ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শীতে নিউমোনিয়া শনাক্ত করবেন কীভাবে?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৭ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:২৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০
শীতে নিউমোনিয়া শনাক্ত করবেন কীভাবে?

স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিবেচনায় শীতকালকে শ্বাসতন্ত্রীয় রোগের মৌসুম বললে ভুল হবে না। এসময় ঠান্ডা ও ফ্লু’র প্রকোপ বেড়ে যায়। ঠান্ডা-ফ্লু থেকে নিউমোনিয়া ডেভেলপ করতে পারে। যে কারো নিউমোনিয়া হতে পারে, কিন্তু কিছু মানুষের ঝুঁকি বেশি।

নিউমোনিয়া সবচেয়ে বেশি হয় ছোট ছেলেমেয়ে ও বয়স্ক মানুষদের। হাঁপানি অথবা শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগ (সিওপিডি) থাকলে শীতকালে সহজেই নিউমোনিয়া ডেভেলপ করতে পারে। হাঁপানি বা সিওপিডি’র কারণে নিউমোনিয়া মারাত্মক পর্যায়েও চলে যেতে পারে। শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি বলে বাড়তি যত্ন নিতে হবে ও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

প্রায়ক্ষেত্রে ঠান্ডা-ফ্লু’র জটিলতা হিসেবে নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। কিন্তু অন্যান্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও কখনো কখনো ছত্রাকও নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কমিউনিটি অ্যাকুইয়ারড নিউমোনিয়া (সিএপি) হলো নিউমোনিয়ার সবচেয়ে প্রচলিত ধরন। খুবই মৃদু প্রকৃতির নিউমোনিয়াকে ওয়াকিং নিউমোনিয়া বলা হয়, যেখানে বিছানায় বিশ্রাম বা হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। ওয়াকিং নিউমোনিয়া এতই হালকা প্রকৃতির যে রোগী বুঝতেই পারেন না যে নিউমোনিয়া হয়েছে, বরং তিনি মনে করতে পারেন যে ঠান্ডা লেগেছে। তাই ওয়াকিং নিউমোনিয়ার রোগীরা সুস্থ মানুষের মতো চলাফেরা করেন।

নিউমোনিয়া এতটাই তীব্র হতে পারে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে, বিশেষত শিশু ও বয়স্ক লোকের। তাই নিউমোনিয়া শনাক্তের উপায় তথা উপসর্গগুলো জেনে রাখা উচিত। নিউমোনিয়ার প্রাথমিক উপসর্গকে ঠান্ডা-ফ্লু মনে হতে পারে, যেমন- জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ হওয়া ও বুকে কফ জমা। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার একমাত্র উপসর্গ হলো অস্বাভাবিক দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস অথবা শ্বাসক্রিয়ার সময় অস্বাভাবিক শব্দ হওয়া। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শিশুর বুক ভেতরে ঢুকে গেলে অনেকটাই নিশ্চিত হতে পারেন যে নিউমোনিয়া হয়েছে। শিশুর জ্বরের পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে গেলে, বুক দেবে গেলে, খাবার মুখে দেয়ামাত্র বমি করলে ও খিঁচুনি ওঠলে যত দ্রুত সম্ভব জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

চিকিৎসক নিউমোনিয়া হয়েছে সন্দেহ করলে ওষুধ প্রেসক্রাইবের পূর্বে নিশ্চিত হতে বুকের এক্স-রে দিতে পারেন। ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট নিউমোনিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অ্যান্টিবায়োটিক, কিন্তু ব্রঙ্কাইটিসের রোগীরা অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে উপকৃত হন না। তাই ব্রঙ্কাইটিসে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নিয়ম নেই। একারণে ওষুধ ব্যবহারের পূর্বে নিউমোনিয়া নাকি ব্রঙ্কাইটিস তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বেশিরভাগ সময় বুকের এক্স-রে দেখে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

কিছুক্ষেত্রে নিউমোনিয়া এতটাই তীব্র হতে পারে যে রোগীকে জরুরি ভিত্তি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। রোগীর আইভি অ্যান্টিবায়োটিক, অক্সিজেনের লেভেল পর্যবেক্ষণ ও ঘনঘন নেবুলাইজার চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত হসপিটাল সেটিংয়ে মারাত্মক নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করা হয়। যদি মনে হয় যে শিশু বা বয়স্ক মানুষের নিউমোনিয়ার চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগুচ্ছে, তাহলে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। যত দেরি করা হবে, মৃত্যুর ঝুঁকি তত বেড়ে যাবে।

অধিকাংশ চিকিৎসকই একমত যে নিউমোনিয়া এড়াতে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করাই হলো সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা। পুষ্টিকর খাবার খেয়ে, নিয়মিত শরীরচর্চা করে ও লাইফস্টাইলে আরো কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে (যেমন- দুশ্চিন্তার পরিবর্তে হাসিখুশিতে থাকা) ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে পারেন, অর্থাৎ সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতা বাড়াতে পারেন। বাচ্চার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম অথবা শ্বাসতন্ত্রীয় সমস্যা রয়েছে তারা যেন শীতকালে সতর্ক থাকেন। নিউমোনিয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ফ্লু ভ্যাকসিন অথবা নিউমোনিয়া ভ্যাকসিনও নিতে পারেন।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়