডি ও অন্যান্য মুড ডিসঅর্ডার: নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে প্রায়শ অবহেলা করা হয়। এমনকি তারা নিজেরাও এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নন। গর্ভবতী নারীদের মেজাজে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে পারে। এটাকে বলে মুড সুইং, অর্থাৎ এখন হাসিখুশি দেখালেও হঠাৎ রাগে ফেটে পড়তে পারেন অথবা খিটখিটে আচরণ করতে পারেন। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতাও বেশ কমন, কিন্তু বেশিরভাগ সময় প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় না।

পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিষণ্নতার হার বেশি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের মুড ডিসঅর্ডার বা এডিএইচডি’র মতো সমস্যাগুলোর গায়ে প্রথমদিকে বিষণ্নতার লেবেল লাগিয়ে দেয়া হয়, একারণে প্রকৃত সমস্যা শনাক্ত হতে হতে বছরের পর বছর চলে যায়। অনেকসময় মনস্তাত্ত্বিক রোগগুলো শারীরিক উপসর্গকে অনুকরণ করে- এদেরকে সমষ্টিগতভাবে সাইকোসোমাটিক ডিসঅর্ডার বলা হয়। নারীদের যৌনকামনার ঘাটতি মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাদের প্রকৃত মনস্তাত্ত্বিক রোগ ও কারণ শনাক্ত করতে বিস্তারিত ইতিহাস, পরীক্ষা ও মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন প্রয়োজন হবে।

পুষ্টি ঘাটতি: বিভিন্ন রকম পুষ্টির অভাবে অনেক সাধারণ উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। এগুলো সহজে অবহেলিত হতে পারে। নারীদের মধ্যে ভিটামিন ডি ঘাটতি খুব কমন এবং এর সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে: ক্লান্তি, হাড় ব্যথা ও শারীরিক সহনশক্তি হ্রাস। ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড ঘাটতি থেকে তীব্র রক্তস্বল্পতা, মুখে ক্ষত, হালকা জন্ডিস ও স্বাদেন্দ্রিয় ভোঁতা হতে পারে। আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা হয় ও চুল পড়ে। ভিটামিন ই ঘাটতি ত্বকে পরিবর্তন ঘটায় ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের ভারসাম্যহীনতা) সৃষ্টি করে।

একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, শুধু দরিদ্র নারীদের পুষ্টির ঘাটতি হয়, কিন্তু স্বচ্ছল নারীরাও পুষ্টির অভাবজনিত উপসর্গে ভুগে থাকেন এবং এ হার নগণ্য নয়। উভয় শ্রেণীর নারীদের উপসর্গগুলো প্রারম্ভিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হয়। ডায়েটের দিকে মনোযোগ দিয়ে সমস্যাগুলো সহজেই কাটিয়ে ওঠা ও জীবনমান বৃদ্ধি করা সম্ভব।

তথ্যসূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়