ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নতুন গবেষণা: করোনায় সুস্থ মানুষেরও ডায়াবেটিস হতে পারে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
নতুন গবেষণা: করোনায় সুস্থ মানুষেরও ডায়াবেটিস হতে পারে

সম্প্রতি ইংল্যান্ড ও অন্যান্য দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস রয়েছে তারা করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর বাড়তি ঝুঁকিতে রয়েছেন। 

ডায়াবেটিস কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু নতুন তথ্য হলো- করোনাভাইরাস শুধু ডায়াবেটিস রোগীর জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায় না, এটি সুস্থ মানুষের মধ্যেও ডায়াবেটিস রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এ প্রসঙ্গে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন কোভিড-১৯ কীভাবে ডায়াবেটিস রোগ সৃষ্টি করে।  

ডায়াবেটিসের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস তখনই সৃষ্টি হয় যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন উৎপাদনকারী আইলেট কোষগুলোকে আক্রমণ করে। এটা হলো পরিচিত অটোইমিউন রোগগুলোর একটি। ফলে আর কোনো আইলেট অবশিষ্ট থাকে না। তখন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইনসুলিন তৈরি হয় না। বিজ্ঞানীরা গবেষণার পর করোনাভাইরাস সংক্রমণকে এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলছেন। 

অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস সৃষ্টি হয় যখন আইলেট কোষগুলোকে প্রচুর পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে হয়। এ কারণে শেষ পর্যন্ত আইলেটগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।

গবেষকরা মনে করছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক রয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণ ইনসুলিন-উৎপাদনকারী কোষগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। মাম্পস ও এন্টারোভাইরাস সংক্রমণের সময় ডায়াবেটিস বিকশিত হয়েছে এমন ঘটনাও রয়েছে। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে একটি বিশেষ এন্টারোভাইরাস (কক্সসাকি-বি১) সংক্রমণ থেকে ক্লাসিক্যাল অটোইমিউন টাইপ-১ ডায়াবেটিস সৃষ্টি হতে পারে।

কোভিড-১৯ মহামারির পূর্বে ২০০২-০৪ সালে পূর্ব এশিয়ায় সার্সের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। সার্সের কারিগর হলো অন্য একটি করোনাভাইরাস। সার্সে আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়ায় ভুগেছেন এমন রোগীদের ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। কিন্তু সংক্রমণের পূর্বে তাদের ডায়াবেটিস ছিল না। যদিও অধিকাংশ সময় দেখা গেছে ডায়াবেটিস তিন বছর পর নির্মূল হয়েছে। 

গবেষকরা কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস ও সার্স সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন। উভয় ভাইরাস একইভাবে মানবকোষে প্রবেশ করে। করোনাভাইরাসের সারফেসের ওপর যে স্পাইক প্রোটিন রয়েছে তা মানব শরীরের এসিই-২ রিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়। ফুসফুস, কিডনি ও অগ্ন্যাশয়ের আইলেট কোষগুলোতে প্রচুর এসিই-২ রিসেপ্টর রয়েছে। গবেষকদের ধারণা, আইলেটগুলো করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ফলে ইনসুলিন নিঃসরণের মাধ্যমে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের যে প্রক্রিয়া রয়েছে তাতে অস্বাভাবিকতা চলে আসে। এভাবে করোনাভাইরাস ডায়াবেটিস সৃষ্টি করতে পারে।

তাহলে কি আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, কোভিড-১৯ থেকে ডায়াবেটিস হবেই? গবেষকরা এ প্রসঙ্গে এখনই শতভাগ নিশ্চিত নন। তবে এটা প্রায় নিশ্চিত যে, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের করোনাভাইরাসের কারণে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। 

 

ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়