ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনাভাইরাস সম্পর্কে পাঁচ প্রশ্নের উত্তর

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১০ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস সম্পর্কে পাঁচ প্রশ্নের উত্তর

ভাইরাস এতটা ক্ষুদ্র জীব যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যতীত খালি চোখে দেখা যায় না। অণুজীব হলেও এরা মানুষকে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে পারে, বিশেষ করে কোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়।

ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে জীবনমান বা প্রাত্যহিক জীবন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেইসঙ্গে হাজার হাজার মানুষের প্রাণের বিনাশ তো রয়েছেই। ইতিহাস ঘেঁটে এমন কিছু ভাইরাসের কথা জানতে পারি যাদের প্রাদুর্ভাবে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিবারের একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে, যা ইতোমধ্যে শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকমাস আগেও মানুষের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসটির অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভাইরাসটিতে প্রায় ১১৪,৫০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন ও মৃতের সংখ্যা ৪,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

ভাইরাসটি সম্পর্কে সিএনএনকে নানা প্রশ্ন করেছেন পাঠকেরা। সেসব থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন।

* কেন উপসর্গবিহীন লোকদেরও টেস্ট করা হয়?

কিছু করোনাভাইরাস রোগীর হালকা উপসর্গ থাকে অথবা কারো কারো মধ্যে কোনো উপসর্গই দেখা যায় না। কিছু কেসে দেখা গেছে, শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ১৪ দিন পর্যন্ত উপসর্গ প্রকাশ পায়নি। উপসর্গ প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত সময়ের দৈর্ঘ্যকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে। ইনকিউবেশন পিরিয়েডের সময় অর্থাৎ উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও করোনাভাইরাস এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে। বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করলেও একজন মানুষকে সুস্থ দেখাতে পারে এবং তিনি অজান্তে অন্যদের সংক্রমিত করতে পারেন। একারণে বিশেষজ্ঞরা তাদেরকে টেস্ট করতে পরামর্শ দিচ্ছেন যারা করোনাভাইরাস রোগীর সংস্পর্শ এসেছিলেন অথবা কাছাকাছি ছিলেন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এমন এলাকা থেকে আসলেও একই পরামর্শ প্রযোজ্য।

* উপসর্গ ছাড়া করোনাভাইরাস কিভাবে ছড়ায়? কাশি বা হাঁচি না দিলে কিভাবে অন্যরা সংক্রমিত হয়?

সাধারণ মানুষ মনে করতে পারেন যে উপসর্গ ছাড়া করোনাভাইরাস ছড়ানো অসম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানান যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত উপসর্গবিহীন লোকেরাও সহজে অন্যদেরকে সংক্রমিত করতে পারেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজি প্রফেসর অ্যানি রিময়েন বলেন, ‘উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও করোনাভাইরাস রোগীদের থুতু থেকে ভাইরাসটি অন্যদের মাঝে ছড়াতে পারে। উপসর্গবিহীন করোনাভাইরাস রোগীরা নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করে কিছু ধরলে সেখানে করোনাভাইরাস লেগে থাকবে। এ অবস্থায় সেসব জিনিস সুস্থ লোকেরা স্পর্শ করলে তারাও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হবেন। এভাবে উপসর্গবিহীন রোগীরাও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছেন।’

ত্বক ভেদ করে করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে?

ত্বকের মধ্য দিয়ে, অর্থাৎ ত্বক ভেদ করে করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে কিনা তা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস লেগে রয়েছে এমন কিছু ধরার পর নিজের মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ করলে কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯) আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। কিন্তু এটা করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রধান উপায় নয়। বেশিরভাগ সময় করোনাভাইরাস ছড়ায় শ্বাসতন্ত্রের তরল কণিকা দ্বারা। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত লোকেরা কাশি বা হাঁচি দিলে এসব তরল কণিকা বের হয়ে আসে। এসব তরল কণিকা আশপাশে থাকা সুস্থ লোকের মুখ বা নাকে অবতরণ করতে পারে অথবা শ্বাস গ্রহণের সময় ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রমিত মানুষদের থেকে ন্যূনতম ৩ ফিট অথবা ১ মিটার দূরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে নিরাময় ও বেঁচে থাকা সম্ভব?

অবশ্যই সম্ভব। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই নিরাময় পেয়েছেন ও সুস্থভাবে জীবনযাপন করছেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার প্রায় ২ শতাংশ। কিন্তু প্রকৃত মৃত্যুহার আরো কমও হতে পারে, কারণ করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিছু রোগী টেস্টের আওতায় আসেননি ও তাদের কেস রেকর্ড করা হয়নি, কিন্তু তারপরও হয়তো নিরাময় পেয়ে জীবনযাপন করছেন।

করোনাভাইরাস থেকে আরোগ্য রোগীর ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়?

এখনো এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে আরো গবেষণা ও সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য করোনাভাইরাস (যেমন- সাধারণ ঠান্ডার উদ্রেককারী করোনাভাইরাস) থেকে আমরা ক্লু পেতে পারি। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের প্রফেসর সেলিন গাউন্ডার বলেন, ‘সাধারণ ঠান্ডা সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী নতুন করোনাভাইরাসটির প্রকৃতি সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।’ যারা নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠেছেন তারা কতদিন ভাইরাসটি থেকে সুরক্ষিত থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়